বিধায়ক অপহরণে ভেস্তে গেল ইতালীয় পর্যটকদের মুক্তি

শুক্রবার রাতে কোরাপুট জেলার লক্ষ্মীপুরের বিধায়ক ঝিনা হিকাকাকে অপহরণের পরই `সিঁদুরে মেঘ` দেখেছিলেন ওড়িশা সরকারের শীর্ষস্থানীয় আধিকারিকরা। বেলা গড়াতেই সেই আশঙ্কা পরিণত হল নির্মম সত্যে। সিপিআই (মাওবাদী)-র ওড়িশা রাজ্য কমিটি মনোনীত দুই মধ্যস্থকারী বি ডি শর্মা এবং দণ্ডপাণি মোহান্তি আলোচনা প্রক্রিয়া থেকে সরে দাঁড়ানোয় কার্যত `বিশ বাঁও জলে` চলে গেল অপহৃত দুই ইতালীয় পর্যটকের মুক্তির সম্ভাবনা।

Updated By: Mar 24, 2012, 04:30 PM IST

শুক্রবার রাতে কোরাপুট জেলার লক্ষ্মীপুরের বিধায়ক ঝিনা হিকাকাকে অপহরণের পরই `সিঁদুরে মেঘ` দেখেছিলেন ওড়িশা সরকারের শীর্ষস্থানীয় আধিকারিকরা। বেলা গড়াতেই সেই আশঙ্কা পরিণত হল নির্মম সত্যে। সিপিআই (মাওবাদী)-র ওড়িশা রাজ্য কমিটি মনোনীত দুই মধ্যস্থকারী বি ডি শর্মা এবং দণ্ডপাণি মোহান্তি আলোচনা প্রক্রিয়া থেকে সরে দাঁড়ানোয় কার্যত `বিশ বাঁও জলে` চলে গেল অপহৃত দুই ইতালীয় পর্যটকের মুক্তির সম্ভাবনা। শুধু আলোচনা প্রক্রিয়া থেকে সরে দাঁড়ানোই নয়, দুই মধ্যস্থতাকারী স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, আপাতত নতুন করে মাওবাদীদের সঙ্গে আলোচনা শুরুর কোনও সম্ভাবনাই নেই।
কোরাপুট থেকে লক্ষ্মীপুরে নিজের বাড়িতে ফেরার সময় শুক্রবার রাতে পাহাড়, জঙ্গলঘেরা টোয়াপুটের কাছে বিজু জনতা দল(বিজেডি)-এর বিধায়ক ঝিনা হিকাকার গাড়ি ঘিরে ধরে জনা পঞ্চাশেক সশস্ত্র মাওবাদী। সঙ্গে থাকা নিরাপত্তাকর্মী এবং গাড়ির চালককে বিনা বাধায় যেতে দেওয়া হলেও ৩৪ বছরের এই জনপ্রিয় আদিবাসী নেতাকে তুলে নিয়ে যায় মাওবাদীরা। নিরাপত্তাকর্মী এবং গাড়ির চালকই প্রথম লক্ষ্মীপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
গতকালই হিংসা থেকে বিরত থাকতে মাওবাদীদের কাছে আবেদন করেছিলেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক। আজ এই ঘটনার পর বিধায়ককে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার জন্য মাওবাদীদের কাছে আর্জি জানান দুই মধ্যস্থতাকারী। শুক্রবার মাওবাদীদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকের পর মধ্যস্থতাকারী দণ্ডপাণি মোহান্তি জানিয়েছিলেন, আজই অপহৃত দুই ইতালীয় পর্যটক ক্ল্যানডিও কোলানজিলো এবং বোসাসকো পাওলোকে মুক্তি দিতে পারে মাওবাদীরা। কিন্তু পুরো ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে সিপিআই মাওবাদীর অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের প্রসঙ্গ চলে আসায় বিষয়টি অন্য মাত্রা পেয়ে যায়। আর সেই সঙ্গেই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে অপহৃত দুই বিদেশি নাগরিকের মুক্তির সম্ভাবনা।
সিপিআই(মাওবাদী)-র ওড়িশা রাজ্য সম্পাদক সব্যসাচী পাণ্ডার সঙ্গে সংগঠনের অন্ধ্রপ্রদেশের নেতাদের মতপার্থক্যের বিষয়টি এর আগেও বেশ কয়েকবার মিডিয়ার প্রচারে এসেছে। মধ্যস্থতারীদের সঙ্গে আলোচনায় অপহৃত দুই ইতলীয় পর্যটকের মুক্তির বিনিময়ে ওড়িশার মাওবাদীরা যে সমস্ত ধৃত `কমরেড`দের জেল থেকে ছাড়ার দাবি জানিয়েছিল, তাদের মধ্যে রয়েছে সব্যসাচী পাণ্ডার স্ত্রী শুভশ্রী ওরফে মিলি পাণ্ডার নাম। এই পরিস্থিতিতে আলোচনা প্রক্রিয়া ভেস্তে দিতে মাওবাদীদের অন্ধ্রের মাওবাদী স্কোয়াড পরিকল্পনা মাফিক বিজেডি বিধায়ক অপহরণের ঘটনা ঘটিয়েছে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। আর এই অনুমান সত্যি হলে এ কথা বলতেই হয়, প্রাথমিকভাবে তেলুগু কমরেড`দের এই পরিকল্পনা যথেষ্টই কার্যকর হয়েছে।

বিধায়ক অপহরণের ঘটনা নিয়ে এদিন উত্তাল হয়ে ওঠে ওড়িশা বিধানসভার অধিবেশন। মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই স্পিকারের হাত থেকে কাগজপত্র ছিনিয়ে ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন বিরোধী কংগ্রেস ও বিজেপি` বিধায়করা। তুমুল হট্টগোলের জন্য মুলতুবি করে দিতে হয় অধিবেশন। এদিন নবরঙপুরের আদিবাসী নেতা তথা
কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ মাঝি এদিন অভিযোগ করেছেন, রাজ্যের সাংসদের নিরাপত্তার বিষয়ে উদাসীন নবীন পট্টনায়ক সরকার। উল্লেখ্য, কয়েক মাস আগেই নবরঙপুরের বিজেডি বিধায়ক জগবন্ধু মাঝিকে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে খুন করেছিল মাওবাদীরা।
অন্যদিকে ওড়িশার কোরাপুটের লক্ষ্মীপুরে বিধায়ক অপহরণের ঘটনায় এদিন সরকারের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন ভারভারা রাও। মাওবাদী প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন হিসেবে পরিচিত অন্ধ্রপ্রদেশের এই বিশিষ্ট কবির অভিযোগ, বিভিন্ন চাপের কারণেই ওড়িশা সরকার আদিবাসীদের জন্য উন্নয়নমূলক কাজ থেকে পিছিয়ে আসছেন। আর এই অনুন্নয়ন জনিত ক্ষোভ থেকেই হিংসা ও অপহরণের মতো ঘটনা বাড়ছে।

.