Debanjali B Joshi: ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে বলিউডে স্ট্রাগল, বরুণ ধাওয়ানের ছবি জুড়ে বাঙালি কন্যের কন্ঠ
Debanjali B Joshi: `আমি অনেক জায়গায় অডিশন দিয়েছি। কিন্তু ওরা ট্যালেন্ট দেখার পাশাপাশি স্টোরি খোঁজে। ওরা স্টোরি পেলে তবেই ট্যালেন্ট দেখে। ১৫-১৬ বছর থেকে অনেক অডিশন দিয়েছি। কিন্তু আমি দেখেছি ১০ জনকে নিলে হয়তো ২ জনের স্টোরি নেই, বাকি সবার কোনও দুঃখের গল্প আছে।`
সৌমিতা মুখোপাধ্যায়: ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে বলিউডে গানের জগতে পায়ের মাটি শক্ত করতে বদ্ধপরিকর বাঙালি কন্যে দেবাঞ্জলি। তাঁর স্ট্রাগলের কাহিনী দীর্ঘ। তবে সব অন্ধকারের শেষে যেমন আলো থাকে, সেরকমই বর্তমানে দেবাঞ্জলির নাম জুড়েছে বরুণ ধাওয়ান, আয়ুষ্মান খুরাণার ছবির সঙ্গে।
প্র: কেরিয়ার শুরু কোথা থেকে?
দেবাঞ্জলি: আমি কলকাতার মেয়ে, গান শিখেছি কলকাতাতেই। তবে আমার গানের কেরিয়ার শুরু মুম্বইয়ে। আমি থাকতাম যাদবপুরে, গান শিখেছি বানীচক্রে। বেঙ্গল মিউজিক কলেজ থেকে সংগীত বিশারদের পাঁচ বছরের কোর্স করেছি।
প্র: প্রথম থেকে গান নিয়েই কেরিয়ার গড়তে চেয়েছিলেন?
দেবাঞ্জলি: আমি কলকাতায় ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তাম। সেখান থেকেই ক্যাম্পাসিঙে চাকরি পেয়ে যাই। বড় আইটি কোম্পানিতে চাকরি কিন্তু আমার মাথায় সবসময়েই ঘুরত যে, আমি গান নিয়ে কিছু করব, প্লেব্যাক করব। কলেজজীবনে আমি ভাবতাম যে, একটা চাকরি করব কিন্তু একবছর চাকরির পরেই বুঝলাম যে ইঞ্জিনিয়ারিং আমি করতে চাইনি। তখনই ভাবলাম মুম্বই যাই। চাকরির ট্রান্সফার নিয়েই মুম্বই আসি।
প্র: মুম্বইয়ে কাউকে চিনতেন?
দেবাঞ্জলি: মুম্বইয়ে আমার মামা থাকতেন কিন্তু গানের সঙ্গে তাঁর কোনও যোগাযোগ নেই।
প্র: মুম্বইয়ে কীভাবে প্রথম ব্রেক পেলেন?
দেবাঞ্জলি: আমি মুম্বইয়ে এসেছিলাম চাকরি নিয়েই, কারণ টাকারও দরকার মুম্বইয়ে থাকতে। আমি প্রথম প্রথম নেটে সার্চ করতাম যদি ভোকালিস্টের কোনও চাকরি থাকে। সেখান থেকেই বিভিন্ন স্টুডিয়োর নম্বর পেতাম। সেখানে সেখানে যেতাম। তাঁরাও বেশিরভাগ স্ট্রাগলিং। ১০-২০টা জায়গায় গিয়ে গিয়ে বুঝতে পারতাম সেটা আমার জন্য ঠিক জায়গা কিনা। সবজায়গায় নিজের নম্বর দিয়ে আসতাম। ওভাবে খুঁজতে খুঁজতেই একটা জিঙ্গলের জন্য ডাক পাই।
প্র: তারপর?
দেবাঞ্জলি: সেখান থেকে ব্যাক টু ব্যাক ভালো ভালো কিছু জিঙ্গলের কাজ পাই। বেশ কয়েকজন ভালো কম্পোজারের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পাই। তারপর কিছু কিছু অ্যালবামের জন্যও গাই। আমি যখন শুরু করি তখন ইউটিউবের অত জোর ছিল না। গাইতাম কিন্তু সেভাবে মানুষের কাছে পৌঁছত না। এভাবে গাইতে গাইতে সিরিয়ালের কম্পোজারের খোঁজ পাই। অনেকগুলো জনপ্রিয় ধারাবাহিকে গান গাই। এর অনেক পরে তিন বছর আগে ছোটে সর্দানী নামের একটি সিরিয়ালের বেশ কয়েকটা গান গাই। পাঞ্জাবী গান আমি গাইতে ভালোবাসি, ওখানে পাঞ্জাবী গান গাই।
প্র: সিনেমায় গান গাওয়ার সুযোগ এল কীভাবে?
দেবাঞ্জলি: ২০১৬ সালে প্রথম সুযোগ পাই। ছবিটার নাম ছিল জিএসটি। সেভাবে স্টার কেউ না থাকলেও ছবিটা ভালো ছিল। গানটা জি মিউজিক থেকে মুক্তি পেয়েছিল। তারপর ‘অমাবস’ নামের একটা ছবির তেলুগু ভার্সনে গান গাই। ওটার কম্পোজার ছিলেন অঙ্কিত তিওয়ারি। হিন্দিতে ঐ গানটা গেয়েছিলেন সুনিধি চৌহান। তবে এই সব সিনেমার অনেক আগে যখন আমি সবে সবে চাকরি ছেড়েছিলাম, তখন শান স্যারের সঙ্গে আমার একটি মিউজিক ভিডিয়ো রিলিজ হয়। ওটাই প্রথম বড় রিলিজ আমার।
আরও পড়ুন-Fugla: ‘পড়াশোনার নাম নেই, ব্যবসা করাচ্ছে’, মার্কশিটে জবাব ফুগলার আন্টির
প্র: বধাই দো, ভেড়িয়া-এই ছবিগুলোতে আপনি গান গেয়েছন, এই সুযোগ এল কীভাবে ?
দেবাঞ্জলি: আমি ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালে টি সিরিজের জন্য অনেক ভক্তিমূলক গান গেয়েছি। এরপর বাংলায় প্রথম কাজ করি। ‘আলিনগরের গোলকধাঁধা’ ছবির টাইটেল ট্র্যাক গাই। কম্পোজার মিমো আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। ওটাই বাংলায় আমার ডেবিউ। হিন্দি ছবিতে বলতে ‘বধাই দো’ টাইটেল, ‘স্ট্রিট ডান্সার’এর বে জুবা গানের ব্যাকিং ভোকালে আমার কন্ঠস্বর ছিল। ভেড়িয়াতে আমি ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর গাই। সিনেমাতে দেখলে বোঝা যাবে, পুরো ছবি জুড়ে আমার কন্ঠ রয়েছে। নেটফ্লিক্সের ওয়েবসিরিজ ‘কল মাই এজেন্ট’-এর টাইটেল ট্র্যাকটা আমি গেয়েছিলাম। আরেকটা কাজ আসছে আগামী বছরে। জি ফাইভের ‘আফত ই ইশক’ ছবিতে একটা গান গেয়েছিলাম।
প্র: কলকাতাই যখন আপনার শিকড় তাহলে বাংলা ছেড়ে হিন্দি গানে কেরিয়ার গড়ার কথা ভাবলেন কেন?
দেবাঞ্জলি: আমার বাড়িতে কেউ ক্রিয়েটিভ দুনিয়ায় নেই। কলকাতায় থেকে গানে কেরিয়ার গড়া আমার পক্ষে অসম্ভব ছিল। আমার বাড়িতে সবাই অ্যাকাডেমিক। তাই বাড়িতে বাবা-মাকে বলা সম্ভব ছিল না যে, আমি গান নিয়ে কেরিয়ার গড়ব। আমি জানতাম, বাড়ি থেকে মেনে নেবে না। চাকরি করতে করতে হয়তো অন্যকিছু করা যেতে পারে কিন্তু চাকরি ছেড়ে শুধু গান গাওয়ার কথা বলে ওঠা সম্ভব ছিল না। তাছাড়া আমি নিজেও বলিউডে কাজ করতে চেয়েছি। তাই ভেবেছিলাম মুম্বই থেকেই কেরিয়ার শুরু করি।
প্র: এখন অনেকেই রিয়ালিটি শো থেকে খুব তাড়াতাড়ি পরিচিতি পায়, আপনি কখনও রিয়ালিটি শোয়ে যোগদান করার কথা ভাবেননি?
দেবাঞ্জলি: আমি অনেক জায়গায় অডিশন দিয়েছি। কিন্তু ওরা ট্যালেন্ট দেখার পাশাপাশি স্টোরি খোঁজে। ওরা স্টোরি পেলে তবেই ট্যালেন্ট দেখে। ১৫-১৬ বছর থেকে অনেক অডিশন দিয়েছি। কিন্তু আমি দেখেছি ১০ জনকে নিলে হয়তো ২ জনের স্টোরি নেই, বাকি সবার কোনও দুঃখের গল্প আছে। দুঃখের গল্প না থাকলে রিয়ালিটি শোয়ে জায়গা পাওয়া মুশকিল। আমি অনেক জায়গায় গিয়েই সেটা বুঝেছি। শেষ রাউন্ডে গিয়েও বাদ পড়েছি। মুম্বই গিয়ে বুঝলাম, যেটা আমি ভাবতাম ওটাই সত্যি। একটাই রিয়ালিটি শো করেছি ২০১৭ সালে। দূরদর্শনে টেলিকাস্ট হয়েছে ‘সুরসাগর’। তবে রিয়ালিটি শো আমার জন্য নয়। ওটা আমার সময় নষ্ট মনে হয়। তবে আমার বন্ধুরা অনেকেই রিয়ালিটি শোয়ে আছে। আমার যদি কোন গল্প থাকেও, সেটা আমি ন্যাশনাল টেলিভিশনে আলোচনা করতে পারব না। অনেকেই বলে কিন্তু আমি পারতাম না।
আরও পড়ুন- Pathaan : 'এরপর তো পোশাক ছাড়াই সামনে আসবে...' 'পাঠান' বিতর্কে খোঁচা শক্তিমানের
প্র: যখন স্ট্রাগল করছিলেন তথন কী কোনও সমস্যায় পড়েছিলেন কখনও?
দেবাঞ্জলি: বম্বেতে শুরুর দিকে কিছু বোঝা যেত না। অনেকেই অনেক বড় বড় কথা বলত। কিন্তু একটা সময় পর বুঝতাম, টাইম পাসের জন্য ডাকছে। ওর কাছে হয়তো কাজই নেই। পরিস্থিতি এরকমও হয়েছে যে, এক-দুবার কথা বলার বুঝেছি, কী বলতে চাইছে। সেটা আমি আন্দাজ করতে পারতাম। তবে সেই লোকের সংখ্যা ২০-৩০ শতাংশ। বাকি সবাই ভালোই।
প্র: বাংলায় কাজের কী পরিকল্পনা রয়েছে?
দেবাঞ্জলি: এখন আপাতত নেই। কলকাতায় থাকি না বলে সেরকম যোগাযোগও নেই। কেউ যোগাযোগ করলে কাজ করতে রাজি। তবে এসভিএফ থেকে আমার আর আকৃতি কক্করের দুগ্গা এলো যে গানটা বেরিয়েছিল সেটা ভাইরাল হয়েছিল। অনেককে দেখেছি রিল বানাতে। সেটার জন্য নিজেকে আশীর্বাদধন্য মনে হয়।
প্র: এখন বাড়ির লোকেরা কী বলে?
দেবাঞ্জলি: সবাই খুব ভালো বলে, তাঁরা খুবই খুশি ও গর্বিত। এখন সবাই বুঝতে পারে যে, চাকরি ছেড়ে ইন্ডাস্ট্রিতে জায়গা পেতে একটু টাইম লাগে। কঠোর অধ্যবসায়ের পাশাপাশি কপালের জোরও লাগে। তবে সবাই এখন খুব খুশি।