স্বরূপ দত্ত


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

দেখতে দেখতে ২২ বছর হয়ে গিয়েছে। মুক্তি পেয়েছিল ছবিটা। ঋতুপর্ণ ঘোষের পরিচালনায়। শুধু আমার কেন, অনেক মানুষেরই ভালো লেগেছিল ছবিটা। ২২ বছর কেটে গিয়েছে। কিন্তু ভুলিনি ছবিটার কথা। ঠিক যেভাবে, পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার পরও ভুলে যাইনি ঋতুপর্ণ ঘোষকে। ও, এতক্ষণ ছবির নামটাই তো বলিনি। '১৯-এ এপ্রিল'। সেই '৯৪ সাল থেকে আমার মস্তিষ্কে অন্তত ১৯ মানে এপ্রিল। ২২ বছরের অভ্যাসটার 'পরিবর্তন' হল এবার। '১৯ মে'। মনকে তৈরি করা শুরু করেছিলাম, ১৯ শুধু এপ্রিলের একার নয়। ২০১৬-র পর থেকে ইতিহাস হয়তো বা মনে রাখবে ১৯ মে -কেও।


ভোটের ফল ঘোষণার পরও গতকাল রাতে আর বাড়ি ফিরতে মন চাইলো না। মনে হল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক কেরিয়ারের সবথেকে উজ্জ্বল দিন অথবা এ রাজ্যের বাম জমানার সবথেকে অন্ধকার দিনটায় গোটা রাজ্যটায় এক চক্কর নাই বা লাগাতে পারলাম। কিন্তু একটু চেষ্টা করলে, শহরটায় তো মাঝ রাতে একটা পাক লাগানোই যায়। রাতের তিলোত্তমার প্রাণস্পন্দন, অনুভূতি টের পাওয়া যায়। সুযোগ হাতছাড়া করিনি। তাই রাত ১ টা বাজতেই সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ, চাঁদনি চক হয়ে ধর্মতলার মোড়। ডেকার্স লেন। রাজভবন। তারপর সোজা লেনিনের বুকের উপর দিয়ে মৌলালি। পথের বাঁক একের পর এক এগোতে থাকল, আর সেই পথে কাল রাতে একবার আলিমুদ্দিন দেখা যাবে না! তাও পেরিয়ে মল্লিক বাজার, পার্ক সার্কাস হয়ে এন্টালি, শিয়ালদহ, বৌ বাজার, কলেজ স্ট্রিট...এগিয়ে চলা।


সব শেষে ২০-মের নতুন ভোর দেখে নেওয়া এক সুযোগে। আর তারপর এই রাজ্যের এক নাগরিক হিসেবে হাজারো অনুভূতি বুকের 'ডাস্টবিনে' জমা হওয়া। সব শেষে উপচে পড়া ঠোঙা দুটো আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করা।


বিষয় - সম্পর্কের পথে বাঁক আসলে, পথিকের হাতে যে অপশন একটাই। দুকূল সেখানে দেখার শুধু। পাওয়ার একটাই। হয় সৌভাগ্য অথবা নিজেকে সান্ত্বনা। এবার এই বিষয়ে দুটো ছোট্ট মনে হওয়া আপনাদেরকে বলে ফেলা। ভেবে দেখুন তো.....


১) আজকের পর মমতা অথবা তৃণমূল সরকার - বিষয় এটা বলেও মাথা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা তৃণমূল সরিয়ে 'শাসক' ভাবলে সুবিধা হবে। আচ্ছা ধারাবাহিক লড়াইয়ের পথে জয় অথবা বড় জয় কিংবা ধারাবাহিক জয় পেতে থাকলে, কী সম্পর্কে চির ধরে না? শাসক কি দিন-দিন আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় না, পরিস্থিতির নিয়মে? জয় আমার, ভালো সময় আমার। আমার পাশে সবাই। তখন আর আমার সময় কোথায় লোকের পাশে থাকার? আমার আজ এত বেশি উজ্জ্বল, এত বেশি আনন্দের, এত বেশি ভালোলাগার যে, আমি কি ক্রমেই সরে যাব না, সাধারণের থেকে? যেভাবে ইতিহাসের সব ধারাবাহিক জয়ী শাসকরা মানুষ থেকে সরে গিয়েছিলেন, ২০-মের ভোর কি তবে, সেই পথেই আমাদের আগামীর গাড়ি ছোটাবে? ওই রাস্তায় চলতে চলতে, চারপাশটা দেখতে দেখতে, আমাদের কি মনে হবে না, সবই যে আমাদের বড় চেনা। এই পথে হেঁটে হেঁটে কখনও ক্লান্ত হইনি আমরা? বুঝবেন একটু....


২) আজকের পর বামেরা - এই বিষয়েও কথা বলতে গেলে আপনি মাথা থেকে বাম শব্দটি সরিয়ে দিয়ে 'বিরোধী' ভাবলে সুবিধা হবে। এই বিরোধী তো যে সে বিরোধী নয়। ৩৪-এর ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস যত আকর্ষণই হোক, রোজ কাছে পেয়ে এতটাই পুরোনো যে, মানুষের ভুলে যেতে সময় লাগেনি। তাই তো ২০১৬-য় এসে ৩৪-বছরের গর্ব ৩২ এ টিমটিম করছে। এবার কী করবেন তাঁরা। মানুষ তাঁদের দু-দুবার সরিয়েছে। এবার বিরোধীরা মানুষের কাছে যেতেও তো একটু জড়োসড়ো থাকবেন। তাহলে মানে কী দাঁড়াবে?সেই সম্পর্কের পথে এসে পড়া বাঁক। আর হারিয়ে যাওয়া গোলকধাঁধায় বুকের মাঝে শুধু স্মৃতি।


এটাই অনুভব। হার অথবা জিত। চলার পথে, দুটোই সম্পর্কের মাঝে ডিভাইডার হয়ে দাঁড়ায়। না মানলে, বড় ধাক্কা যে খেতেই হবে পথচারীকে। ১৯ মে-র ওই নীল আলোর রাতটা এটাই বুঝিয়ে গেল। সেই থোড় বড়ি খাড়া পথটা যেন না হয়ে যায়। পথের দুপাশটা দেখতে দেখতে চোখ-মন-প্রাণ যেন ভরে ওঠে। কিন্তু কথাটা বলেও মনে হল, ধুর এ পথ কোনওদিন শেষ না হলেও একই থাকবে।