এমনই প্রেমের টান! কানাডার প্রাসাদ থেকে কালনার ছাউনির ঘরে ক্যাথরিন

টিঙ্কু-ঘরণী এখন শাঁখা-সিঁদুর, শাড়ি পরছেন। রুটি বেলছেন। চা করছেন। বাংলা বলছেন— ‘খাব’, ‘ভাত’, ‘ধন্যবাদ’।

Updated By: Oct 21, 2018, 01:11 PM IST
এমনই প্রেমের টান! কানাডার প্রাসাদ থেকে  কালনার  ছাউনির ঘরে ক্যাথরিন

নিজস্ব প্রতিবেদন:   বছর খানেক আগের কথা! কালনার আশ্রম পাড়ার বাসিন্দার  টিঙ্কু রায়ের দিন কাটছিল যোগ শিক্ষায়।

কানাডার  ক্যাথরিন কইল্লেত্তে ডুবে ছিলেন স্কুলে ছাত্র পড়ানোয়। স্কুলের ছুটির ফাঁকেই একবার ভারতে ঘুরতে এসেছিলেন ক্যাথেরিন। আর সেখান থেকেই শুরু এক রঙিন প্রেমের গল্প।  অতঃপর ভরা আশ্বিনে চার হাত এক হল।

মিলিয়ে দিল যোগ ব্যায়াম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।  ভৌগোলিক অবস্থান, আত্মীয়-পরিজন, বন্ধুবান্ধব, ভাষার  দূরত্ব—সব পিছনে ফেলে ক্যাথরিন উড়ে এলেন টিঙ্কুর কাছে। এমনই প্রেমের টান!

টিঙ্কু-ঘরণী এখন শাঁখা-সিঁদুর, শাড়ি পরছেন। রুটি বেলছেন। চা করছেন। বাংলা বলছেন— ‘খাব’, ‘ভাত’, ‘ধন্যবাদ’। আর টিঙ্কুর  পরিবার বলছে, ‘‘মেয়ের খুব সাহস।’’  ক্যাথরিন তাঁদের কাছে  ঘরের মেয়ে হয়ে গিয়েছেন।

কানাডায় একটি স্কুলে পড়াতেন ক্যাথরিন। ভারতীয় সংস্কৃতি তাঁকে প্রথম থেকে আকৃষ্ট করত। সেই সংস্কৃতির টানেই স্কুল ছুটির ফাঁকে ভারতে ঘুরতে এসেছিলেন তিনি। গিয়েছিলেন হৃষিকেশে। এক বছর আগে হৃষিকেশেই একটি যোগ ব্যায়ামের অনুষ্ঠানে কালনার আশ্রম পা়ড়ার বাসিন্দা টিঙ্কুর সঙ্গে দেখা হয়েছিল ক্যাথরিনের। প্রথমে বন্ধুত্ব, তারপর আরও একটু এগিয়ে ভালোলাগা, ভালোবাসা...

ফেসবুক থেকে ম্যাসেঞ্জার, ধীরে ধীরে হোয়াটসঅ্যাপে গান,  অন্যান্য তথ্য আদানপ্রদান শুরু হয়।  কালনার প্রত্যন্ত গ্রামের একেবারে সাদাসিধে টিঙ্কুর প্রেমে পড়ে যান ক্যাথরিন। টিঙ্কুকে ভালোবাসার প্রস্তাব দেন। প্রথমটায় ঘাবড়ে যান টিঙ্কু। ভেবেছিলেন, কীভাবে বিদেশিনী  গ্রামের বাড়িতে সকলের সঙ্গে মানিয়ে নেবেন! কিন্তু ক্যাথরিন তো নাছোড়বান্দা।  ভিতর ভিতর অবশ্য টান বাড়ছিল টিঙ্কুরও। এদিকে, টিঙ্কুর কথা বাড়িতে জানান ক্যাথরিন। দুই পরিবারের মধ্যে ভাঙা ইংরাজিতে কথা হয়।

এরপর প্রেমিকার জোরাজুরিতে কানাডতেও যেতে হয় টিঙ্কুকে। ক্যাথরিনের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। ক্যাথরিনকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেন।  ভিডিও কলে ক্যাথরিনের পরিবারের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন নিজের বাবা-মায়ের।  এরপরও আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।

কালনার আশ্রম পাড়ায় টিঙ্কুর বাড়িতে শুরু হয়ে যায় বিয়ের তোড়জোড়। বিয়ের দিন দুয়েক আগেই কানাডা থেকে পৌঁছে যান ক্যাথরিন।  তারপর একেবারেই হিন্দু মতে বাঙালি নিয়মে চার হাত এক হয়।

ক্যাথরিনের ভালোবাসায় আপ্লুত  টিঙ্কুর পরিবার। আর টালির চালের এক কামরা ঘরের মানুষদের  উষ্ণ অভ্যর্থনায় চোখের জল বাঁধ মানেনি ক্যাথরিনের।  বিদেশিনী বউয়ের আচার-ব্যবহারে খুশি পড়শিরাও।  তাঁরা বলছেন, “মাত্র তো ক’দিন হল এখানে এসেছে। এরইমধ্যে এখানকার আয়বকায়দা শিখতে শুরু করেছে। মানিয়ে নিতে পারে মেয়েটা সকলের সঙ্গে। দেখবেন... ও গুছিয়েই সংসার করবে। একবার বাংলায় কথা বলাটা শিখে গেলেই ব্যস...”

.