স্বরূপ দত্ত


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

আজ ২৫ জুন। এক কথায় ভারতীয় ক্রিকেটের সবথেকে গর্বের দিন। ১৯৮৩ সালের আজেকর দিনেই তো প্রথম ক্রিকেট বিশ্বকাপ জিতেছিল ভারত। যে ইংরেজরা আমাদের উপর ২০০ বছর রাজত্ব করেছে, অত্যাচার করেছে, তাদের দেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে এমন গর্বের জয়! হাতের মুঠোয় বিশ্ব! প্রথমবার। যে লর্ডস ইংরেজদের অহংকারের, সেই নাক উঁচু জাতির নাকের সামনে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে হরিয়ানার হ্যারিকেনের দাপটে সিংহের ল্যাজ গুটিয়ে যাওয়া! তাও প্রতিপক্ষ কে? লয়েড, রবার্টস, রিচার্ডসরা! ভারত এরপর ২০০৭ সালে টি২০ বিশ্বকাপ, ২০১১ সালে ফের একদিনের ক্রিকেটে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে। কিন্তু ৬০ ওভারের ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন একবারই।


১৯৮৩-র সেই বিশ্বকাপ ফাইনালে ঠিক কী কী হয়েছিল? আজ সংক্ষেপে বলে দেওয়া পুরো ম্যাচের খবর। ৩৩ বছর পর সেই গল্প পড়তে বা শুনতে আপনার বেশ গর্ব লাগবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েড টস জিতে ভারতকে আগে পাঠিয়েছিলেন ব্যাট করতে। ওপেনার সুনীল গাওস্কর মাত্র ২ রান করেই আউট হয়ে যান। অন্য ওপেনার শ্রীকান্ত অবশ্য ৩৮ রান করেন। তিন নম্বরে নামা মহিন্দর অমরনাথ খেলেন ২৬ রানের ইনিংস। যশপাল শর্মার অবদান ১১ রান। সন্দীপ পাতিল খেলেন ২৭ রানের ইনিংস। অধিনায়ক কপিল দেব ১০ বলে ১৫ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলে প্যাভিলিওনে ফেরেন। কীর্তী আজাদ অবশ্য রান পাননি। ০ রানেই ফিরে যান তিনি। স্টুয়ার্ট বিনির বাবা রজার বিনি করেন ২ রান। মদনলাল শেষ দিকে ১৭ রান করেন। উইকেটকিপার কিরমানির অবদান ১১ রান। বলবিন্দর সান্ধু করেন ১১ রান। সব মিলিয়ে ৬০ ওভারের ম্যাচে ৫৪.৪ ওভার খেলে ১৮৩ রানে শেষ হয়ে যায় ভারতের ইনিংস! ওই শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটিং লাইন আপের কাছে এটা কোনও রানই নয়।


কিন্তু ঘটনাটা যে অন্য পথে বাঁক নিতে চলেছে, বোঝা যায় খানিক পড়েই। মাত্র ৬৬ রানে ৫ উইকেট পড়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের। দুই ডাকসাইটে ওপেনারের একজন গ্রিনিজ মাত্র ১ রান করে আউট হয়ে যান। আর ডেসমন্ড হেনেস করেন ১৩ রান। তিন নম্বরে নেমে ৩৩ রান করেন ভিভিয়ান রিচার্ডস। ক্যাপ্টেন ক্লাইভ লয়েড মাত্র ৮ রান করে আউট হয়ে যান। এরপর কোনও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানই আর দুই অঙ্কের রানে পৌঁছতে পারেননি। শুধুমাত্র উইকেট কিপার দুঁজো করেন ২৫ রান এবং মার্শাল করেন ১৮ রান। ৫২ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস শেষ হয়ে যায় ১৪০ রানে! মদনলাল এবং অমরনাথের বোলিংয়ের সামনে দাঁড়াতেই পারেননি ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটাররা। ভারত প্রথম বিশ্বকাপ জেতে ৪৩ রানে! ম্যান অফ দ্য ম্যাচ মহিন্দর অমরনাথ ছাড়া আর কেই বা হবেন! ব্যাট হাতে ২৬ রান। বল হাতে ৭ ওভারে ১২ রানের বিনিময়ে তিন উইকেট!


এই পর্যন্ত পড়েই যদি আপনি গর্বে বুকটা ফুলে উঠল, মনে হয়, তাহলে গল্পের বাকি আরও কিছুটা। কারণ, ২৫ জুন তারিখটার সঙ্গে ভারতীয় ক্রিকেটের গর্বের সম্পর্ক কোনও যুক্তি মানে না। তাই তো ভারত প্রথম টেস্ট ম্যাচও খেলে এই দিনটাতেই! হ্যাঁ, ভারত প্রথম বিশ্বকাপ জেতে ১৯৮৩ সালের ২৫ জুন। কিন্তু ভারতীয় দল ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট ম্যাচ খেলতে নামে এই ২৫ জুনেই! কী মজা, সেটাও কিনা লর্ডসে! আর সালটা ১৯৩২। অর্থাত্ ৫১ বছর আগে যেন ঠিকই ছিল, ১৯৮৩-র বিশ্বকাপটা কপিলদেবের হাতে উঠছেই। যদিও ১৯৩২-র সেই প্রথম টেস্টে ভারত হেরে গিয়েছিল ১৫৮ রানে ইংল্যান্ডের কাছে।


সত্যিই ক্রিকেটই পারে এমন কাকতলীয় ঘটনা ঘটাতে। কী দরকার অত যুক্তি, তর্ক, ব্যাখ্যা খুঁজতে গিয়ে। গর্বের দিন ২৫ জুন। গর্ববোধের জন্য আবার যুক্তি লাগে নাকি! ক্রিকেটদেবতার কেরামতির হদিশ পাওয়ার তাই কোনও দরকার নেই। মজাটাই উপভোগ করি। ২৫ জুন পালন করি। ভাবা যায়, দেশ ক্রিকেট খেলা শুরু (টেস্ট) করছে যে তারিখে, ৫১ বছর পর কিনা সেই তারিখেই জিতছে বিশ্বকাপটা! ক্রিকেটই পারে এভাবে মেলাতে। সাধে খেলাটা এদেশে ধর্ম!