যে লোকটা অফিস যায়, ওটাই আমার বাবা
ঝুমুর দাস
আজ ফাদার্স ডে বা পিতৃদিবস। আজকের দিনে বিশ্বের সমস্ত সন্তান তাঁদের বাবার সঙ্গে বিশেষ কিছু মুহূর্ত কাটাচ্ছেন। আজকের এই বিশেষ দিনটা শুধুমাত্র বাবাদের জন্য পালিত হয়। যদিও আমি এমন ধারণায় বিশ্বাস নই যে, বাবাকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য কোনও একটি বিশেষ দিন থাকা উচিত্ বলে। কারণ, বাবা এমনই একজন, যাঁর জন্য আজ আমার অস্তিত্ব পৃথিবী অনুভব করতে পারছে। তবুও সারা পৃথিবী জুড়ে পিতৃদিবস পালিত হচ্ছে, তাই বাবাকে নিয়ে বিশেষ কিছু স্মৃতি যা সারাক্ষণ মনের মধ্যে ঘোরে, সেটাই শেয়ার করছি।
তখন আমি অনেক ছোট। সবে অল্প অল্প বুঝতে শিখেছি। মা-বাবা-দাদা-কাকু-পিসি-ঠাম্মা বলতে শিখেছি। সবাইকে তখনও ঠিক চিনে উঠতেও পারিনি। তবে, বাবা বলে যাঁকে মা এবং অন্য সবাই চিনিয়ে দিয়েছেন, তাঁকে আমি নিজের মতো করে চিনে নিয়েছি। বাবার সঙ্গে আমার তখন দেখা খুবই কম হত। কারণ, আমার বাবা বড্ড ব্যস্ত মানুষ। যখন আমি ঘুম থেকে উঠতাম তখন শুনতাম বাবা অফিস চলে গিয়েছে। আর যখন বাবা অফিস থেকে বাড়ি আসত, তখন আবার আমি ঘুমিয়ে পড়তাম। তাই কেউ যদি কখনও আমার কাছে বাবার কথা জানতে চাইত, আমার সোজাসাপটা উত্তর ছিল, 'ওই যে, যে লোকটা অফিস যায়, ওটা আমার বাবা'।
সেই ছোট্টবেলা থেকে আজও একটা ধারণা মনের মধ্যে গেঁথে গিয়েছে। রবিবার মানে সেই দিনটা, যেদিন বাবা অফিস যায় না, বাড়িতে থাকে। তাই আজও যদি সপ্তাহের মাঝের কোনও দিন বাবা বাড়িতে থাকে, তাহলে সেই দিনটা রবিবার হোক আর না হোক, সেদিনটাকে রবিবার মনে করে অনেক ভুলভ্রান্তি করে ফেলি।
আমার কাছে বাবা মানে অনেক কিছু। বাবা মানে অফিস যাওয়া। বাবা মানে রবিবার একসঙ্গে বাজার করতে যাওয়া। বাবা মানে লুডো খেলতে বসে ইচ্ছাকৃত ঘুঁটি এদিক ওদিক করে দেওয়া। বাবা মানে দেদার দোকানের খাবার খাওয়া (মা যত খুশি রাগ করুক, তাও)। বাবা মানে আমাকে মেয়ে হিসেবে মোটেই দাদার থেকে আলাদা করা নয়। বরং অনেকটা এগিয়ে রাখা। বাবা মানে খবরের কাগজটা হাতে পেলেই শব্দসন্ধানটা করে ফেলা। বাবা মানে ঘরের কাজে ইচ্ছাকৃত ভুল করে আমাদের রাগিয়ে দেওয়া। আর এসব সেই ছেললেবেলা থেকে আজও একইরকম রয়েছে। কিচ্ছু বদলায়নি। তাই তো বাড়িতে একমাত্র বাবার ওপরেই 'মেয়েগিরি' ফলাতে পারি। তাই শেষে একটা কথাই বলার, বাবা তুমি আমার কাছে এমনই ছিলে ২৫টা বছর ধরে। আর এমনই থেকো।