রিজ কাণ্ডের ছায়া এবার রাজধানীতে

পরস ভাসিন মৃত্যুরহস্যে পুলিসের হাতে এল সুইসাইড নোট। বুধবার পরসের স্ত্রী শেলি দীর্ঘ দু`পাতার একটি সুইসাইড নোট পুলিসের হাতে তুলে দেন। পরস এর আগেও দুবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন বলেও এদিন পুলিসকে জানান শেলি।

Updated By: Sep 5, 2012, 05:44 PM IST

পরস ভাসিন মৃত্যুরহস্যে পুলিসের হাতে এল সুইসাইড নোট। বুধবার পরসের স্ত্রী শেলি দীর্ঘ দু`পাতার একটি সুইসাইড নোট পুলিসের হাতে তুলে দেন। পরস এর আগেও দুবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন বলেও এদিন পুলিসকে জানান শেলি।
পরস ভাসিনের মৃত্যুর তদন্তে নেমে গতকাল শেলি ও তাঁর বাবাকে জেরা করে পুলিস। জেরার মুখে শেলি জানান তাঁরা দুজনেই একসঙ্গে আত্মহত্যা করার পরিকল্পনা করেছিলেন। সেই মতোই পরসের মৃত্যুর কিছুদিন আগে দুজনে মিলে সুইসাইড নোটটি লেখেন। গত ৮ মে পরস একবার হাতের শিরা কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন বলেও জানান শেলি। ঠিক তার পর দিনই পরস ফের আত্মহত্যার চেষ্টা করতে পারেন সেই আতঙ্কে তাঁকে বিয়ে করেন শেলি। তবে শেলির বক্তব্য সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিয়ে বুধবার ঘটনার সিবিআই তদন্ত দাবি করেছেন পরসের মা নিনা ভাসিন। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, "যদি দুজনেই আত্মহত্যার পরিকল্পনা করে থাকে তাহলে শেলি আত্মহত্যা করল না কেন?" এমনকী, শেলির পরিবারের বিরুদ্ধে টাকা দিয়ে পুলিসকে তদন্তে প্রভাবিত করার অভিযোগও এনেছেন নিনা। পরসের আগে আত্মহত্যার চেষ্টার কথাও এদিন অস্বীকার করেন তিনি।
চার মাস আগে শেলি মিত্তলকে লুকিয়ে বিয়ে করেছিলেন পরস ভাসিন। শুরু থেকেই বাড়ির আপত্তি থাকায় বিয়ের পরও নিজের বাড়িতেই থাকতেন শেলি। পরসের ভাইয়ের বয়ান অনুযায়ী, গত ২৪ অগাস্ট হঠাত্ই বিয়ের কথা বাড়িতে জানান শেলি। তারপর দিনই পরসের পরিবার শেলির মায়ের সঙ্গে একটি মলে দেখা করে। ভাসিনদের এক প্রতিবেশীকে ফোন করে পরসের সম্পর্কে খোঁজখবরও নেন শেলির বাবা। ২৯ অগাস্ট শেষপর্যন্ত শেলির বাবার সঙ্গে দেখা করে পরস। সেদিন পরসের সঙ্গে তাঁর শ্বশুর দুর্ব্যবহার করেন বলে পুলিসকে জানিয়েছেন পরসের ভাই। ঠিক তার দুদিন পর ১ সেপ্টেম্বর পূর্ব দিল্লির এক রেললাইনের ধার থেকে পরস ভাসিনের দেহ উদ্ধার করে পুলিস।

পরসের ধড় থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় দেহ সনাক্ত করতেই বেগ পেতে হয় পুলিসকে। শেষপর্যন্ত তাঁর হাতে স্ত্রী শেলি মিত্তলের নামের ট্যাটু থেকেই সনাক্ত করা হয় দেহ। পরসের পরিবারের অভিযোগ, তদন্ত শুরু হওয়ার আগেই পুলিস পরসের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে দাবি করছিল। শেষপর্যন্ত দেহ উদ্ধারের ৩ দিন পর খুনের মামলা দায়ের করে পুলিস। পুলিসের বিরুদ্ধে বারবার মৃত্যুর কারণ নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অভিযোগও এনেছেন পরসের বোন সুরভি। তাঁর অভিযোগ, "প্রথমে পুলিস বলেছিল আত্মহত্যা করেছে পরস। পরে সংবাদমাধ্যমের চাপে খুন বলে মেনে নেয় । কিন্তু তারপরও ফরেন্সিক পরীক্ষার পর ফের আত্মহত্যা বলে দাবি করছে পুলিস। আমি পরসের দেহ দেখেছি। ওর মুখটা টুকরো টুকরো ছিল। যদি সত্যিই ট্রেনে কাটা পড়ত তাহলে কখনই মুখ টুকরো টুকরো হয়ে যেত না। পুলিস আমাদের বোকা বানানোর চেষ্টা করছে"। যদিও দেহ টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়ার খবর এদিন উড়িয়ে দেন দিল্লি পুলিসের ডেপুটি কমিশনার(ক্রাইম) সঞ্জীব জৈন। ট্রেনে চাপা পড়ার ফলে তাঁর দেহ থেঁতলে যায় বলে দাবি করেছেন তিনি। এই বিষয়ে ট্রেনের চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে পুলিস।
পরসের মৃত্যুরহস্য মনে করিয়ে দেয় ঠিক পাঁচ বছর আগের একটি ঘটনাকে। সেটাও ছিল সেপ্টেম্বর মাস। শুধু বদলে গেছে স্থান, কাল, পাত্র। কলকাতার পাতিপুকুর-দমদম স্টেশনের মাঝে মিলেছিল এক অজ্ঞাত পরিচয় যুবকের দেহ। পরসের মতোই মেয়ের বাড়ির অমতে বিয়ে করেছিলেন রিজওয়ানুর। শ্বশুরবাড়ির চাপের মুখে রিজওয়ানুর বেছে নিয়েছিলেন আত্মহত্যার পথ। পরস আত্মহত্যা করেছে কি না সেটা এখনও তদন্ত সাপেক্ষ। তবে, পরসের মৃত্যু এক অদৃশ্য ডোরে দিল্লিকে বেঁধে দিয়ে গেল পাঁচ বছর আগের কলকাতার সঙ্গে।

.