Sarojini Naidu: দেশের কাজের বিপুল চাপেও তাঁর হাতে ধরা থাকত কবিতার জাদুবাঁশি

এ বছর স্বাধীনতা দিবস ৭৫ বছরে পা দিচ্ছে। সাড়ে সাত দশকের স্বাধীনতা-যাপনে দেশবাসীর স্বপ্নপূরণ ও স্বপ্নভঙ্গের নানা ইতিহাস রচিত হয়েছে। কিন্তু সেই 'ইতিহাসে'র পথ যাঁরা তৈরি করে দিলেন তাঁদের কীভাবে, কতটা মনে রেখেছে দেশ? প্রায় অনালোচিত বা স্বল্পালোচিত কয়েকজন ব্যক্তিত্বকে ফিরে দেখল Zee 24 Ghanta Digital

Updated By: Aug 14, 2021, 08:18 PM IST
Sarojini Naidu: দেশের কাজের বিপুল চাপেও তাঁর হাতে ধরা থাকত কবিতার জাদুবাঁশি

সৌমিত্র সেন

দিনটা ১৯৪৬ সালের ১১ ডিসেম্ব। গণপরিষদের বৈঠকে অস্থায়ী সভাপতি সচ্চিদানন্দ সিংহ (Sachchidananda Sinha) সরোজিনী নাইডুকে আহ্বান করে বললেন, 'বুলবুল-ই-হিন্দ' ভারতের নাইটিঙ্গেলকে সভায় বক্তব্য রাখার জন্য অনুরোধ করছি। তবে তা গদ্যে নয়, তাঁর বক্তব্য কবিতায় শুনব আমরা।' এহেন অনুরোধ শুনে সরোজিনী বললেন, 'সভাপতি মহাশয়ের এই ডাক সাংবিধানিক নয়।' সভাপতির পাল্টা-- 'আমার পদ এখানে উহ্য থাক।' এর পরই সরোজিনী শুরু করলেন-- ''এক কাশ্মিরী কবির লেখা কয়েকটি লাইন আমার মনে পড়ছে-- 'বুলবুল কো গুল মুবারক,/গুল কো চারমান মুবারক,/রঙ্গিন তাইবিয়াতোঁ কো রঙ্গ-এ-সিখান মুবারক।'' এর অর্থ-- বুলবুল সুখী থাকে ফুলের কাছে, ফুল সুখী থাকে বাগানে আর রঙিন ব্যক্তিত্বের মানুষেরা কবিতায় আনন্দিত হন। বলাই বাহুল্য, সেদিন সরোজিনীর কবিতা শুনে মুগ্ধ হয়েছিল গোটা সভা। 

আরও পড়ুন: Kanaklata Barua: তাঁর আত্মদান দেশ জুড়ে মেয়েদের ঘোর দুঃসাহসী করে তুলেছিল

এহেন সরোজিনী নাইডু ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী, কংগ্রেসের বার্ষিক সভায় সভাপতিত্ব করা প্রথম মহিলা, স্বাধীন ভারতের প্রথম মহিলা গভর্নর! তাঁর নেতৃত্বেই গড়ে উঠেছিল 'উইমেন্স ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন'। কিন্তু সরোজিনীর এই সব পরিচয়ের পাশাপাশি তাঁর আর একটি পরিচয়ও বড় হয়ে উঠেছিল। সেটি তাঁর কবি-পরিচয়। 

১৮৭৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি সরোজিনী চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম হায়দরাবাদের এক হিন্দু ব্রাহ্মণ পরিবারে। তিনি ছিলেন বিজ্ঞানী দার্শনিক শিক্ষাবিদ অঘোরনাথ চট্টোপাধ্যায় ও কবি বরদাসুন্দরী দেবীর জ্যেষ্ঠা কন্যা। অঘোরনাথও গুণী মানুষ ছিলেন। তিনি নিজাম কলেজের প্রতিষ্ঠাতা। পরবর্তীকালে রাজনৈতিক আন্দোলনে অংশ নেওয়ার জন্য তাঁকে কলেজের অধ্যক্ষের পদ থেকে পদচ্যুত করা হয়। অন্য দিকে, সরোজিনীর মা বরদাসুন্দরী ছিলেন কবি। সেই যুগে বাংলা ভাষায় যে মহিলারা কবিতা লিখতেন তাঁদের মধ্যে অগ্রগণ্যা ছিলেন বরদাসুন্দরী। সরোজিনীও মায়ের মতো কবিতা লিখতে শুরু করেছিলেন। সরোজিনীর প্রথম কবিতা সংগ্রহ 'দ্য গোল্ডেন থ্রেসহোল্ড' প্রকাশিত হল ১৯০৫ সালে। ১৭ বছর বয়সেই বিদুষী সরোজিনী ড. মুথ্যালা গোবিন্দরাজুলু নায়ডুর প্রেমে পড়েন। আর ১৯ বছর বয়সে পড়াশোনা সমাপ্ত করেই তাঁর সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন।

১৯০৫ সালেই বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরোজিনীর স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগদান। ১৯১৫ থেকে ১৯১৮ সালের মধ্যবর্তী সময়ে তিনি ভারতের নানা জায়গায় জাতীয়তাবাদ, যুবকল্যাণ, নারীমুক্তি বিষয়ে বক্তৃতা করেন। ইতিমধ্যেই ১৯১৬ সালে জওহরলাল নেহরুর সঙ্গে সাক্ষাৎ। এর ঠিক পরপরই তিনি চম্পারণে নীলচাষিদের হয়ে আন্দোলন শুরু করেন। ১৯১৯ সালের মার্চে ব্রিটিশ সরকার রাওলাট আইন জারি করে রাজদ্রোহমূলক রচনা নিষিদ্ধ করে। এর প্রতিবাদে গান্ধীজি অসহযোগ আন্দোলন সংগঠিত করলে সরোজিনী একেবারে প্রথমদিকেই আন্দোলনে যোগ দেন। ব্রিটিশ এই আন্দোলনের উপর ব্যাপক দমননীতি প্রয়োগ করে। ১৯১৯ সালের জুলাই মাসে সরোজিনী ইংল্যান্ডে হোমরুল লিগের দূত মনোনীত হন। এক বছর পরে ভারতে ফেরেন। ওই বছরই ১ অগস্ট গান্ধীজি অসহযোগ আন্দোলন ঘোষণা করেন। এ সবের অনেক পরে, ১৯২৫ সালে কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচিত হন সরোজিনী। ১৯৩০ সালের ২৬ জানুয়ারি জাতীয় কংগ্রেস ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের কবল থেকে ভারতের স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ৫ মে গান্ধীজিকে গ্রেফতার করা হয়। এর অনতিকাল পরেই গ্রেফতার হন সরোজিনীও। কয়েকমাস তিনি কারারুদ্ধ থাকেন। ১৯৩১ সালের ৩১ জানুয়ারি, গান্ধীজির সঙ্গে তাঁকেও মুক্তি দেওয়া হয়। সেই বছরেই পরের দিকে আবার তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট স্বাধীনতা লাভের পরে সরোজিনী যুক্তপ্রদেশের (বর্তমানে উত্তরপ্রদেশ) রাজ্যপাল নিযুক্ত হন।

এই গোটা কর্মজীবন-পর্বেই সরোজিনী কবিতা লিখে গিয়েছেন। হাজার ব্যস্ততা সত্ত্বেও কবিতা থেকে কখনও পুরোপুরি সরে যাননি। ১৯০৫ সালের প্রথম কাব্যগ্রন্থ The Golden Threshold-এর পরে ১৯১২ সালে বেরয় তাঁর দ্বিতীয় বই The Bird of Time: Songs of Life, Death & the Spring। এর পর The Broken Wing: Songs of Love, Death and the Spring কবিতাগ্রন্থ। এরপর অবশ্য অনেকটা বিরতি। ১৯৪৩ সালে বেরয় The Sceptred Flute: Songs of India বইটি। ১৯৬১ সালে The Feather of the Dawn। সরোজিনীকে পৃথিবীর সেরা কবিদের মধ্যে অন্যতম মনে করা হয়। সেই সময়ের বিশ্বনন্দিত অনেক মার্কিন ও ব্রিটিশ কবি-সাহিত্যিকই তাঁর সাহিত্যেকর্মের অকুণ্ঠ প্রশংসা করেছেন। কবিতা সংক্রান্ত একটি ওয়েবসাইট তাঁকে এমনকী পৃথিবীর ইতিহাসের সেরা ১০০ জন কবির মধ্যেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। যেখানে তাঁর স্থান ছিল ১৯তম।

১৯৪৯ সালের ২ মার্চ এই 'দ্য নাইটিঙ্গল অফ ইন্ডিয়া' নামে খ্যাত অসাধারণ এই ভারতীয় মহিলার মৃত্যু হয়। 

(Zee 24 Ghanta App : দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)

আরও পড়ুন: Vinoba Bhave: ১৯৪০ সালে তাঁকে দিয়েই অহিংস আন্দোলনের প্রচার শুরু করান গান্ধীজি

.