অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

বেশিদিন নয়, মাত্র ১০ মাস আগেরই ঘটনা। ২১ বছরের মেয়েটি একা দাঁড়িয়ে রয়েছেন সেন্টার কোর্টে। পাশ থেকে একজন বলে চলেছেন, 'চিত্‍কার না করতে পারলে মিলবে না কানাকড়িও।' আর তাঁর চারিদিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে অন্তত ৫০জন। প্রত্যেকের মনে একটাই প্রশ্ন, 'কী হয়, কী হয়?' কিন্তু, তিনি জানতেন...হবেই। কারণ তাঁর অভিধানে 'হবে না' শব্দটি বোধহয় প্রথম থেকেই নেই। তাই একদিন যেমন তাঁর হয়েছে... হচ্ছে তাঁর দেখানো পথের অনুসরণকাররীদেরও। অবশেষে সেই দিনই হল! আর হয়েছিল বলেই ২০১৬-র রিও অলিম্পিকের ব্যাডমিন্টন ফাইনালে জ্বলে উঠলেন ভারতীয় শাটলার পি ভি সিন্ধু। জন্ম নিলেন এক নতুন তারকা। অলিম্পিকের আসরে রচনা হল এক নতুন ইতিহাস। আর যিনি এই গোটা কর্মযজ্ঞের পিছনে ছিলেন, তিনি আর কেউ নন কোচ পুলেল্লা গোপীচাঁদ। প্রিয় ছাত্রছাত্রীদের কাছে যাঁর পরিচয়, 'গোপী স্যার'। 'দ্যা ম্যান বিহাইন্ড দ্যা শো!'


সেদিনের সেই ঘটনার সাক্ষী ছিলেন সিন্ধুর বাবা পি ভি রমনও। এক সময় এশিয়ান গেমস-এ ব্রোঞ্জ জয়ী ভলিবল টিমের সদস্য। আজ রিওতে মেয়ের সাফল্যের পর হঠাত্‍ই সেদিনের ঘটনাটি মনে পড়ে গেল তার। বলে উঠলেন, "মেয়ে বরাবরই শান্ত প্রকৃতির। সেদিন যদি ওকে ওই পরিস্থিতির মধ্যে না ফেলতেন গোপীচাঁদ, তাহলে হয়তো আজকের সিন্ধুকে পাওয়া-ই যেত না।"


আজ সিন্ধু অলিম্পিকে রুপো জিতেছেন। ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকের ব্যাডমিন্টনে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন সাইনা নেহয়াল। কিন্তু, এই কৃতীদের সাইডলাইন থেকে যে মানুষটি জেতার জন্য অবিরাম ফুয়েল সাপ্লাই করে চলেছেন তাঁর কথা কতজনই বা বলছেন?


পুলেল্লা গোঁপীচাদ। সিন্ধুর মতো তিনিও অত্যন্ত শান্ত স্বভাবের। নিজের ক্যারিয়ার তৈরি করার আগেই তাঁকে শুনতে হয়েছিল, 'শান্ত স্বভাবের ছেলে তো, টিকতে পারবে না। বেশিদিন এগোবে না।' আজ তিনি শুধু একা এগিয়ে যাননি...সঙ্গে নিয়ে চলেছেন আরও অনেককে। তৈরি করে চলেছেন একের পর এক কৃতীকে। তাঁর ব্যাডমিন্টন অ্যাকাডেমি থেকে উঠে এসেছে পরের পর শাটলার। বিশ্ব ব্যাডমিন্টন সার্কিটে আজ যাঁরা নিজেরাই এক একটি প্রতিষ্ঠান।


কিন্তু, তিনি? গত শতাব্দীর ৯০-এর দশকে যার সূচনা...সেই শান্ত, নিরুত্তাপ ছেলেটির মধ্যে যে এত দৃঢ়তা...এতটা জেদ লুকিয়ে ছিল তা কি কেউ বুঝতে পেরেছিল সেদিন? নিজে ৫টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন। জিতেছেন অসংখ্য জাতীয় পুরস্কার। তারপরও নির্লিপ্ত তিনি।  


কীভাবে এত জেদ সঞ্চয় করেছিলেন গোপীচাঁদ?


২০০০ সালে সিডনি অলিম্পিক-এর প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে যান গোপী। আর সেই সময়ই তিনি তাঁর সতীর্থ অপর্ণা পোপাটের কাছে প্রতীজ্ঞা করেন, ''জীবনে আর হয়তো অলিম্পিক-এ অংশ নেওয়া হবে না। তবে, নিজের কোচিং-এ এমন ছাত্র-ছাত্রী তৈরি করব যারা ভারতকে ব্যাডমিন্টনে অলিম্পিক মেডেল এনে দেবে।'' তাঁর সেদিনের করা প্রতিজ্ঞা তিনি রেখেছে। ২০১২ সালে প্রথম সাইনার ব্রোঞ্জ...আর এবারের অলিম্পিকে সিন্ধুর রুপো জয়।


আগামী দিনে হয়তো নয়, নিশ্চয় আরও কৃতী উঠে আসবে তাঁর অ্যাকাডেমি থেকে। নাম উজ্জল করবে ভারতের। সে স্বপ্ন দেখেছেন আজকের রুপোজয়ী তারকাও। কিন্তু তিনি? তিনি কি সেই থেকে যাবেন 'বিহাইন্ড দ্যা সিন'ই? কবীর নেগিকে নিয়ে যদি 'চাক দে ইন্ডিয়া' হতে পারে, তবে একদিন 'গোপী স্যার'কে আমরাও হয়তো দেখতে পারি সিলভার স্ক্রিনে!


'দ্রোণাচার্য' পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি। নিজের জয়ের সবটুকুও তাঁকেই উত্সর্গ করেছেন সিন্ধু। এবার বাকিটা ভবিষ্যত বলবে। স্যালুট গোপী স্যার... আমাদের একটা প্রজন্মকে ক্রিকেট, ফুটবলের আলোয় ঢেকে থাকা ব্যাডমিন্টনের প্রতিও সমানভাবে উত্সাহিত করে তোলার জন্য।