Exclusive Aparna Sen on The Rapist: `একের পর এক ধর্ষণের খবরে দুঃখ, বিষাদ,হতাশায় মন ভারাক্রান্ত`, অকপট অপর্ণা সেন
`সবসময় কিন্তু বস্তিতে থাকা এক দরিদ্র ছেলে রেপিস্ট হয় না, বেশিরভাগ রেপ হয় পরিবারের মধ্যে, এটা প্রমাণিত, এটা আমরা সকলেই জানি। মেয়েরা অনেকসময় বলতে পারেনা`, অপর্ণা সেন(Aparna Sen)
সৌমিতা মুখোপাধ্যায়: ২৬ তম বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে (26th Busan International Film Festival) সেরা ছবির সম্মান হিসাবে কিম জিসুক অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে জাতীয় পুরস্কার জয়ী পরিচালক অপর্ণা সেনের (Aparna Sen) ছবি 'দ্য রেপিস্ট'(The Rapist)। ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন কঙ্কনা সেনশর্মা (Konkona Sen Sharma), অর্জুন রামপাল (Arjun Rampal) ও তন্ময় ধানানিয়া (Tanmay Dhanania)। অ্যাপলস এন্টারটেনমেন্ট ও কোয়েস্ট ফিল্মস প্রযোজিত এই ছবি সম্প্রতি প্রদর্শিত হয়েছে ২৭ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে। সেই ছবি নিয়েই জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটালের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনায় পরিচালক অপর্ণা সেন।
প্রশ্ন: ছবির পরিকল্পনার পিছনে বিশেষ কোন ঘটনা রয়েছে?
অপর্ণা সেন: ঘটনা মানে অনেক ঘটনা রয়েছে। প্রতিদিনই কোনও না কোনও ধর্ষণের খবর কানে আসে তখনই মনে হয় কেন এতো ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে রোজ? সেখান থেকেই ছবির আইডিয়া মাথায় আসে যে, ধর্ষণের পিছনে সমাজেরও একটা দায় থাকে। আমার মনে হয় সমাজ সেই দায় এড়াতে পারে না। একটা সমাজে ধর্ষক তখনই তৈরি হয় যখন পুরুষতান্ত্রিক মূল্যবোধটা খুব বেশি থাকে।
প্রশ্ন: ছবির নামটা খুবই অভিঘাতপূর্ণ যা সরাসরি ধাক্কা দেয়?
অপর্ণা সেন: আমি কোনও আড়ালের পিছনে লুকাতে চাইনি। নরম সরম নামের আড়াল রাখতে চাইনি, কারণ গল্পটাই অভিঘাতপূর্ণ। আমাকে অন্য নামও সাজেস্ট করা হয়েছিল সেই নামটাও বেশ ভালো,'প্রিজনার'। সিনেমাটা দেখলে অল্প সংখ্যক দর্শক বুঝবে কেন প্রিজনার নামটা কিন্তু এই টাইটেলটার কোনও recall value নেই, যেকোনও সিনেমার নাম প্রিজনার হতে পারে। আমার মনে হল 'দ্য রেপিস্ট' কেন নাম হবে না? গল্পটা তো তাই নিয়েই। আমি হয়তো দ্য রেপ রাখতে পারতাম কিন্তু রেপিস্ট রাখার পিছনে কারণ হল, যেহেতু আমার প্রশ্নটা ছিল একজন রেপিস্ট কীভাবে তৈরি হয়? সবসময় কিন্তু বস্তিতে থাকা এক দরিদ্র ছেলে রেপিস্ট হয় না, বেশিরভাগ রেপ হয় পরিবারের মধ্যে, এটা প্রমাণিত, এটা আমরা সকলেই জানি। মেয়েরা অনেকসময় বলতে পারেনা। আদতে কী কারণে এত ধর্ষণ হয়? সেটা হচ্ছে পুরুষতান্ত্রিক ভাবনা চিন্তা থেকে।
প্রশ্ন: চিত্রনাট্য লেখার সময় যখন গবেষণা করছিলেন তখন কাদের সঙ্গে কথা বলেন?
অপর্ণা সেন: অনেকের সঙ্গেই কথা বলি তবে আমি বিশেষ করে আমার দুই ফেমিনিস্ট বন্ধুর সঙ্গে কথা বলি, তাঁরা দুজনেই দুটি সংগঠন চালান, একটি এখানে ও আরেকটি ইউএসে। আমার বন্ধু শমিতা দাশগুপ্তের সংগঠন মানবী। সাউথ এশিয়ান অ্যাবিউসড মহিলাদের অবলম্বন হিসাবে কাজ করে এই সংস্থা। আর এখানে রয়েছে অনুরাধা কাপুর, তিনি স্বয়ম নামের একটি সংস্থা চালান, আমি নিজেও সেখানে লাইফ মেম্বার। তাঁদের সঙ্গে আমি নিজেও অনেক প্রতিবাদে সামিল হয়েছি। অনুরাধা আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন। ওঁর মাধ্যমে অনেক কিছু জানতে পারি, আইন আছে অনেক কিন্তু সবসময় তার যথাযথ বাস্তবায়ন হয় না। আমাকে একটা গল্প বলেছিলেন অলকানন্দা চাকলাদার। একজন রেপিস্টের কথা ওঁ বলেন। সংশোধনাগারে ওঁকে সবাই মা বলে। ঐ রেপিস্ট বলেছিল যে, 'মা সকলের সঙ্গে কথা বলে কিন্তু আমার সঙ্গে কেন কথা বলে না?' অলকানন্দা বলেন, 'আমার একটি মেন্টাল ব্লক ছিল, আমি ফাইনালি কথা বললাম। আমি জিগেস করেছিলাম কেন এরকম করেছিলে? সে অনেকক্ষন কথা বলেনি, শেষে কেঁদে ওঠে আর বলে আমার উপর কী হয়েছে তার বিচার কে করবে?' আমি বলছি না যে যাঁরা রেপিস্ট তাঁদের উপর সবসময় অত্যাচার হয়েছে কিন্তু এটা খুবই কমন।
প্রশ্ন: অর্জুন রামপালকে তো বলিউডের বানিজ্যিক ছবিতেই দেখা যায়, এই ছবিতে ওঁকে কাস্ট করার কারণ?
অপর্ণা সেন: ওঁকে দুটো ছবিতে আমি দেখেছিলাম, 'রাজনীতি' ও 'রক অন'। দুটোতেই ওঁর অভিনয় আমার ভালো লাগে। আমার মনে হয়েছে ওঁর চেহারা এতো সুন্দর যে ওঁর অভিনয় চাপা পড়ে যায়। চেহারার মধ্যে একটা উদারভাব আছে। ছবিতে ওঁর যে চরিত্র, এক মুসলমান ছেলে নিজের চেষ্টায় শিক্ষিত হয়েছে সে যা কাজ করে, তাঁর চেহারার মধ্যে একটা নোবেলিটি থাকা দরকার, ওটা অর্জুনের মধ্যেই পেয়েছি। আফতাবের চরিত্রটার আন্ডার অ্যাক্টিং দরকার ছিল কিন্তু ঝগড়ার সিনে ওঁ আমায় চমকে দিয়েছে।
প্রশ্ন: ২৬ তম বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে এই ছবি কিম জিসুক অ্যাওয়ার্ড পায়,সেই মুহুর্তটা কেমন ছিল?
অপর্ণা সেন: খুবই ভালো লেগেছে। আমি আর কঙ্কনা দুজনেই বেশ কিছু বছর আগে কিম জিসুকের সঙ্গে দেখা করেছিলাম। কঙ্কনা আমার সঙ্গে গিয়েছিল, আমি তখন জ্যুরি মেম্বার ছিলাম ওখানে। সেখানে কিম জিস্যুক ছিলেন। উনি এশিয়ান সিনেমাকে সারা পৃথিবীর সামনে তুলে ধরতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন আজীবন। তাঁর স্মৃতিতে যে অ্যাওয়ার্ড তা আমার কাছে খুবই মূল্যবান।
প্রশ্ন: কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটি দেখানো হয়েছে, ছবির সাবজেক্টের জন্যই কি ছবির শেড গ্রে?
অপর্ণা সেন: না, একদমই না। নন্দনের প্রজেকশন খুবই খারাপ, আলো জোরালো নয়। শুধু তা নয় অনেক কিছু শোনাও যায় নি। নয়না প্রথম যখন জেলে যাচ্ছে তখন একটা হার্টবিটের আওয়াজ ছিল সেটা শোনা গেল না। কয়েকটা বিশেষ জায়গায় যত্ন করে সাউন্ড ডিজাইন করা হয়েছিল, শোনাই গেল না। ভিজ্যুয়াল, সাউন্ড দুটোতেই গন্ডগোল।
প্রশ্ন: বড়পর্দায় কবে রিলিজ করবে?
অপর্ণা সেন: বড়পর্দায় নয়, ওটিটিতে রিলিজ করবে। আমি নিশ্চিত নয় কবে, তবে ওটিটিতে করবে। আমি তাতে খুশি। কারণ হলে রিলিজ করলেই মাঝে একটা ইন্টারমিশন দেবেই কারণ ওই সময় ওঁরা মোটা টাকায় খাবার বিক্রি করে, বিজ্ঞাপন চলে, ওখান থেকে হলের আয়। সমস্ত মাল্টিপ্লেক্সেই এই সমস্যা। সিঙ্গল স্ক্রিন তো আর প্রায় নেই।
প্রশ্ন: চারপাশে রোজ ধর্ষণের খবর, আপনার কথা অনুযায়ী সমাজ এই দায় এড়াতে পারেনা। আপনার প্রতিক্রিয়া...
অপর্ণা সেন: একজন সাধারণ স্বাভাবিক মানুষ যে মানবিক মূল্যবোধে বিশ্বাস করে তাঁর কী আর প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে ধিক্কার ছাড়া। ধিক্কার, দুঃখ, বিষাদ, হতাশায় মন ভারাক্রান্ত।
আরও পড়ুন: Mahesh Babu: 'বলিউড আমার খরচ বহন করতে পারবে না, সময় নষ্ট করতে চাই না', বিস্ফোরক মহেশ বাবু