স্বরূপ দত্ত


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

আজ ২৭ আগস্ট। জানি না, এই বিশেষ দিনটায় পৃথিবীতে ঠিক কী হয়।বছরের পর বছর ধরে এই দিনে পৃথিবীতে আসেন যাঁরা, তাঁরা হয়ে ওঠেন একেক জন প্রবাদপ্রতিম। দিকপাল। কিংবদন্তি। আজই তো জন্মদিন কলম্বিয়ার গোলকিপার রেনে হিগুয়েতার। গোলকিপার তো এই পৃথিবীতে রয়েছে কয়েক লাখ বা কয়েক কোটি। কিন্তু রেনে হিগুয়েতারা কি আর রোজ জন্মান? আজই জন্মদিন বলিউড অ্যাকট্রেস নেহা ধুপিয়ার। তিনি মারাত্মক কিছু নন বলিউডের। কিন্তু এ দেশের বলিউডের ইতিহাসে চিরকাল সেক্স সিম্বল হিসেবে থাকবে নেহা ধুপিয়ার নাম। আজই জন্মদিন গ্রেট খালিরও। ভারতীয় মানে লিকলিকে, খর্বকায়, এই ধারণাটাই বদলে দিয়েছেন তিনি। প্রথম ভারতীয় হিসেবে খেলা শুরু করেছেন ডব্লুডব্লুই-তে। ২৭ আগস্ট জন্মদিনের তালিকা করলে, সেখানে পাবেন আরও এমন অনেক নাম, যে নামগুলো গোটা পৃথিবীকে জানান দিয়েছেন যে, তাঁরা এসেছিলেন এই সমাজকে শাসন করতে।


সবশেষে নাম নেবো তাঁর। যাঁকে নিয়ে এই লেখাটা। হ্যাঁ, আজ জন্মদিন স্যর ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যানের। ক্রিকেট খেলাটা যতদিন এই পৃথিবীতে থাকবে, লোকে স্যর ডন ব্র্যাডম্যানের নামটাও শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারণ করবেন। তিনি যে এমনই কিংবদন্তি। তাঁকে নিয়ে কী আর গল্পের শেষ আছে! হাজারো গল্প। তারই দুই-একটা আজ আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করা। যেগুলো পড়তে আপনার শুধু ভালো লাগবে তাই নয়, আপনি ভাবার রসদ পাবেন, ব্র্যাডম্যান সত্যিই মানুষ ছিলেন তো!


১) ১৯০৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার বাউরালে জন্মান স্যর ডন। খুব ছেলেবেলা থেকেই ক্রিকেট খেলতে ভালোবাসতেন। কিন্তু কী দিয়ে ক্রিকেট খেলতেন তিনি জানেন? আর তো কোনও সঙ্গী সবসময় পাওয়া যেত না। তাই স্যর ডন বাড়ির পুরনো একটা জলের ট্যাঙ্কে একটা গল্ফ বল ছুঁড়ে দিতেন। সেই বল ফিরে এলে তবে, সেটায় ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে মারতেন। সেইজন্যই বোধহয় তাঁর রিফ্লেক্স এত ভালো ছিল।


২) স্যর ডন জীবনে ৫২ টেস্ট খেলে ৬৯৯৬ রান করেছিলেন। আর তাঁর সেই বিখ্যাত টেস্ট গড় আজও কারও ভাঙা তো দূর, নাগালেরই বাইরে। মানুষটার টেস্ট ব্যাটিং গড় কিনা ৯৯.৯৪! শেষ টেস্ট ইনিংসে কেবল মাত্র ৪টে রান করতে পারলেই তাঁর টেস্ট গড় হত ১০০! কিন্তু লোকে বলে শেষ টেস্টে স্যর ডনও এত আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন যে, তাঁর চোখে জল এসে গিয়েছিল। তাই ০ রানে আউট হয়ে যান তিনি! এমনও বলা হয়, যদি বোলার জানতেন, তাহলে তিনিও স্যর ডনকে আউট করতেন না ৪ রান করার আগে! সত্যিই মানুষকে নিয়ে কত রূপকথা তৈরি হয়!


৩) স্যর ডন ৫২ টেস্টে ২৯টি সেঞ্চুরি করেছিলেন। সর্বোচ্চ টেস্ট রান ৩৩৪। যেটা নাকি ভাঙার সুযোগ পেয়েও ভাঙেননি আর এক অসি অধিনায়ক মার্ক টেলর! তিনি বলেছিলেন, স্যরকে টপকাতে চাই না। বরং, স্যরের সঙ্গে নাম উচ্চারিত হবে চিরকাল, এই সূযোগ কেউ ছাড়ে! একটা মানুষ চলে যাওয়ার পরও একটা গোটা জাতিকে কতটা প্রভাবিত করে যেতে পারেন, এটা তার উদাহরণ হতে পারে। স্যর ডন ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটেও করেছিলেন ২৮,০৬৭ রান। আর সেখানে গড় ছিল ৯৫.১৪! এমন মানুষের স্কুলজীবনে যে প্রিয় বিষয় অঙ্কই হবে, সেটা কী আর বলে দিতে হয়!


৪) স্যর ডন গোটা জীবনে শুধু ক্রিকেট খেলেছেন, আর কিছু করেননি ভাবলে ভুল হবে। কারণ, তিনি যেমন ব্যাটিংয়ের জন্যই বিখ্যাত, তেমনই তিনি বলও করেছেন। এবং তাঁর নামে দুটো টেস্ট উইকেটও রয়েছে! ঠিক তেমনই স্যর ডন জীবনে দুটো গানও রেকর্ডিং করেছিলেন। বড় ভালো পিয়োনা বাজাতেন। নিজে গানের সুর করতেন। 'এভরি ডে ইজ রেনবো ডে ফর মি' তো তাঁর গাওয়া বিখ্যাত গান। আসলে বলবেনই বা না কেন এমন কথা? ক্রিকেট খেলায় নড়বড়ে নব্বই তো খুব প্রাসঙ্গিক কথা। কিন্তু স্যর ডন কখনও নব্বইয়ের ঘরে আউট হননি!


৫) স্যর ডনের প্রভাব বুঝতে গেলে আরও একটা তথ্য দেওয়া দরকার। এবিসি-র পিন কোড জানেন কত? এবিসি-র পিন কোড নম্বর হল ৯৯৯৪! কারণ, ওটাই যে স্যর ডনের টেস্ট গড়! সেই সংখ্যাটাকে সম্মান জানাতেই এমন! এটা পড়ে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল না? কাঁটা দেবে আরও একটা কথা শুনলে। স্যর ডনের মৃতদেহটা ইলেকট্রিক চুল্লিতে গিয়েছিল দু'নম্বরে! সারা জীবন এক নম্বর থাকা মানুষটার প্রাণহীন শরীরটা দু'নম্বর চুল্লির ভিতরে যাবে না তো, কোথায় যাবে!


৬) স্যর ডনের প্রভাব জনমানসে কতটা ছিল বা আছে, সে তো এতক্ষণে বোঝাই গিয়েছে। কিন্তু এটা পড়লে অবাক হবেন যে, স্যর ডন সত্যিই মানুষ ছিলেন তো? কারণ, নেলসন ম্যন্ডেলা প্রায় সারাজীবন জেলের কুঠুরিতে কাটিয়ে ছিলেন। তিনি জেল থেকে বাইরে আসার পর প্রথমবার যে কথাটা বলেছিলেন, সেটা হল, - 'স্যর ডন এখনও বেঁচে আছেন তো?'


৭) নিজেকে মানুষের কাছে স্মরণীয় রাখতে চান নিশ্চয়ই? বেঁচে থাকাকালীন এমনই প্রশ্ন উড়ে এসেছিল তাঁর কাছে। স্যর ডন বলেছিলেন, 'অবশ্যই মানুষের মনে থাকতে চাই। তবে, সেটা শুধু ক্রিকেটের কারণে নয়।' এমন কথা স্যর ডন বলেই হয়তো বলতে পেরেছিলেন। মানুষটা গাড়ি চালাতে বড় ভালোবাসতেন। আর রূপকথার সেরাটা তো এই যে, শুধুমাত্র তাঁকে আটকানোর জন্য একটা গোটা সিরিজ হয়ে উঠেছে ঐতিহাসিক। বডিলাইন সিরিজ। এমনটা ক্রিকেট মাঠে আর কারও জন্য কখনও হয়নি। একটা লোক সত্যিই হয়ে উঠেছেন ক্রিকেটের থেকেও বড়। লার্জার দ্যান লাইফের উদাহরণ দিতে গেলে এই তিনটে শব্দ বলবেন-স্যর ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান।


আরও পড়ুন মায়ের জন্মদিনে মায়ের সম্পর্কে সাত-সত্য