তারিখ নয়, নারীজীবনে এবার নামুক আশ্চর্য নতুন এক ভোর

এ বছর দিনটির ১৩তম উদযাপন।

Updated By: Jan 24, 2021, 08:08 PM IST
তারিখ নয়, নারীজীবনে এবার নামুক আশ্চর্য নতুন এক ভোর

সৌমিত্র সেন

মেয়েদের নিয়ে ভাবনাচিন্তা তো কম হয় না। যুগে-যুগে উর্বর মানুষ নারীর ক্ষমতায়নের কথা, অর্জনের কথা বলেছেন। তাঁরা অনুভব করেছেন, পথ কঠিন ও দীর্ঘ। তবু এগতে হবে বলে নতুন উদ্যমে, নতুন ভাবনায়, নতুন পরিকল্পনায় এগিয়ে যায় মানুষ, এগিয়ে যায় দেশ-জাতি-সমাজ। 

সেই এগিয়ে যাওয়ার নজিরই ২৪ জানুয়ারির এই 'জাতীয় কন্যাসন্তান দিবস' (National Girl Child Day)। ভারতে (India)মেয়েদের নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়। এ দেশে প্রতিদিন মেয়েদের লিঙ্গবৈষম্যের (gender inequality) শিকার হতে হয়। আছে আরও নানা ধরনের বঞ্চনা ও নিপীড়ন। সেই অন্ধকূপ থেকে বেরিয়ে আসার লক্ষ্যেই এই দিবস নির্ধারণ। ২০০৮ সালে ভারত সরকার (Government of India)এবং মহিলা ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রক (Ministry of Women and Child Development) এই দিনটিকে কেন্দ্র করে লিঙ্গসমতা সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল।

মহাত্মা গান্ধী বিশ্বাস করতেন যদি মেয়েদের ক্ষমতায়ন না হয় তবে দেশ স্বাধীনতা অর্জন থেকে দূরে থাকবে। তারও আগে স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন, দেশের দু'টি ডানা, একটি পুরুষ অন্যটি নারী। দু'টি ডানাই শক্তপোক্ত না হলে দেশ উন্নতির দিকে এগোতে পারবে না। ভারতীয় সাহিত্যেও মেয়েদের কণ্ঠ ধীরে ধীরে জায়গা পেয়েছে। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখাপত্রের মধ্যে দিয়েই প্রথম মেয়েদের কণ্ঠ শোনা গেল। 

Also Read: 'দেশ কি বেটি' বনাম 'কন্যাশ্রী'; জাতীয় কন্যাদিবসে টুইট-যুদ্ধ মোদী-মমতার

তবু আজও কেন এত কিছু করতে হয়? কারণ, কবি-দার্শনিক-ইতিহাসবিদেরা বারবার করে নারীমুক্তির কথা নারীর অধিকার রক্ষার কথা বললেও আমাদের সমাজের স্থবির চাকাটি কিছুতেই যেন গড়ায় না। আমরা ভুলে যাই, নারীকে বলা হয় 'অর্ধেক আকাশ'। আমরা ভুলে যাই, কাজী নজরুলের অমর সেই পঙক্তি-- 'বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর,/ অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর। 

'নর' কিন্তু 'নারী'কে সর্বথা সেই মর্যাদা দেয় না। দেখতে-দেখতে দিনটির ১৩তম বর্ষ এসে গেল। তবুও কিছু অর্জন করলাম কি আমরা? এগিয়ে দেওয়া তো দূরের কথা, এখনও পুরুষতন্ত্র নানা ভাবে নারীর পিছন টেনে ধরে। তাই 'জাতীয় কন্যাসন্তান দিবসে'র (National Girl Child Day)মতো দিনের প্রয়োজন পড়ে। এটা লজ্জার যে, আজও এদেশে 'বেটি বচাও, বেটি পড়াও' বা 'কন্যাশ্রী'র মতো প্রকল্প করে নারীকে সামনের দিকে ঠেলে এগিয়ে দিতে হয়। আজও, এই দৃপ্ত উজ্জ্বল একুশ শতকে নারীর ক্ষমতায়নের জন্য, তাদের অধিকার রক্ষার (to promote girls' empowerment and fulfilment of their rights) জন্য আমাদের দিন ধরতে হচ্ছে। আজও তা আলোজলবাতাসের অতি সহজ স্বতঃস্ফূর্ততায় আমাদের সমাজের কেন্দ্রে আমাদের কর্মের গভীরে আমাদের মননের গর্ভে প্রোথিত হয়নি। 

ফলে, এখনও আমাদের কন্যাসন্তানদের জন্য উজ্জ্বল আলোকিত এমন একটি নতুন দিনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে, যেদিন তারিখকে অতিক্রম করে সমানাধিকারের আলোই বড় হয়ে উঠবে। দেশে আসুক সেই ভোর।

Also Read: মুখ্যমন্ত্রীর 'পরীক্ষা'য় ফার্স্টবয় যোগী, থার্ড দিদি

.