স্বরূপ দত্ত


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

ছেলেবেলা থেকেই গল্প শুনতাম, আমাদের দেশের মুনি ঋষিদের। বেশ অবাক লাগতো। একজন মানুষ ধ্যানে মগ্ন। আর তাঁর ধ্যান ভাঙাতে কিনা হাজির স্বর্গের অপ্সরাকূল! যাঁরা কিনা হেলিয়ে দেন স্বর্গের দেবতাদেরও, সেই তাঁরাই অনেকক্ষেত্রেই ধ্যান ভাঙাতে পারতেন না মুনি ঋষিদের! কী ব্যক্তিত্ব! কী মনোনিবেশ! কাকে বলে ধ্যান! কত অবিচল লক্ষ্যে তাঁরা! কী তাঁদের পরাক্রম। সত্যিই অবাক লাগতো। উর্বশী, মেনকা, অপ্সরারা সব কিনা ফেল ওই ঋষিদের সামনে! দেবতাও তুষ্ট হন। নরকের পিশাচ তো উর্বশী দেখেই গলে জল। অথচ, মুনি ঋষিদের ধ্যান ভাঙানোর শরীরী সৌন্দর্য কোথায় নারীদের! সে সব ছিল পূরাণের গল্প। এখন ঘোর কলিকাল। এখন আর ঋষিদের ধ্যান ভাঙাতে কোনও অপ্সরাদের ডাক পড়ে না। বরং, কলিযুগে ঋষিদের সেই ইমেজটাই আর নেই। তাঁদের সম্পর্কে এখন কত খারাপ কথা শোনা যায়। যাক সে সব। যে জন্য এই কথাগুলো বললাম। কারণ, আজ জন্মদিন ঋষি কাপুরের। এই লেখাটা যাঁরা পড়ছেন, তাঁদের কাছে হয়তো রণবীর কাপুর অনেকবেশি জনপ্রিয়। হলই বা। 'বাবা, বাবাই হয়'! কারণ, রণবীরের বাবার নামই ঋষি কাপুর।


রাজ কাপুরের ছেলে ঋষি কাপুর চাইল্ড আর্টিস্ট হিসেবে বড় পর্দায় আত্মপ্রকাশ করেছিলেন মেরা নাম জোকার দিয়ে! নামের একেবারে উল্টো চরিত্রে! নিজের শিক্ষিকাকে পোশাক পাল্টাতে দেখে ফেলেছিল ক্লাস নাইনের ছাত্র ঋষি! ধ্যান তিনিই ভেঙে দিয়েছিলেন শিক্ষিকার! আর সেই ফিল্মেই জিতেছিলেন ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড! তারপর প্রাপ্ত বয়স্ক হিসেবে ফিল্মের লীড রোলে তাঁর আত্মপ্রকাশ হল ববি দিয়ে। সেই ফিল্ম থেকেও জিতেছিলেন ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড! সেই ছিল শুরুর সাফল্য। এরপর ১৯৭৩ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ঋষি কাপুর ওরফে চিন্টু ৯২ টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এর অনেক ফিল্ম মারকাটারি হিট। বেশ কয়েকটি ফ্লপও। কিন্তু ঋষি যেটা করেছিলেন, সেটা বলিউডের অন্যান্য নায়কদের কাছে রীতিমতো ঈর্ষার।


কেন? কারণ, ঋষি কাপুর বলিউডের কোন নায়িকার বিপরীতে অভিনয় করেননি! প্রায় ২৭ বছর ধরে হ্যানো নায়িকা নেই, যাঁর বিপরীতে ঋষি কাপুরকে নায়ক হিসেবে দেখা যায়নি! বরং, বলিউডে এমন অনেক নায়িকা আছেন, যাঁদের কেরিয়ারেই আছে ওই একটাই সিনেমা! যেটা কিনা ঋষি কাপুরের সঙ্গেই! শুরু হয়েছিল ববির ডিম্পল কপাডিয়াকে দিয়ে। তারপর একে একে পদ্মীনী কোলাপুরি, জয়াপ্রদা, শ্রীদেবী, মিনাক্ষী শেষাদ্রি, পুনম ধিলোন, টিনা মুনিম, রঞ্জিতা, নাসিম চোপড়া, সোমা আনন্দ, কাজল কিরণ, সোনম, বিনীতা গোয়েল, মাধুরী দীক্ষীত, অশ্বীনী ভাবে, জেবা বখতিয়ার (পাকিস্তানি), রুকসার, টাবু, দিব্যা ভারতী, জুহি চাওলা, মমতা কুলকার্নি, শিল্পা শেঠ্ঠি, এমনকি তাঁরই পরিবারের করিশ্মা কাপুর! ঋষি নায়ক হননি কার?ঋষির বয়স বেড়েছে প্রকৃতির নিয়মেই।কিন্তু প্রযোজক বা পরিচালকদের সেটা মনেই হয়নি।তাঁরা ঋষিকেই বাঁছতেন নায়ক। আর তাঁর বিপরীতে উঠতি নায়িকা! টাকা যতই বিনিয়োগ করা হোক, সে টাকা ঋষি ফেরতও দিতেন ফিল্ম হিট করিয়ে!


এটাই বলার যে - এ দেশের ঋষি-মুনিদের সম্পর্কে ধারণাই বদলে দিয়েছেন মানুষটা। এই ঋষির ধ্যান অপ্সরারা কী ভাঙাবেন! অপ্সরা-উর্বশীদের ভাগ্য খুলে যেত একবার পর্দায় ঋষির সঙ্গে নিজেকে দেখতে পারলে! বলিউড ফিল্ম প্রচুর স্টার, মেগা স্টারদের উপহার দিয়েছে। সেখানে এত বড় বড় সব নাম। ঋষি হয়তো সেই বড় নামদের ভিড়ে হারিয়ে যাবেন। কিন্তু আপনাকে এটাও মাথায় রাখতে হবে যে, এ দেশের অনেক বড় বড় স্টাররা কিন্তু হারিয়ে যাবেন ঋষির নায়িকাদের ভিড়ে! নামের সঙ্গে তাঁর চরিত্র যায় না, এতক্ষণ পড়ে এই সিদ্ধান্তেই এলেন তো? একদম ভুল হবে তাহলে। কারণ, ঋষি, নীতু সিংয়ের সঙ্গে মোট এক ডজন সিনেমায় অভিনয় করেছেন। নীতুকে বিয়েও করেছেন। আর তারপর দুজন মিলে গোটা জীবনটা কাটিয়েও দিলেন, কোনও বিতর্ক ছাড়া। কে বলে, নামের সঙ্গে তাঁর চরিত্র যায় না! ধন্য তুমি ঋষি! এ দেশের সবথেকে রোম্যান্টিক ঋষি, যাঁর চরিত্রে কোনও দাগ নেই। এবার ঋষির নায়িকাদের ছবিগুলো দেখে নিন...আছে আরও...কিন্তু অত ছবি আপলোড করতে করতে হাঁফিয়ে গেলাম।তাহলে ভাবুন, ঋষি কাপুর কী কাণ্ডটাই না করে গিয়েছেন!






















আরও পড়ুন মহানায়কের ২১১ ছবির নাম দিয়ে কবিতা