`ফুল এন্টারটেইনমেন্ট`-এর জন্য সপরিবারে দেখতে যেতেই পারেন `বিবাহ অভিযান`
রণিতা গোস্বামী
রণিতা গোস্বামী
'আমাজন অভিযান' কিংবা 'ইয়েতি অভিযান'-এর মতো কোনও রোমহর্ষক অভিযানের গল্প নয়। এ এক অন্য অভিযানের গল্প। নাম তার 'বিবাহ অভিযান'। তবে নামটা শুনেই নিশ্চয় অনুমান করতে পারছেন, যে এর মধ্যে একটা মজার রসদ রয়েছে। হ্যাঁ, তা আছে। যাঁরাই এই 'বিবাহ অভিযান'-এর পথে হেঁটেছেন, তাঁদের সকলেরই কমবেশি এই 'বিবাহ' নামক এই বিশেষ অভিযানের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তবে হলফ করে বলা যেতে পারে রজত ও অনুপম এই দুই বন্ধুর 'বিবাহ অভিযান'-এর অভিজ্ঞতাটা সকলের মত হয়েও অনেকটাই যেন আলাদা।
এ অভিযানে অনুপম ও রজতকে অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়, তবে তাঁদের সেই সব সমস্যাকে কমেডির মোড়কে উপস্থাপন করেছেন পরিচালক বিরসা দাশগুপ্ত। 'টোপর সাজাও, মুকুট পরাও' এই গানটির মাধ্যমেই অনুপম ও রজতের 'বিবাহ অভিযান'-এর পথে দর্শকদের হাজির করেছেন পরিচালক।
গল্পটা কী?
একদিকে বাড়ির পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করে নাজেহাল অবস্থা রজতের। সিরিয়ালে বিভোর, কুসংস্কারে বিশ্বাসী, স্বল্প শিক্ষিত বিয়ে করা বউ মায়ার ভালোবাসা রজতের কাছে অত্যাচারের থেকে কিছু কম নয়। স্ত্রীর ভালোবাসার বলতে রজতের কাছে শুধুই তাঁর সারা শরীরে বাঁধা মাদুলি আর কবজ। অন্যদিকে নিজে পছন্দ করে বিপ্লব-বিদ্রোহে ব্যস্ত রাইকে বিয়ে করে রজতের বন্ধু অনুপমের অবস্থা আরও সঙ্গীন। স্ত্রীর ভালোবাসা যে কারে কয় তা একপ্রকার ভুলতেই বসেছেন অনুপম। গৃহস্বামীর জায়গায় তার অবস্থা এখন গৃহভৃত্যের অনুরূপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এখন উপায়? বউদের কবল থেকে বাঁচতে, অফিসের বসকে মিথ্যা বাহানা দিয়ে পাহাড়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন রজত ও অনুপম। বাড়িতে অফিসের কাজে ভুবেনেশ্বর যাওয়ার কথা বলে ফুরুৎ করে পালানো ফন্দি আঁটে দুজনে। রজত ও অনুপমের এই যাত্রাতেই বাধে যত গোল। ভয়ানক এক সমস্যার সম্মুখীন হয় এই দুই বন্ধু। আবার এই কাণ্ডকারখানা, টেনশন, হুজ্জতির মধ্যেও হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরতে পারবে।
অন্যদিকে, এই গল্পের মধ্যেই এসে জুটবে বুলেট সিং ও মালতীর গল্প। সেও কম মজাদার নয়। তবে এই সমস্ত কিছু জানতে হলে, আর বিরসা দাশগুপ্তের ছবির এই মজাদার সমস্ত ঘটনার সাক্ষী থাকতে হলে আপনাকে হলমুখী হতেই হচ্ছে।
অভিনয়
অভিনয়ের প্রশ্ন যদি উঠে তা হলে বলতে হয় এ ছবিতে মন কেড়েছে রুদ্রনীল সেনগুপ্তের অসাধারণ অভিব্যাক্তি। ছবিতে তাঁর হাসির মুহূর্তগুলিই সবথেকে বেশি নজর কাড়ে। এদিকে রোম্যান্টিক হিরোর পাশাপাশি কমিক হিরো হিসাবেও এছবিতে নিজেকে যথেষ্ট প্রমাণ করেছেন অঙ্কুশ হাজরা। নিজ নিজ চরিত্রে অভিনয়ের প্রশংসার দাবি রাখেন নুসরত ও সোহিনীও। আর অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখেন বুলেট সিং ওরফে গণশার ভূমিকায় অনিবার্ণ ভট্টাচার্য। ক্যামিও চরিত্র হলেও মালতীর ভূমিকায় প্রিয়াঙ্কা সরকারের অভিনয় নজর কাড়া।
চিত্রনাট্য ও পরিচালনা ও সঙ্গীত
অভিনয়ের পাশাপাশি কমেডি ছবির প্রয়োজনে রুদ্রনীলের লেখা চিত্রনাট্যও এই ছবিকে একটা অন্য মাত্রা দিয়েছে তা বলাইবাহুল্য। মন কেড়েছে প্যরোডির আকারে বুলেট সিং (অনির্বাণ) মুখে বসানো বেশকিছু ডায়ালগ। তাঁর মুখে বসানো গ্রাম্য বাংলার ভুল উচ্চারণ শুনে নিজেদের অজান্তেই হাসতে শুরু করতে দেখা গেছে দর্শকদের। আর পরিচালক হিসাবে দর্শককে আরও একবার নিখাত বিনোদনের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন পরিচালক বিরসা দাশগুপ্ত। তিনি বেশ বুঝিয়ে দিয়েছেন শুধু অ্যাকশন নির্ভর ও রোম্যান্টিক ছবিই নয়, কমেডি ছবিকেও তিনি অন্য মাত্রা দিতে পারেন। সঙ্গে তাল মিলিয়ে জিৎ গাঙ্গলীর মিউজিকও দর্শকদের যে ভালো লাগবে তা বলাই যায়।
তবে ত্রুটি বলতে ছবিতে কিছু কিছু অংশ, ডায়ালগ একটু অতি নাটকীয় মনে হয়েছে, অতটা হয়ত না হলেও চলত। বিশেষ করে পার্টিতে রাই ও তাঁর বন্ধবীর কথোপকথনের বেশকিছু অংশ। এছাড়া ছবিতে গণশা অর্থাৎ অনির্বাণের মুখে বসানো নেতাজি হতে চাওয়ার ডায়ালগ গুলো হয়ত না বসালেও চলত। গণশার নেতাজি হতে চাওয়ার জায়গাটা নেহাতই কমেডির নিরিখে তৈরি করা হলেও এক্ষেত্রে নেতাজিপ্রেমীদের ভাবাবেগে আঘাত লাগতে পারে।
ছবি মুক্তির আগে এই ছবিটি একটি স্ট্রেস বাস্টার ছবি হতে চলেছে বলে জানিয়েছিলেন পরিচালক বিরসা দাশগুপ্ত। এক্ষেত্র তিনি যে তাঁর কথা রেখেছেন। হলফ করে বলা যায় কমেডি ছবি হিসাবে দর্শকদের মন কাড়ার বেশ অনেক রসদই রয়েছে এই ছবিতে। সবমিলিয়ে 'বিবাহ অভিযান' ৫ এর মধ্যে ৩ দেওয়াই যায়।
-----------