Aay Khuku Aay review : টেকো প্রসেনের হাত ধরে দর্শকদের সামনে এলেন এক অন্য প্রসেনজিৎ
টেকো প্রসেন আর তাঁর `ছোট্ট বুড়ি`র গল্পে ধরা পড়ল পল্লী বাংলার ছাপোষা বাবা-মেয়ের সম্পর্কের ছবি। যে সম্পর্কে কোনও আরবান সংস্কৃতির ছোঁয়া লাগেনি।
রণিতা গোস্বামী : প্রসেনজিৎ-এর 'আয় খুকু আয়' দেখতে নন্দন চত্ত্বরে তখন লম্বা লাইন। সব বয়সের দর্শকই ভিড় করেছেন। এক মুহূর্তের জন্য মনে হল ৮-এর দশকে প্রসেনজিৎ-এর 'অমর সঙ্গী' দেখার জন্য ভিড় জমেছে। হলে ঢুকতেই ছবিটা হঠাৎ বদলে গেল। নাহ, ঝাঁ চকচকে চেহারার ৮-এর দশকের সেই প্রসেনজিৎকে দেখা গেল না। যাঁকে দেখলাম, তিনি হলেন নবাবগঞ্জের 'টেকো প্রসেন'। আসল নাম নির্মল, মাথায় টাক থাকলেও তাঁকে দেখতে অবিকল প্রসেনজিৎ-এর মতোই। টেকো প্রসেনের ১৬-১৭ বছরের একটি মেয়েও রয়েছে। মা মরা 'বুড়ি'কে একা হাতেই বড় করেছেন নির্মল। সারাদিনটা ট্রেনে হকারি করে কাটে ঠিকই, তবুও দিনের শেষে মেয়ের ভালো-মন্দ সব দিকেই তাঁর নজর রয়েছে। টেকো প্রসেন আর তাঁর 'ছোট্ট বুড়ি'র গল্পে ধরা পড়ল পল্লী বাংলার ছাপোষা বাবা-মেয়ের সম্পর্কের ছবি। যে সম্পর্কে কোনও আরবান সংস্কৃতির ছোঁয়া লাগেনি। গরিব হলেও নির্মলের কাছে তাঁর ছোট্ট 'বুড়ি' রাজকন্যার থেকে কিছু কম নন। এ ছবি দেখতে দেখতে বারবার যেন নিজের বাবা আর হারানো ছোটবেলার কথাই মনে পড়ে যাচ্ছিল।
'আয় খুকু আয়'-ছবিতে বাবা-মেয়ের একে অপরের প্রতি অপত্য স্নেহ, শ্রদ্ধা মিশ্রিত ভালোবাসা, ভরসার কথা যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে কিশোরী বয়সের নিষ্পাপ প্রেম, দারিদ্রের মধ্যেও সসম্মানে লড়াই করে বেঁচে থাকার গল্প। রয়েছে কিছু বদ অভিসন্ধি নিয়ে চলা দুষ্টু লোকজন, রাজনৈতিক নেতা আর একজন ভালো পুলিস অফিসারের কথা। আবার এত কিছুর মাঝে এই ছবিতে টেকো প্রসেনের হাত ধরে ৮ এর দশকের গ্ল্যামারাস নায়ক প্রসেনজিৎ-কেও আরও একবার ফিরে পাওয়া গেল।
দীর্ঘ ফিল্মি কেরিয়ারে নানান প্রেক্ষাপটের উপর তৈরি ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। যত দিন গেছে চরিত্রের প্রয়োজনে বারবার নিজেকে ভেঙেছেন। আর সেকারণেই ১৯৮৭-র 'অমরসঙ্গী' ছবির নায়কের সঙ্গে দোসর, প্রাক্তন, অটোগ্রাফ, বাইশে শ্রাবণে প্রসেনজিতকে মেলানো যায় না। তবে টেকো প্রসেনের চরিত্রে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয় তাঁর আগের বহু চরিত্রকেই ছাপিয়ে গিয়েছে। 'আয় খুকু আয়'-ছবিতে পরিচালক সৌভিক কুণ্ডুর হাত ধরে এক নন গ্ল্যামারাস নায়ক প্রসেনজিৎকে পেল বাংলার দর্শক। আর তাঁর এই লুকের জন্য প্রস্থেটিক আর্টিস্ট সোমনাথ কুণ্ডর ভূমিকার প্রশংসা করতেই হচ্ছে। গোটা ছবিতে বাবা প্রসেনজিতকে যোগ্য সঙ্গত করেছেন তাঁর পর্দার মেয়ে দিতিপ্রিয়া রায়। ছোট্ট চরিত্র হলেও নজর কেড়েছে এমএলএ 'পুতুল রানি বাগচী'র চরিত্রটি। রাজনীতিতে পুতুল এতটাই চৌখস যে পেডিকিওর করাতে করাতে দিব্যি দাপটের সঙ্গে রাজ্যপাট সামলাতে পারেন। দিতিপ্রিয়ার মায়ের ভূমিকায় মিথিলার স্বল্পক্ষণের উপস্থিতি মন ছুঁয়ে যায়। অন্যান্য ভূমিকায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, শঙ্কর দেবনাথ, সত্যম ভট্টাচার্য, রাহুল দেব বোসের অভিনয়ও প্রশংসনীয়। চিত্রনাট্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রণজয় ভট্টাচার্যের সঙ্গীত পরিচালনায় ছবির গানগুলিও দর্শকদের একটা অন্য অনুভূতির জায়গায় পৌঁছে দেয়। সব মিলিয়ে তথাকথিত বাণিজ্যিক ছবির সব উপাদনই রয়েছে 'আয় খুকু আয়'-এ। সঙ্গে মিশে রয়েছে গ্রাম বাংলার মাটির গন্ধ।