ভোটে টুকলি করা নেতারা দিব্যি বাচ্চাগুলোকে শেখাবে টুকলি করা অপরাধ!
স্বরূপ দত্ত
মাত্র গতকালই শেষ হল এই রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন। ভোটের ফল বেরোবে ১৯ মে। তার মানে, পরীক্ষার ফল জানতে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে আর কয়েকটা দিন। এই মাঝের কয়েকটা দিন বরং একটু আলোচনা করি সেগুলো নিয়ে, যেগুলো এই নির্বাচনের মধ্যে থেকে মনে হল। আচ্ছা, নির্বাচন মানে তো অনেকটা এইরকম যে, একটি দল তাঁরা তাঁদের পছন্দমতো কোনও একজনকে প্রার্থী করল। এবার সেই মানুষের এবং দলের কাছেও পরীক্ষার বিষয় যে, তাঁকে বা তাঁর দলের সেই প্রার্থীকে সাধারণ মানুষ কেমন হিসেবে দেখছে। সাধারণ মানুষ মানে ভোটাররা কী তাঁকে পছন্দ করল? নাকি তাঁরা পছন্দ করল না। এই তো মোদ্দা কথা। মানে, নির্বাচনে ভোট প্রার্থীকে আসলে একটা পরীক্ষা দিতে হয়।
তা আমরা কী দেখলাম এই 'ধেড়েদের' পরীক্ষায়? দেখলাম, এই প্রার্থীদের হয়ে টুকলি দেওয়ার লোকের কোনও অভাব অন্তত নেই। এই টুকলি করতে প্রার্থীরও কোনও গায়ে লাগে না। বরং, টুকলি করতে না পারলে, প্রার্থীরাও রেগে আগুন! যেন টুকলি করা এঁদের 'জন্মগত অধিকার'! বুড়োই বলি অথবা বয়স্ক মানুষ, মোট কথা এঁরা তো কেউ বাচ্চা ছেলে নন। এঁরা সমাজে প্রতিষ্ঠিত। নিজেদের জীবনেও সম্ভাবত প্রতিষ্ঠিত। এঁরা এখন মানুষকে নানা বিষয়ে শেখান। আমাদের সবাইকে 'নেতৃত্ব' দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। ভালো কথা...
এবার আসি রাজ্যের মাধ্যমিক পরীক্ষা বা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার কথায়। স্কুল কলেজের যেকোনও পরীক্ষার কথাই ধরতে পারেন আপনি। তা সেই পরীক্ষাগুলোতে দেখছি, ইদানিং টুকলি করার প্রবণতা প্রচণ্ড বেড়ে গিয়েছ। স্বীকার করছেন সমাজতাত্বিকরাও। মানছেন শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা সকলেই। বলছেন, এটা আসলে সামাজিক অধঃপতন।
আর এইখানেই আমার বক্তব্য। যদি চোখের সামনে বুড়ো বা চুল সাদা হয়ে যাওয়া মানুষগুলো নিজের জয়ের জন্য এভাবে টুকলি (রিগিং বা ছাপ্পা) করতে পারেন, তাহলে আর ওই বাচ্চা ছেলেমেয়েদের টুকলি করা বন্ধ হবে কীভাবে! এমন মোটেই বলতে চাইছি না যে, ভোট পরীক্ষায় টুকলি এই ২০১৬-তে এসে প্রথমবার হল অথবা ২০১১ সালে প্রথম হয়েছিল। সকলেই জানেন যে, এই টুকলি করে মানুষের নম্বরে জিতে এসেছি বলার লোক সেদিনও ছিলেন, আজও আছেন আবার কালকেও থাকবেন। রক্তে আমাদের টুকলি তো ওই সাদা পোশাক পড়া মানুষগুলোই শিখিয়ে গিয়েছেন।এখনও শেখাচ্ছেন। পরীক্ষায় কড়া গার্ড পড়লে টুকলিবাজ ছাত্র-ছাত্রীদের মোটেই পছন্দ হয় না। নির্বাচনেও দেখলাম, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে নিয়ে কত অপছন্দ পরীক্ষার্থীদের!
সাধারণ মানুষও এগুলোর সঙ্গে দিব্যি মানিয়ে নিয়েছেন! আমার নির্বাচিত লোকটা কোথাও দু-চারটে টুকলি করেছে, এটা জানলে আমাদের ভালো লাগা আসে? অথচ, সব জেনেশুনে, বুঝেও আমরা টুকলি করে পরীক্ষায় পাশ করাদের বীরের সম্মান দিয়ে এসেছি। যাক গে যাক। আমার কী। সমাজ তো আর আপনার কথায় চলবে না। সে চলবে তার নিজের নিয়মে। লেখার শেষে তাই একটা বিনীত অনুরোধ। এবার থেকে তাহলে আর পরীক্ষার সময় টুকলি করলে ওই বাচ্চা, নাবালক ছেলে-মেয়েগুলোকে ধরতে যাবেন না। ওটা দ্বিচারিতা হবে। অথবা নিজেরা অনেকবেশি অপরাধ করে ছোটদের লঘু পাপে গুরুদণ্ড দেওয়া হবে। অথবা নিজে না মেনে অযথা নাক গলানো হবে।