Anirban Bhattacharya: ‘সমস্ত অভিনেতারা চলুন এক যোগে মার খাওয়ার আবেদন জানাই’ বিস্ফোরক অনির্বান
Anirban Bhattacharya: অনির্বান রাজনৈতিক দলের উপর ক্ষোভ উগরে দিয়ে লেখেন, ‘আমরা নাটক ছেড়ে একটা মার খাওয়ার উৎসবের দিকে এগিয়ে যাই। আমরা রাজনৈতিক বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়াই। প্রতিটি অঞ্চলের পার্টি অফিসে আমরা আবেদন পত্র জমা দিই আমাদের নাটক অভিনয়ের দিন ও স্থান সমেত, আমাদের যেন এসে বেদম মার দেওয়া হয়, যেন বুঝিয়ে দেওয়া হয় হাড়ে হাড়ে যে ভোটকেন্দ্রিক গণতন্ত্রে অমিতাভ বচ্চন বা শাহরুখ খান না হলে বেশি লাফাতে নেই।`
Anirban Bhattacharya, জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: নাট্য উৎসব ঘিরে ধুন্ধুমার। নাট্যকর্মী অমিত সাহাকে মারধর ও গালিগালাজ করে নাট্য উৎসব বন্ধ করার প্রতিবাদে গর্জে উঠেছেন নাট্যগজতের কর্মীরা। অভিযোগ ওঠে রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে। অমিতের পাশে দাঁড়ান টলিউডের অভিনেতা এবং পরিচালকরাও। ২৮ ডিসেম্বর বেলেঘাটার রাসমেলা মাঠে একটি প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়। সেই সভাতে উপস্থিত হয়েছিলেন অভিনয় জগতের অনেকেই। তবে শুটিং থাকায় আসতে পারেননি অনির্বাণ ভট্টাচার্য। এরপর সোশ্যাল মিডিয়াতেই নিজের ক্ষোভ উগরে দিলেন পরিচালক-অভিনেতা।
আরও পড়ুন- Chanchal Chowdhury: ‘সারারাত চোখের পাতা এক করতে পারিনি’, বাবার শেষষাত্রায় বুকভাঙা কান্না চঞ্চলের
তিনি লেখেন, ‘আমি আজ বেলেঘাটাতেই শুটিং করছি, কিন্তু খুবই টাইট শিডিউল থাকায় সভাতে উপস্থিত থাকতে পারছি না। কিন্তু আমি এই সভায় উপস্থিত থাকতে চেয়েছিলাম, কারণ গায়ে হাত উঠেছে।নিশ্চয়ই আগেও উঠেছে, অভিনেতার গায়ে, নাট্যকর্মীর গায়ে।সুদূর বা অদূর ইতিহাসে।কিন্তু সাম্প্রতিককালে আমার জানার মধ্যে এই প্রথম হাত উঠেছে।আমি প্রতিবাদ করছি, আরো অনেকের সঙ্গে, এটা জেনেই, যে এই প্রতিবাদ ব্যর্থ হবে।যার গায়ে হাত উঠেছে, তার গায়ে আবার হাত উঠতে পারে শীঘ্রই, এবং যিনি হাত তুলেছেন, তিনি তার সাহসে বলীয়ান হয়ে বাংলা মায়ের সুযোগ্য সন্তানের অনেকগুলো সার্টিফিকেট ঘরে বাঁধিয়ে রাখবেন। কে জানে হয়তো কালের অদ্ভুত নিয়মে একদিন বাংলার সংস্কৃতি মন্ত্রীও হয়ে যেতে পারেন, দল বদলালে হয়তো ভারতেরও। এটা বা এরকম কিছুই হয়তো হবে। আমি এই ঘটনাকে বুঝে নিতে চাইছি রাজনৈতিক বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে’।
অনির্বানের কথায় উঠে আসে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের কথাও। তিনি বলেন, ‘আজ থেকে ১২ দিন আগে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী মঞ্চে অমিতাভ বচ্চন বাকস্বাধীনতার সপক্ষে বক্তৃতা করে গেছেন। শাহরুখ খান সোশ্যাল মিডিয়ার ঘৃণাবাহিনীকে এক হাত নিয়েছেন, সারা ভারতে মুক্তমনা মানুষ হাততালি দিয়ে উঠেছেন। সেদিন যারা মঞ্চে ছিলেন, তারাও দিয়েছেন। তার কিছুদিন পরেই অমিত সাহা ও অরূপ খাঁড়া মার খেয়ে গেলেন, নাট্য উৎসব আয়োজন করার জন্য। একই রাজ্যে! কেন? কারণ অমিত সাহা ও অরূপ খাঁড়া পশ্চিমবঙ্গের বোধ করি একটি ভোটকেও ডিস্টার্ব বা পেট্রনাইজ করতে পারেন না।অমিতাভ বচ্চন বা শাহরুখ খান পারেন।’
আরও পড়ুন- Pathaan Row: ‘বেশরম’ গেরুয়া বিকিনির জের! সেন্সরের কোপে শাহরুখের ‘পাঠান’
অনির্বান রাজনৈতিক দলের উপর ক্ষোভ উগরে দিয়ে লেখেন, ‘আমরা নাটক ছেড়ে একটা মার খাওয়ার উৎসবের দিকে এগিয়ে যাই। আমরা রাজনৈতিক বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়াই। প্রতিটি অঞ্চলের পার্টি অফিসে আমরা আবেদন পত্র জমা দিই আমাদের নাটক অভিনয়ের দিন ও স্থান সমেত, আমাদের যেন এসে বেদম মার দেওয়া হয়, যেন বুঝিয়ে দেওয়া হয় হাড়ে হাড়ে যে ভোটকেন্দ্রিক গণতন্ত্রে অমিতাভ বচ্চন বা শাহরুখ খান না হলে বেশি লাফাতে নেই। সারা ভারতবর্ষের সিনেমা ও থিয়েটার অভিনেতারা যেন জানতে পারেন, পশ্চিমবঙ্গে এক অভূতপূর্ব আনন্দযজ্ঞ শুরু হয়েছে, ভোট রাজনীতিতে কাজে আসে না, এমন শিল্পীদের মেরে ঠান্ডা করে দেওয়া হচ্ছে।এই শিক্ষা সারা দেশ আমাদের রাজ্য থেকেই পাক। চলুন, অভিনয় চর্চা, গানবাজনা ছেড়ে আমরা আগে আমাদের রাজনৈতিক অস্তিত্বটা বুঝে নিই আমাদের আজকের বাস্তবতায়।আবেদন পত্র জমা দেওয়া শুরু হোক। অখ্যাত, বিখ্যাত, নামী, অনামী সমস্ত অভিনেতারা চলুন এক যোগে মার খাওয়ার আবেদন জানাই।আমি অনির্বাণ।আমার এর পরের অভিনয় ১৫ই জানুয়ারি রবীন্দ্র সদন মঞ্চে। এসে মেরে যান। কারণ এই দিন এর অভিনয়ে ভোট রাজনীতির কোনো মুনাফা নেই, এমন ফালতু ঘটনা রাজ্যে প্লিজ একটাও ঘটতে দেবেন না, অনুরোধ। সবশেষে কেক উৎসবের সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা করি।’
আরও পড়ুন- Nitin Manmohan passes away: প্রয়াত ‘বোল রাধা বোল’ ছবির প্রযোজক নীতিন মনমোহন...
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেন অভিনেতা অমিত সাহা। ‘বাকিটা ব্যক্তিগত’, ‘বিরহী’, ‘ভটভটি’ একাধিক বাংলা ছবি ও ওয়েব সিরিজে নজর কেড়েছেন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় নেটিজেনরা তাঁর অভিনয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তবে এবার সেই অভিনয়ের কারণেই হেনস্থার মুখে পড়তে হল অভিনেতা অমিত সাহাকে। সিনেমার পাশাপাশি মঞ্চেও অভিনয় করেন তিনি। বেলেঘাটায় তাঁর নাট্যদল ‘বিদূষক নাট্যমণ্ডলী’র মুক্ত মঞ্চের নাট্যোৎসব বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ করেন তিনি। শুধু তাই নয়, অভিনেতার দাবি, তাঁদের গালিগালাজ করা হয়, এমনকী মারধরও করা হয়। অভিনেতার অভিযোগ তীর স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে। আগামী ২৪ ও ২৫ ডিসেম্বর একটি নাট্যমেলার আয়োজন করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু শুক্রবার হঠাৎই কিছু রাজনৈতিক নেতা তাঁকে মারধর করে নাট্যোৎসব বন্ধ করে দেন বলে অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনার প্রতিবাদে এগিয়ে আসেন নাট্যজগতের কর্মীরা। প্রথমদিন থেকেই অমিতের পাশে দাঁড়িয়েছেন পরিচালক প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য। এবার পাশে দাঁড়ালেন অনির্বানও। তাঁর পোস্ট শেয়ার করে অমিতকে প্রহারের প্রতিবাদ করেন নাট্যব্যক্তিত্ব সুমন মুখোপাধ্যায়, সৃজিত মুখোপাধ্যায় সহ আরও অনেকে।