কমলিকা সেনগুপ্ত


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

সেদিন পাহাড় থেকে নামতে নামতে ভেবেছিলাম, হায় রে! সাধের দার্জিলিয়ে কি শান্তি ফিরবে না? একের পর এক সর্বদলীয় বৈঠক হল, কিন্তু ফলাফল শূন্য। তারপর কেটে গিয়েছে বেশ কয়েকটা মাস...। ধীরে ধীরে দেখলাম, বিমল-বিনয় ভাগ হল...বিনয় এলেন নবান্নে। এরপর বনধ উঠল, শোনা গেল বিমলের হুঙ্কার...গা ঢাকা দিলেন একদা দোর্দণ্ড প্রতাপ বিমল গুরুং। জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা গুরুং-কে খুঁজতে শুরু হল অপারেশন...নিহত হলেন পুলিস অফিসার অমিতাভ মালিক। তারপরেও কেটে গিয়েছে বেশ কয়েকটা দিন। বন্ধু বা পরিচিতরা যখন প্রশ্ন করতেন, পাহাড়ে যাওয়া যাবে? তখন হ্যাঁ, বলতে ইচ্ছা করত না।


ফেব্রুয়ারিতে মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ে যাবেন শুনেই ৮ জুন রাজভবনের স্মৃতি মনে পড়ে গেল। ফ্ল্যাশব্যাকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম, সন্ধ্যা ৬ টায় মন্ত্রীদের দ্রুত পাহাড় ছেড়ে নেমে যাওয়ার দৃশ্য। এবার তাই মুখ্যমন্ত্রীর পাহাড় সফরের কথা শোনা ইস্তক মনে হতে লাগল, তিনি কি দার্জিলিং-এ উঠবেন? আসলে পাহাড় স্বাভাবিক হল কিনা জানা ইচ্ছা যে প্রবল। অবশেষে পাহাড়ে মুখ্যমন্ত্রীকে কভার করার অ্যাসাইনমেন্ট পেলাম।


মুখ্যমন্ত্রী যাওয়ার আগেই ৬ তারিখ রোহিনী থেকে দার্জিলিয়ের উপরে যাওয়ার গোটা রাস্তাটায় চক্কর দিয়ে এলাম। কার্সিয়াং-এর আগে এখনও একটা পোড়া গাড়ি চোখে পড়লেও, মুখ্যমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে রাস্তার দু'ধারের পোস্টারগুলি জানান দিচ্ছিল- দিন বদলেছে। কাছ থেকে দেখলাম, রোহিনীতে সুবাস ঘিসিং মার্গের উদ্বোধন করছেন মুখ্যমন্ত্রী, আর সেখানে উপস্থিত বিনয় তামাং। সেই বিনয় তামাং, যাকে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিদিন নিয়ম করে হুঙ্কার দিতে দেখতে অভ্যস্ত ছিলাম। একই সঙ্গে দেখলাম, সুবাস ঘিসিং-এর উত্তরসুরি মন সিং-কে। সময়ই বলে দেবে, মনের রাজনৈতিক ভবিষ্যত...




পাহাড় এখন। নিজস্ব ছবি।


রোহিনী থেকে ব্যাঁকা পথে পাহাড়ের দিকে যে রাস্তাটা উঠল, তার দুই ধারে অগণিত মানুষ...তাঁদের স্লোগানে আজ অভিনন্দিত হচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই মানুষগুলিই কিছুদিন আগে বলতেন, "চুট্টাই লে"। ঢিমে তালে পাহাড়ের বাঁক দিয়ে গাড়ির কনভয় সোনাদা পেড়িয়ে গেল। মনে পড়ল, এখানকার পুলিস বুথে কী চলেছিল সেই সময়। এরপর ঘুম, তবে এবারের ঘুম বড়ই শান্ত। অথচ এখানে কি ভয়ানক অশান্তি চাক্ষুস করেছি কয়েক মাস আগে। গাড়ি ঢুকল দার্জিলিং...উষ্ণ অভ্যর্থনায় আড়াই ঘণ্টার পথ মুখ্যমন্ত্রী পৌঁছলেন সাড়ে তিন ঘণ্টায়। কভয় থামল সেই ভানুভক্ত ভবনের সামনে, মুখ্যমন্ত্রী নামতেই সাধারণ মানুষ ঘিরে ধরল তাঁকে। সবকিছুর সঙ্গে বদলেছে ভানুভবনও, সেখানে এখন উড়ছে তৃণমূলের পতাকা। এরপর মুখ্যমন্ত্রী গেলেন রিচমন্ড, আর আমি খুঁজতে থাকলাম সেইসব জায়গা যেখানে একসময় বিরাজ করত শ্মসানের শূন্যতা।


চকবাজারের দোকানদারের বক্তব্য, "বনধ চাই না। হ্যাঁ, লড়েছিলাম আমরাও। তখন বুঝিনি, আমাদের রুজি দরকার, বনধ ভাল না।" ব্যস্ত চকবাজার দেখে আশ্বস্ত হলাম, না শান্তি রয়েছে, পরিবর্তন হয়েছে। মানুষগুলো একই আছে, শুধু হিংসা দিয়ে যে অবস্থা পরিবর্তন হবে না এবার তাঁরা বুঝতে পেরেছেন। আশা করা যায়, শান্তি থাকবে...এবার পাহাড় ভরবে পর্যটকে...