স্বরূপ দত্ত


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

আজ ফ্রেন্ডশিপ ডে। সোজা বাংলায় বন্ধুত্ব দিবস। ভাবতেই ভালো লাগে। মা আর সন্তান। আমার বিচারে মানুষজন্মের সেরা সম্পর্ক তো এটাই। যে সম্পর্কটায় অন্তত মানুষের কোনও কৃতিত্ব নেই। এটা ঈশ্বরের সৃষ্টি অথবা প্রকৃতির কিংবা বিজ্ঞানের। কিন্তু এরপর যদি কোনও সম্পর্ক থাকে, সেটা অবশ্যই বন্ধুত্ব। এই সম্পর্কটার মাপকাঠি কী? অনেকক্ষণ ভাবলাম। আসলে বোঝার চেষ্টা করছিলাম, কী সমীকরণে ভালো বন্ধুত্ব হতে পারে। অথবা, ভালো বন্ধুত্বের সম্পর্কের নিয়ম কী? অনেক ভেবে চিন্তে যে উত্তর এল, তা এরকম - নিয়ম ছাড়া সম্পর্কটাই তো বন্ধুত্ব। কোনও রেফারি নেই। আম্পায়ার নেই। প্রশাসনের নাক গলানো নেই। ইউনিফর্মের দোহাই নেই। কর্পোরেট সংস্কৃতির বিষদাঁত নেই। শৃঙ্খলতার বালাই নেই। সব নেই আর নেই। দুনিয়ার 'নেগেটিভ' জিনিস একজায়গায় এলে তবেই না এমন বন্ধুত্ব তৈরি হয়। আসলে, 'বন্ধুর' শব্দটায় তো অনেক কাঠিন্য। তাই বন্ধুও বা অত সহজ-সরল হবে কেন!


নিয়ম ছাড়া এলোপাথারি সম্পর্কটা তাই এত এনজয় করার। যে সম্পর্কে ঠকে মজা, যে সম্পর্কে মার খেয়ে মজা, যে সম্পর্কে হেরে মজা, যে সম্পর্কে পস্তিয়ে মজা, যে সম্পর্কে মিস করে মজা, যে সম্পর্কে ভাগ করে নিতে মজা, যে সম্পর্কে আমার থেকে ওর বা তোর বলে বেশি মজা সেই সম্পর্ককে সেলাম। সেই ছেলেবলায় শেখা অক্সিজেনের সম্পর্কের মতো। দুটো 'o' এক জায়গায় মিশলে তবেই না অক্সিজেন বা 'O2'। ঠিক তেমনই, দুটো প্রাণ একজায়গায় এসে পড়লেই নতুন একটা বন্ধুর জন্ম!


আজ ছেলেবেলা থেকে আজ পর্যন্ত বন্ধুদের নাম মনে করার চেষ্টা করলাম। বিরাট তালিকা তৈরি হল। ভালো লাগলো। হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একপ্রস্থ জমিয়ে আড্ডাও হল, শুধু মনে মনেই। তারপর শুরু করলাম প্রাণ না থাকা বন্ধুদের কথা ভাবা। দারুণ লাগলো। তাঁদেরই একটা তালিকাও করলাম। মানে প্রাণহীন সেরা ১০ বন্ধু। আপনাদের সঙ্গেও শেয়ার করি। দেখুন তো, আপনাদের সঙ্গে মেলে কিনা!


১) মা (প্রাণ থাকুক অথবা না থাকুক, মায়ের থেকে ভালো বন্ধু হিসেবে কোনও শব্দ লেখার মুরোদ আমার নেই)
২) গান (১৯৪০ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত/সব ভাষার/ তবে, বেশিটাই জুড়ে থাকেন সলিল চৌধুরি)
৩) বই (বর্ণপরিচয় থেকে আজকের পড়া প্রত্যেকটা বই)
৪) রেডিও (আমিন সায়ানি আর ওই টেলিপ্যাথির পরিচয় পাওয়া প্রথম যন্ত্রটা। না হলে, প্রিয় গান কীভাবে শোনায় ওরা আকাশবাণী থেকে!)
৫) টিভি (কে হতে চেয়েছে চালাক! চালাকদের থেকে বাঁচতে ওই বোকা বাক্সটাই আশ্রয় দিয়ে বড় করে তুলেছে)
৬) খবরের কাগজ (সব শিখিয়েছে এই বন্ধুই, জীবনে সব ছাড়া যাবে, কিন্তু খবর কাগজ! উফ্)
৭) সিনেমা (কল্পনার রুপোলি আলো আর রুপোলি পর্দার মিলমিশে যে এমনভাবে নায়ক হওয়ার স্বপ্ন আর কেউ দেখায়নি)
৮) ম্যাজিক (গিলি গিলি গে, পৃথিবীর সেরা ভরসার শব্দ। বিপদে পড়লেই আজও আউরাই মনে মনে। ঠিক মিরাকল ঘটবে এই ভরসায়)
৯) চা (জেগে থাকাই যদি বেঁচে থাকা হয়, তাহলে চায়ের থেকে বেশ ঘুমকে তাড়ায়নি কেউ)
১০) সিগারেট (আমি, ওভাবেই জ্বলি, ঠিক শেষ হয়ে যাব একদিন এক টুকরো ধোঁয়া হয়ে মিলিয়ে যাবো চিতার মাঝে/ আপনি খাবেন না প্লিজ। এটা ক্ষতিকর/ আসলে আমার বন্ধু তাই)


এই তালিকার কী কোনও শেষ আছে! বাকি বন্ধুরা কত রেগে যাবে। যাবে তো যাক! তবে আর ওরা আমার বন্ধু কীসের? ঠিক রাগ হলেও এসে বুকে জড়িয়ে নেবে। এটুকু বিশ্বাস করাই যায় ওদের। এটুকু অভিমান থাকুকই না হয় ওদের। সব শেষে একটা বন্ধুত্বের সম্পর্কের উদাহরণ দিতে চাই। এই পৃথিবীর সেরা বন্ধু কারা? এই প্রশ্নে অনেক ভেবেছি মনে মনে। কত-কত নাম এসেছে, মনে মনে। আপনি একটু ভাবুন, দেখুন কত নাম ভিড় জমাবে মনের ভিতরে। কিন্তু একটাই বন্ধুত্বের সম্পর্ক আমার চাই, যেটাই বিশ্বের সেরা বন্ধুত্বের সম্পর্ক হিসেবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে। আর সেটা আমি পেয়েও গেলাম। আমি আর মা-এর পরে এ পৃথিবীর সেরা বন্ধু জুটির নাম 'টম অ্যান্ড জেরি'! হ্যাঁ, অনেক ভেবেই এই নামদুটোর কথা বলা। এমন বন্ধুর সম্পর্ক আমি অন্তত গোটা জীবনে দেখিনি। এমন এলোপাথারি, নিয়ম না মানা, হাড় জ্বালানো, প্রাণ ওষ্ঠাগত করা সম্পর্কটাই তো বন্ধুত্ব। আরও ভালো করে বুঝিয়ে বলি সোজাভাবে। শুধু টম বললে, অস্তিত্ব পান কিছুর? শুধু জেরি বললে, চোখের সামনে তেমন কিছু ভিড় করে আসে, আদৌ কি? না। অথচ, দুজনকে পাশাপাশি একবার বসিয়ে দেখুন, 'টম অ্যান্ড জেরি'। আমার মনে হয় না, এর থেকে ভালো বন্ধুত্বের উদাহরণ এই পৃথিবীতে আছে কিনা। ওরা দুজন তো নিজেদের মধ্যে কোনও একজনকে না দেখলে থাকতেই পারে না। আর কী মজা। গোটা পৃথিবীও ওদের কখনও একা একা মেনে নেয়নি! সাবাশ বন্ধুত্ব। একটা ইঁদুর আর একটা বিড়াল কত শেখালো আমাদের। আমরা হেসেই গেলাম। আর বন্ধুত্ব ভেঙে সম্পর্কটা বড্ড 'বন্ধুর' করতে শিখে গেলাম। তবুও, প্রার্থনা, বন্ধুত্ব থাক চিরকাল। যেখানে থাকবে হয়তো বীরু। চলে গিয়েও বন্ধুত্বের জয় থাকবে 'শোলে' হয়ে চিরকাল।  


আরও পড়ুন আমেরিকা, ইংল্যান্ড, রাশিয়াকে পিছনে ফেলে সবার উপরে ভারত!