স্বরূপ দত্ত


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

হোয়াই দিস কোলাভেরি কোলাভেরি ডি!এই তো বছর তিন-চারেক আগের ঘটনা। এই একটা গান। ইন্টারনেটে ভাইরাল। ইউটিউবে সবাই দেখছেন, শুনছেন। উপভোগ করছেন। গুনগুন করছেন। শরীর দোলাচ্ছেন!আর জয়গান করছেন। কার? কার আবার! ভেঙ্কটেশ প্রভু কস্তুরি রাজার! কী হলো? চমকে উঠলেন নাকি? ভাবছেন, গুনগুন করে কতবার তো কোলাভেরি ডি আপনিও কতবার গেয়েছেন অথবা শুনেছেন। কই আপনি তো কখনও এরকম ভেঙ্কটেশ প্রভু কস্তুরি রাজার মতো খটোমটো নাম শোনেনি। অথবা, কোলাভেরি ডি-এর সঙ্গে এই নামের সম্পর্কটা কী? কী আবার। এই গানটা তো গেয়েইছেন ভেঙ্কটেশ প্রভু কস্তুরি রাজা। আরে হ্যাঁ, দীপক অধিকারীর মতোই ধনুশেরই নাম ওটা‌।


আজ আমার 'সাবজেক্ট' ধনুশ নন। তবে, 'সাবজেক্টে' ঢোকার আগে আরও একটা নাম করতে চাই। আর বালাকৃষ্ণান উরফে আর বাল্কি! পরিচালক ভদ্রলোককে কীভাবে ভুলবেন? চিনি কম যে পরিচালক বানাতে পারেন, তাঁর 'লেভেল' নতুন করে আর কী বলব! অবশ্য শুধুই চিনি কমই বা কেন? পা-এর কথা ভুলে গেলে চলবে? পা-এর মতো ফিল্ম কতজনকে আর বানাতে দেখেছেন? বিষয়টা নিয়ে বক্তব্য নেই। বক্তব্য ওরকম বিষয় নিয়ে কমার্শিয়াল ফিল্ম বানানো। কমার্শিয়াল বলে কমার্শিয়াল? অমিতাভ বচ্চন, অভিষেক বচ্চন আর বিদ্যা বালানকে কাস্ট করে ছবি বানাতে যে টাকা প্রয়োজন হয়, সেই টাকা প্রযোজক এই ধরনের বিষয়ের জন্য ঢালেন? 'কনভিন্স' করাতে হয়। হুম, এই কনভিন্সটাই আর বাল্কিদের মতো মানুষরা পারেন।


কেন বললাম, আগের কথাটা? কারণ, মানুষটা অমিতাভ বচ্চনের দারুণ ভক্ত। সে তো বোধহয় আপনিও। কিন্তু আপনার মতো ভক্ত থেকে লাভ কী অমিতাভের, টাকা ছাড়া? বাল্কিদের মতো ভক্তরা থাকলেই না, অমিতাভরা আরও মিথ হয়ে উঠতে পারেন সমাজের কাছে। তাই তো বাল্কি গতবছর বানিয়েছিলেন 'শমিতাভ'। আর দশটা ফ্লপ ফিল্ম হিসেবেই থেকে গিয়েছে শমিতাভ। কজনই বা আর হলে গিয়ে ওই সিনেমা দেখেছেন? তাই বক্স অফিস কালেকশনে শমিতাভকে ভুলে যেতে সময় লাগেনি কারও। কিন্তু ওই যে, সব জিনিসের হিসেব কী আর প্রাপ্তি আর অর্থ দিয়ে বিচার হয়? নাকি কোন জিনিস কত ভালো, সেটা কত চললো, তার উপরে নির্ভর করে কখনও! তাই শমিতাভ আপাতদৃষ্টিতে ফ্লপ সিনেমা। কিন্তু শমিতাভ এক ভক্তের গুরুদক্ষিণা কী হতে পারে, তারই নমুনা। শুধু আপনাকে দেখার সময় সেই অনুভবটা পেতে হবে।


অমিতাভ বচ্চন। তাঁর ওই ব্যারিটোন ভয়েজে শুধু আসমুদ্র হিমাচল নয়, গোটা বিশ্বই রোমাঞ্চিত হয়েছে কখনও না কখনও। সেই ব্যারিটোন ভয়েজকে উত্‍সর্গ করেই আস্ত একটা কমার্শিয়াল ফিল্ম বানিয়ে ফেলেছিলেন বাল্কি। আর বলিহারি তাঁর চিন্তাভাবনা। অমিতাভের গলার স্বরকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে, উত্‍কর্ষ বোঝাতে গিয়ে তিনি ওই ফিল্ম ব্যবহার করলেন ধনুশকে! ভুলতে পারবেন কখনও! হলফ করে বলতে পারি, শমিতাভ নামে কোনও সিনেমা রিলিজ না করলে, আম আদমির কখনও মনেও আসতো না, ধনুশের ঠোঁটে কথা বলছে আমিতাভের কণ্ঠস্বর! আরে চাইলে বাঘে-হরিণকে এক ঘাটে জল খাওয়ানো যায়। কিন্তু ধনুশের মুখ থেকে অমিতাভের গলার স্বর শোনা যায় নাকি! বাল্কি সেটাই করেছিলেন। আর্থিক দাম পাননি। কিন্তু মন তো কয়েকজনের জিতেছিলেনই। তাই তো শমিতাভ রিলিজের এক বছর পরও বললাম কথাগুলো।


এবার প্রশ্ন হতে পারে যে এতক্ষণ কেন আর বাল্কি, শমিতাভ, ধনুশ নিয়ে কথা চালাচ্ছি? এত ভূমিকা কীসের? আসলে বিশ্বাস করি, কোনওকিছু করার আগে একটা পটভূমি গড়ে নিতে হয়। তাই। ভারতীয় ক্রিকেটে এক 'ধনুশ'-কে দেখে ফেলেছি! হ্যাঁ, ইন্ডিয়ান ক্রিকেটের ধনুশ! কে তিনি? হার্দিক পাণ্ডিয়া। ছেলেটিকে আইপিএল থেকেই দেখেছি। ওর ওই দুটো ম্যাচ জেতানো ইনিংস মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে কে ভুলতে পারে! কিন্তু হার্দিককে নতুন করে ভালোলাগা শুরু হল, টিম ইন্ডিয়ার জার্সি গায়ে চাপানোর পর। অথবা ওর প্রতি ভালোবাসাটা বাড়ল।


হার্দিক পাণ্ডিয়া গুজরাটের ক্রিকেটার। অলরাউন্ডার। ডান হাতে ব্যাট করেন। ডান হাতে বল করেন। আর দুর্দান্ত ফিল্ডিংটা করেন। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে আইপিএলে খেলেন। এগুলো সবই আপনার জানা। কিন্তু হার্দিককে শুধু এই জানা জিনিসগুলে দিয়ে মাপার চেষ্টা করলাম না। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তিনটে টি২০ ম্যাচেই খেলতে দেখলাম হার্দিককে। পারফরম্যান্স এরকম-১) প্রথম ম্যাচে ৩৭ রানে ২ উইকেট। ২) দ্বিতীয় ম্যাচে ১৭ রানে ১ উইকেট। আর ৩) তৃতীয় ম্যাচে ২৪ রান দিয়ে কোনও উইকেট পাননি! এই যার পারফরম্যান্স তাঁকে নিয়ে এত শব্দ খরচা করছি! পরতায় পোষাবে? আপনিও হয়তো তাই ভাবছেন। আমার পোষালো। তাই তো বসলাম লিখতে। কারণগুলো এক এক করে বলি-


হার্দিক অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার আগে সাংবাদিক সম্মেলনে কয়েকটা কথা বলেছিলেন। সেগুলো এরকম। 'দেশকে আর নতুন অলরাউন্ডার খুঁজতে হবে না। কারণ, আমি এসে গিয়েছি তো!এরপর বললেন, 'যুবরাজের ছ'বলে ছটা ছক্কার রেকর্ড আমি ভেঙে দেব যেকোনওদিন'! আরও অনেক কথাই বলেছেন এই স্বল্প সময়ে হার্দিক। কিন্তু বেছে নিলাম এই দুটোই। ভাবছিলাম, বলেকী ছেলেটা! এত আত্মবিশ্বাস? অথবা এত অহংকার? পরে মনে হল, যেটাই হোক, একটু দেখব-ঠিক কোন পর্যন্ত যায় হার্দিক। দেখার অপেক্ষায় থাকব। যে সময় এই উত্তর পাওয়ার তখন মিলিয়ে নেব। কিন্তু আপাতত হার্দিককে দেখে যা বুঝলাম- এই ছেলেটার দম আছে। এই ছেলেটা ক্রিকেটের সবুজ মাঠের শ্রীসন্থ বা ফিল্মের রুপোলি পর্দার ধনুশ। কেন এই দুটো নাম? কারণ, যে কদিন থাকবেন, সেইকদিন স্টার হয়েই থাকবেন। হার্দিক অ্যাভারেজ নন। হার্দিক হৃদয় দিয়ে কথা বলেন। হৃদয় দিয়ে হাসেন। আর হ্যাঁ, তিনি হৃদয় দিয়েই খেলাটা উপভোগ করতে করতে খেলেন। ওর সেলিব্রেশন দেখে মনে হয়, ওটা তো তিনি নন, আমাদেরই কেউ।


ধনুশ আপনার পাড়ার পাশের বাড়ির ছেলে হলে, মেয়েটি হয়তো ফিরেও তাকাতো না। সেই ধনুশ রীতিমতো অ্যাকশন হিরো। ধনুশ কেমন যেন পাড়ার সাধারণ সেই ছেলেটার মতো। যে পাড়ার সবথেকে বড়লোকের মেয়েটাকেও প্রেম করাতে বাধ্য করে। আপনি ওপাশ থেকে যত পয়েন্ট দেওয়ার দিন। সবকটা মন দিয়ে শুনব। বুঝব এবং ভাববো। কিন্তু সবশেষে বলব, রজনীকান্তের ছেলে হওয়াতে কোনও ক্রেডিট নেই। কিন্তু রজনীকান্তের জামাই হওয়ার ক্রেডিটটা ছেলের পাশে বসিয়ে গুলিয়ে ফেলবেন না। অমিতাভের ছেলে অভিষেক আর রজনীকান্তের জামাই ধনুশ এই দুটোর মধ্যে পার্থক্য অনে...........ক।


ধনুশ বলিউডে হিট নন। রাঞ্ঝনা চলেনি। শমিতাভ আরও ফ্লপ। কিন্তু ধনুশ সাউথে আজও ধনুশ। কী অভিনয়ে কী ক্যারিশমায়। আর ধনুশ বড় সাহসি বোধহয়। নাহলে কেউ অমিতাভের 'গলায় গলা গলায়!' এ তো রামের জুতোয় ভরতের পা গলানোর থেকেও দুঃসাহসের। আমাদের ভারতীয় দলের নতুন সদস্য হার্দিকও তেমনই। প্রথম তিন ম্যাচে অ্যাভারেজ দেখাচ্ছে।পাশের বুমরাহকে অনেক বেশি ম্যাচ উইনার মনে হচ্ছে। কিন্তু হার্দিককে হৃদয় দিয়ে একটু সময় দিন। হার্দিক হারাতে আসেনি। হৃদয়টা জিততে এসেছে। ওর মধ্যে জেদের আগুন অনেক। ওর আগ্রাসন দেখলেই বুঝবেন, বিরাট কোহলি ছাড়া কোনও ভারতীয় ক্রিকেটারের এমন নেই। তার উপর মানুষটা বলছেন, কী! বলছেন, যুবরাজের ছয় ছক্কার রেকর্ড স্পর্শ করবেন বা ভেঙে দেবেন? এই যুবরাজের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এন্ট্রির সময় তাঁকে বলা হত, ভারতীয় ক্রিকেটের ঋত্বিক রোশন। আজ হার্দিককে তাহলে কেন বলব না, তিনিই ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন ধনুশ? বিশেষে করে তাঁর সঙ্গে দেখাতে অনেক মিল রয়েছে হার্দিকের।


এ ছেলে যে কদিনই থাকুক, রাজা হয়েই থাকবে। বড় বাবার ছেলে নয়, বড়লোকের জামাই হতে চলেছে! কেমন যেন মনে হচ্ছে, এই হার্দিক অনেক ম্যাচে টিম ইন্ডিয়াকে একা উতরে দেবেন। হুম, মন থেকে বলছি। কারণ, হার্দিককে আইপিএলে খুব ভালো ফলো করেছি। দেশের জার্সি গায়ে সবে তিনটে ম্যাচ খেললেন। তিরিশ খেলে ফেললে, তাঁকে নিয়ে অনেক কথা লিখবে সবাই। অনেক আলোচনায় অংশ নিতে হবে আপনাকেও। ইন্ডিয়ান ক্রিকেটেও 'কোলাভেরি H' এসে গিয়েছেন। সামনের দিনগুলোয় তাঁর সুরেই সুর মেলাতে হবে বলে মনে হচ্ছে। যে কটা দিন থাকবেন, হার্দিক হৃদয় জিতেই থাকবেন। মন তাই বলছে। দেখে নেবেন।