রিল লাইফের সুন্দরী নায়িকা থেকে রিয়েল লাইফে ছ-বার মুখ্যমন্ত্রী!

রিল লাইফের সুন্দরী নায়িকা থেকে রিয়েল লাইফে ছ-বার মুখ্যমন্ত্রী। দুর্নীতির অভিযোগে বহুবার বিদ্ধ হয়েও মানুষের আশীর্বাদে বারবার তামিল তখতে ফিরে এসেছেন তিনি। রাজনীতির লড়াইয়ে কামব্যাক করাটা জলভাতে পরিণত করলেও জীবনের লড়াইয়ে হার মানতে হল। তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়রামন জয়ললিতার জীবনাবসানে শেষ হল দ্রাবিড় রাজনীতির এক বর্ণময় অধ্যায়। সিনেমার পর্দা থেকে পুরাতচি থালাইভি। বিপ্লবী নেত্রীর তকমা। ক্লাস টেনের পরীক্ষায় রাজ্যে প্রথম। একশো চল্লিশটি ছবিতে অভিনয়। ফিল্মি কেরিয়ারে ইতি টেনে MG রামচন্দ্রনের হাত ধরে ADMK-তে যোগদান। MGR-এর মৃত্যুর পর দলের সর্বময় নেত্রী। তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী পদে ছ-বার শপথ গ্রহণ। ধীরে ধীরে সমর্থকদের চোখে ভগবান হয়ে ওঠা। জয়রামন জয়ললিতাকে বাদ দিয়ে স্বাধীনোত্তর ভারতে দ্রাবিড় রাজনীতির ইতিহাস অসম্পূর্ণ। দিল্লিতে জোট সরকারের আমল শুরু হওয়ার পর বিন্ধ্য পর্বতের ওপারের নেতাদের আরও বেশি গুরুত্ব দিতে বাধ্য হয়েছে আর্যাবর্তের রাজনীতি। দর কষাকষির খেলায় বরাবর ফ্রন্ট লাইনে থেকেছেন করুণানিধি আর জয়ললিতা। যুযুধান দুই দলের দুই প্রধানের আদায়-কাঁচকলায় সম্পর্ক বলতেও প্রথমেই মনে আসে তাঁদের নাম। উড়াল পুল দুর্নীতির অভিযোগে জয়ললিতার পুলিস গভীর রাতে ঘুম থেকে তুলে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী করুণানিধিকে গ্রেফতার করে। রাজনীতির পাশা উল্টে DMK ক্ষমতায় আসতেই আবার জয়ললিতার বিরুদ্ধে উস্কে ওঠে দুর্নীতির মামলা। দুর্নীতি ও আম্মা সমার্থক শব্দ বলে বারবার অভিযোগ করেছেন জয়ললিতার বিরোধীরা।আর করবেন নাইবা কেন? কালার টিভি কেলেঙ্কারি, তানসি জমি  কেলেঙ্কারি, হোটেল দুর্নীতি, আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিবিহীন সম্পত্তির অভিযোগ। তালিকাটা বেশ দীর্ঘ। তবে, উচ্চ আদালতের রায়ে বারবারই নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে গদিতে ফিরে এসেছেন আম্মা। নয়ের দশকে পালিত পুত্রের বিয়েতে ছ-কোটি টাকা খরচ করায় দুর্নীতির অভিযোগ।

Updated By: Dec 6, 2016, 09:25 AM IST
রিল লাইফের সুন্দরী নায়িকা থেকে রিয়েল লাইফে ছ-বার মুখ্যমন্ত্রী!

ওয়েব ডেস্ক: রিল লাইফের সুন্দরী নায়িকা থেকে রিয়েল লাইফে ছ-বার মুখ্যমন্ত্রী। দুর্নীতির অভিযোগে বহুবার বিদ্ধ হয়েও মানুষের আশীর্বাদে বারবার তামিল তখতে ফিরে এসেছেন তিনি। রাজনীতির লড়াইয়ে কামব্যাক করাটা জলভাতে পরিণত করলেও জীবনের লড়াইয়ে হার মানতে হল। তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়রামন জয়ললিতার জীবনাবসানে শেষ হল দ্রাবিড় রাজনীতির এক বর্ণময় অধ্যায়। সিনেমার পর্দা থেকে পুরাতচি থালাইভি। বিপ্লবী নেত্রীর তকমা। ক্লাস টেনের পরীক্ষায় রাজ্যে প্রথম। একশো চল্লিশটি ছবিতে অভিনয়। ফিল্মি কেরিয়ারে ইতি টেনে MG রামচন্দ্রনের হাত ধরে ADMK-তে যোগদান। MGR-এর মৃত্যুর পর দলের সর্বময় নেত্রী। তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী পদে ছ-বার শপথ গ্রহণ। ধীরে ধীরে সমর্থকদের চোখে ভগবান হয়ে ওঠা। জয়রামন জয়ললিতাকে বাদ দিয়ে স্বাধীনোত্তর ভারতে দ্রাবিড় রাজনীতির ইতিহাস অসম্পূর্ণ। দিল্লিতে জোট সরকারের আমল শুরু হওয়ার পর বিন্ধ্য পর্বতের ওপারের নেতাদের আরও বেশি গুরুত্ব দিতে বাধ্য হয়েছে আর্যাবর্তের রাজনীতি। দর কষাকষির খেলায় বরাবর ফ্রন্ট লাইনে থেকেছেন করুণানিধি আর জয়ললিতা। যুযুধান দুই দলের দুই প্রধানের আদায়-কাঁচকলায় সম্পর্ক বলতেও প্রথমেই মনে আসে তাঁদের নাম। উড়াল পুল দুর্নীতির অভিযোগে জয়ললিতার পুলিস গভীর রাতে ঘুম থেকে তুলে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী করুণানিধিকে গ্রেফতার করে। রাজনীতির পাশা উল্টে DMK ক্ষমতায় আসতেই আবার জয়ললিতার বিরুদ্ধে উস্কে ওঠে দুর্নীতির মামলা। দুর্নীতি ও আম্মা সমার্থক শব্দ বলে বারবার অভিযোগ করেছেন জয়ললিতার বিরোধীরা।আর করবেন নাইবা কেন? কালার টিভি কেলেঙ্কারি, তানসি জমি  কেলেঙ্কারি, হোটেল দুর্নীতি, আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিবিহীন সম্পত্তির অভিযোগ। তালিকাটা বেশ দীর্ঘ। তবে, উচ্চ আদালতের রায়ে বারবারই নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে গদিতে ফিরে এসেছেন আম্মা। নয়ের দশকে পালিত পুত্রের বিয়েতে ছ-কোটি টাকা খরচ করায় দুর্নীতির অভিযোগ।

আরও পড়ুন শেষ হল ৭৫ দিনের লড়াই, মৃত্যুর কাছে হার মানলেন জয়ললিতা

সেই পুত্রকেই পরে আবার তাজ্য পুত্র ঘোষণা। প্রশাসনের সর্বত্র বান্ধবী শশীকলার ছড়ি ঘোরানো। পরে, তাঁকেই দল থেকে বহিষ্কার ও আবার দলে ফিরিয়ে নেওয়া। ব্যক্তিগত হিসাবরক্ষককে জুতো পেটানো বা  বাড়ি থেকে উদ্ধার আটাশ কেজি সোনা, সাড়ে সাতশো জোড়া জুতো, সাড়ে দশ হাজার শাড়ি। কোনও অভিযোগই দীর্ঘ মেয়াদে তামিল রাজনীতিতে আম্মার স্থান টলাতে পারেনি। MGR-এর মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী জানকী রামচন্দ্রনের হাত থেকে ADMK-র নেতৃত্ব ছিনিয়ে নেন জয়ললিতা। প্রথমবার বিরোধী দলনেত্রী হওয়ার পর বিধানসভার ভিতর DMK বিধায়করা তাঁর শাড়ি ছিঁড়ে দেন। ছেঁড়া শাড়ি নিয়েই বাইরে আসেন আম্মা। পলিটিকাল পন্ডিতরা বলে থাকেন, তখন যে সহানুভূতি তিনি পেয়েছিলেন তাতেই তাঁর রাজনৈতিক জীবনের ভিত গড়া হয়ে যায়। সাত কোটি তামিলের চোখে MGR-এর উত্তরাধিকারী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সফল হন আম্মা। মহিলাদের জন্য রান্নাঘরে মিক্সার-গ্রাইন্ডার, মেয়ের বিয়ের জন্য চার গ্রাম সোনা, নগদ পঁচিশ হাজার টাকা, সস্তার আম্মা ক্যান্টিন, আম্মা মেডিসিন, বিনামূল্যে ছাত্রছাত্রীদের ল্যাপটপ, রাজ্যে মদ বন্ধের উদ্যোগ - এ সবেই দুর্নীতির অভিযোগ বঙ্গোপসাগরে ছুঁড়ে ফেলে দিনে দিনে নিজের ভোট ব্যাঙ্ক সঙ্ঘবদ্ধ করেছেন তিনি। টুজি কেলেঙ্কারি, করুণানিধির পারিবারিক কোন্দলে DMK ক্রমশ দুর্বল হওয়ায় ভোটের বাক্সে তার ষোলো আনা ফায়দা নিয়েছেন জয়ললিতা। দু-হাজার চোদ্দোর সেপ্টেম্বরে তাঁকে আয়-বহির্ভূত সম্পত্তির দায়ে জেলে যেতে হয়। প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় পদ খোয়ান তিনি। প্রায় আট মাস পর কর্ণাটক হাইকোর্ট বেকসুর খালাস দেওয়ায় গদিতে ফিরে আসেন জয়ললিতা। দু-হাজার চোদ্দোর লোকসভা ভোটে দেশের তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে ADMK. আর, দু-হাজার ষোলোর বিধানসভা ভোটে DMK-র সূর্য ডুবিয়ে ফের রাজ্যে ঝড় তোলে জোড়া পাতা। করুণানিধিকে উড়িয়ে দিয়ে ফের তামিল তখতে আসীন হন জয়ললিতা। তামিলনাড়ু হয়ে ওঠে আম্মানাড়ু। দু-বছর আগে আম্মার জেলযাত্রার সময় একাধিক ADMK সমর্থক আত্মহত্যা করেন। এ বার তিনি হাসপাতালে থাকাকালীন রোজ প্রার্থনায় সামিল হয়েছেন সমর্থকরা। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আম্মার শারীরিক অবস্থা নিয়ে এই ক-দিন চিকিত্‍সকরা মিডিয়ার সামনে খুব একটা মুখ খোলেননি। তবে, শেষপর্যন্ত আর দুঃসংবাদটা এড়ানো গেল না। মৃত্যুর কাছে হার মানলেন জয়রামন জয়ললিতা। আম্মার মৃত্যুতে শেষ হল দ্রাবিড় রাজনীতির এক বর্ণময় অধ্যায়।

আরও পড়ুন  আম্মার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই তামিলনাড়ু থেকে দেশে, শোকের ছায়া

.