ভারসাম্য রক্ষার বাজেট পেশ অর্থমন্ত্রীর

ঘড়ির কাঁটায় তখন বেলা ১১টা বেজে ৪ মিনিট। বাজেট অধিবেশনের সূচনাপর্বেই লোকসভার বিরোধী বেঞ্চ থেকে ভেসে এল উচ্চস্বরের প্রতিবাদের আওয়াজ। কিন্তু সে সব ধর্তব্যের মধ্যে না এনেই প্রথামাফিক স্পিকারকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বাজেট পেশ শুরু করলেন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। ১২টা ৫৩ মিনিটে বাজেট বক্তৃতা শেষের সময়ও একই রকম অবিচলতার ছাপ ছিল তাঁর মুখে।

Updated By: Mar 16, 2012, 04:10 PM IST

ঘড়ির কাঁটায় তখন বেলা ১১টা বেজে ৪ মিনিট। বাজেট অধিবেশনের সূচনাপর্বেই লোকসভার বিরোধী বেঞ্চ থেকে ভেসে এল উচ্চস্বরের প্রতিবাদের আওয়াজ। কিন্তু সে সব ধর্তব্যের মধ্যে না এনেই প্রথামাফিক স্পিকারকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বাজেট পেশ শুরু করলেন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। ১২টা ৫৩ মিনিটে বাজেট বক্তৃতা শেষের সময়ও একই রকম অবিচলতার ছাপ ছিল তাঁর মুখে।
অর্থমন্ত্রীর মুখের এই আপাত গাম্ভীর্য কি প্রতিফলিত হয়েছে তাঁর বাজেটে? বিশেষজ্ঞ মহলের মতে, চাপের মুখে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য সাবধানী এবং ভারসাম্যের বাজেট পেশ করেছেন তিনি।
আর্ন্তর্জাতিক আর্থিক মন্দার অভিঘাত অতিক্রম করে ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে ভারতের অর্থনীতি। লোকসভায় নিজের সপ্তম সাধারণ বাজেট পেশের সূচনা পর্বেই এই দাবি করলেন অর্থমন্ত্রী। ২০১১-১২ অর্থবর্ষে আর্থিক বৃদ্ধির হার ছিল ৬.৯ শতাংশ। আগামী ২০১২-১৩ সালে তা ৭.৬ শতাংশে পৌঁছবে বলে দাবি করলেন তিনি। রফতানি ক্ষেত্রে অগ্রগতি ভাল হলেও শিল্পক্ষেত্রে আশানুরূপ উন্নয়ন না হওয়া এবং সরকারি ক্ষেত্রে মুনাফা কমার কথা বলে এবং ঢালাও ভর্তুকি ছাঁটাইয়ের পক্ষে সওয়াল করে কার্যত সংস্কারমুখী পদক্ষেপের ক্ষেত্র প্রস্তুত করলেন তিনি। জানালেন দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রে সরকারের দৃঢ় অবস্থানের কথা।

রাজনৈতিক টনাপোড়েনের কারণে আপাতত প্রত্যক্ষ কর বিধি এবং 'মাল্টি ব্র্যান্ড' খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে 'ধীরে চলো' নীতি নিলেও এ ব্যাপারে পূর্বঘোষিত নীতি থেকে সরে আসছে না কেন্দ্র। সেই সঙ্গে কিছু ক্ষেত্রে ভর্তুকিকে 'অপ্রয়োজনীয়' হিসেবে চিহ্নিত করে এবং রাষ্ট্রায়ত্ব ক্ষেত্রগুলির বিলগ্নীকরণ থেকে ৩০,০০০ কোটি টাকা আয়ের কথা বলে কার্যত সংস্কার কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ারও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। বিমান শিল্পকে চাঙ্গা করার জন্য ৪৯ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগে অনুমোদন এবং পরিকাঠামো নির্মাণ ক্ষেত্রে পিপিপি মডেল প্রণয়ন তারই ইঙ্গিত।
তবে কি আর্থিক বৃদ্ধির লক্ষ্য পূরণের স্বার্থে জনমোহিনী পথ থেকে পুরোপুরি সরে আসবে দ্বিতীয় ইউপিএ সরকার? ইন্দিরা গান্ধীর জমানায় অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকারী প্রণব মুখোপাধ্যায় এ ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষার পক্ষপাতী। আর তাই আয়কর ছাড়ের সীমা বাড়ানো, আইসিডিএস প্রকল্পে ৫৮ শতাংশ বরাদ্দ বৃদ্ধি, নিকাশি ও পানীয় জল সরবরাহ বরাদ্দ ১৪,০০০ কোটি টাকা, মিড-ডে মিলে বরাদ্দ বেড়ে ১১,৯৩৭ কোটি টাকা এবং কৃষিঋণের পরিমাণ বাড়িয়ে ৫,৭৫,০০০ কোটি টাকা করার ঘোষণায় আমজনতার হৃদয় জয় করার প্রচেষ্টা স্পষ্ট। সঠিক সময়ে ঋণ পরিশোধ করলে কৃষকরা ৩ শতাংশ ছাড়ের সুযোগ পাবেন। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য গৃহঋণ, ক্ষুদ্রসঞ্চয়ের ক্ষেত্রে আনা হবে নয়া আইন।
দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় শিক্ষার অধিকার আইন কার্যকর করতে বরাদ্দ-বৃদ্ধি ২৫,৫৫৫ কোটি টাকা। এর সাহায্যে ৬,০০০ নতুন স্কুল নির্মাণ হবে। অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির উন্নয়নে বরাদ্দ বাড়িয়ে ২১ হাজার ৭১০ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়েনে ২০ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। তাঁত শিল্পে ৩,৮৮৪ কোটি  টাকা ঋণ মকুব করার প্রস্তাব রয়েছে সাধারণ বাজেটে। রয়েছে, ছাত্র শিক্ষা ঋণে নতুন তহবিল গঠন ও মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির সাহায্যে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব। ১১-১৮ বছরের কিশোরীদের জন্য বিশেষ স্বনির্ভর প্রকল্পের কথা বলা হয়েছে বাজেটে। প্রতিবন্ধী ও বিধবা পেনশন মাসে ৩০০ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। উপজাতি উন্নয়নে ১৮ শতাংশ বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। সামগ্রিকভাবে সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির পরিমাণ ৩৭ শতাংশ।

পরিকাঠামো উন্নয়নে দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় মোট ৫ লক্ষ কোটি টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে নতুন ৮,৮০০ কিলোমিটার রাস্তা তৈরির প্রস্তাব রয়েছে এই বাজেটে। ১০১১-১২ সালে এই পরিমাণ ছিল ৭৩০০ কিলোমিটার।
জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত নানা প্রশ্নের মুখে এবার প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়ানো হযেছে ১৭ শতাংশ। গত বাজেটের ১ লক্ষ ৬৪ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে  প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ হয়েছে প্রায় ১ লক্ষ ৯৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সশস্ত্র বাহিনীর সমরাস্ত্র ও আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম কেনার জন্য ৭৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এতে সামরিক বাহিনীর আধুনিকীকরণের কাজ কিছুটা এগোবে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল। সম্প্রতি চিন সরকার প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়িয়ে ১০৬.৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৫ লক্ষ ১৩ হাজার কোটি টাকা) করেছে। সেই তুলনায় নয়াদিল্লির প্রতিরক্ষা বরাদ্দ বৃদ্ধি যত্‍সামান্য।

.