রণিতা গোস্বামী: ভেঙ্কটেশ ফিল্মসে ফিরছেন দেব। এখবর প্রকাশ্যে এসেছিল আগেই। আগেই প্রযোজনা সংস্থা SVF-এর তরফে জানানো হয়েছিল, ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে হেঁটেই তৈরি হবে পরিচালক ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়ের নতুন ছবির চিত্রনাট্য। বাংলার নবজাগরণের সমসাময়িক সত্যি ঘটনার অবলম্বনেই তৈরি হতে চলেছে ছবিটি। এখবর জানার পরই ওই ছবি নিয়ে সিনেমাপ্রেমীদের মধ্যে কৌতুহল ক্রমাগত বাড়তে থাকে। তবে কী এমন রয়েছে ওই ছবির গল্পে? দেবই বা কোন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করতে চলেছেন? এ বিষয়ে এতদিন এক্কেবারেই মুখে কুলুপ এঁটেছিল প্রযোজনা সংস্থা কিংবা পরিচালক। তবে এ বার দেবকে নিয়ে তাঁর এই ছবি বিষযে মুখ খুললেন পরিচালক ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

কী এমন রয়েছে আপনার এই ছবিতে?


ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়- দেখো, আমি বারবারই বাঙালির চেনা ইতিহাসের অচেনা দিক নিয়ে যাতে ছবি করা সেই চেষ্টাই করছি। এটাও সেরকমই একটা চেষ্টা। বাঙালি বরাবরই ফুটবল পাগল একটা জাতি, আমিও অবশ্য তাঁদের মধ্যেই পড়ি। (হাসি) সেই জায়গা থেকেই আমি এই ছবিটা বানাচ্ছি। নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারীর মতো একজন মানুষ, যাঁকে আমি প্রায় যুগপুরুষের জায়গায় বসাই। ওই সময় যাঁর হাত ধরে এতকিছু সব ঘটে গিয়েছে। সেটাই আমি আমার ছবিতে তুলে ধরতে চলেছি। আসলে কোথাও তো ওনাকে নিয়ে একটা বিস্মৃতির জায়গা তৈরি হয়েছে, সেইখান থেকেই আমার এই ছবিটি বানানোর কথা মাথায় এসেছিল। ওনার হাত ধরেই আমি বাঙালির হৃত গৌরব পুনরুদ্ধারের একটা চেষ্টা করতে চাই বলতে পারো। 



আমরা কি এটাকে নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারীর বায়োপিক হিসাবে ধরতে পারি?


ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়- না, এটা বায়োপিক এক্কেবারেই নয়। আবার আমি কোনও ডকুমেন্টরিও বানাচ্ছি না। সিনেমা বানাতে গেলে সিনেমার সব শর্ত মেনেই আমি ছবিটি বানাবো। গল্পের প্রয়োজনে ওনার যতটুকু নেওয়ার, ততটুকুই নেব। সুন্দর করে একটা গল্প বলতে গেলে যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকুই। একটা মানুষ যিনি সে সময় ছিলেন, তাঁর হাত ধরে কী কী হয়েছিল, কীভাবে তিনি কী করলেন সেই সময়টাকে ঘিরেই একটা গল্প বলার চেষ্টা করবো। 


বাঙালি ফুটবলপ্রেমী ঠিকই, তবে এখন এই আধুনিকতার সময়ে আমরা যখন ইউরোপীয়ান ফুটবল দেখতে অভ্যস্ত, সেখানে এত পুরনো সময়ের ফুটবল নিয়ে দর্শক কতটা আগ্রহী হবে বলে মনে হয়?


ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়- আমার মনে হয় এটাই একদম সঠিক সময়। একটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা তো চলছেই। এখন নতুন করে বহু বাঙালি ফুটবলার উঠে আসছে। আমার মনে হয় এই ঘুরে দাঁড়ানোর যে গল্পটাই বলতে হবে। দেখাতে হবে আমরা সেদিনও পারতাম, আজও পারি। সেখান থেকেই এই গল্পটাকে আমার অসম্ভব প্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে। আর অ্যাচিভমেন্টের কিন্তু স্থান, কাল, পাত্র হয় না। যে কোনও অ্যাচিভমেন্টের গল্পই যেকোনও সময় ঠিক করে বললেই মানুষের ভাল লাগবে। আর সত্যি বলতে কি জানো, এ ধরনের হারিয়ে যাওয়া মানুষকে আবারও ফিরিয়ে আনা বা সাধারণ মানুষকে এধরনের একটা মানুষের সম্পর্কে জানানো এটার বোধহয় কোনও সময় হয় না। ওনার মতো মানুষকে নিয়ে যতটুকু কথা তুলে ধরতে পারছি বা পারবো, তাতেই আমি ভীষণ খুশি। 


এত বড় একটা ইতিহাস সিনেমায় কতটাই দেখানো যাবে?


ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়- সম্পূর্ণ ইতিহাস তুলে ধরা আমার উদ্দেশ্য নয়, শুধু আমি ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে একটা গল্প বলতে চাই। আমি তো ঐতিহাসিক নই, আর আমি ইতিহাস বই লিখতেও যাচ্ছি না। তবে নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারীকে নিয়ে আমরা অনেকটাই গবেষণা করেছি। তাঁরে নিয়ে পড়াশোনা করতে হচ্ছে। কেন তাঁকে 'Father Of Indian Football' বলছি আমরা সেটা দর্শককে বোঝাতে হলে এটুকু করতেই হবে। একটা ছবি যেখানে নগেন্দ্রপ্রসাদই কেন্দ্রীয় চরিত্র, তাঁকে নিয়েই ইতিহাস ও কল্পনা সবকিছু মিশিয়েই একটা গল্প বলা। দর্শক যখন দেখবে তাঁদের যেন ভালো লাগে। যেমন লক্ষ্মীবাইকে নিয়ে ছবি হল, সেটা করতে গিয়েও তো কিছুটা কল্পনার আশ্রয় নিতেই হয়েছে পরিচালক ও চিত্রনাট্যকারকে। অথচ সেটা ঐতিহাসিক চরিত্র। তবে সিনেমা বানাতে গেলে কিছুটা কল্পনা তো চলে আসবেই। 


নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারীর চরিত্রে দেবকে কতটা মানাবে বলে মনে হয়?


ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়- তুমি যদি নগেন্দ্রপ্রসাদে পুরনো ছবি দেখো, দেখবে দেবের সঙ্গে একটা অদ্ভুত চেহারার সাদৃশ্য রয়েছে। অদ্ভুত মিল! নগেন্দ্র প্রসাদকে নিয়ে যদি পড়ো, তাঁর শারীরিক গঠন নিয়ে যে বর্ণনা সেটা পড়লে দেখবে তুমি দেবকেই দেখতে পাচ্ছো। সেই জায়গা থেকেই আমি অন্তত ওনার চরিত্রে দেবকে ছাড়া আর কাউকেই ভাবতে পারছি না।


নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারীর খেলা দেখা স্বয়ং বিবেকানন্দও বলেছিলেন 'গীতা পাঠের থেকেও ফুটবল খেলা ভালো', ছবিতে কি বিবেকানন্দের মতো চরিত্রও উঠে আসবে?


ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়- আমার মনে বিবেকানন্দের যিনি একজন শ্রেষ্ঠতম বাঙালি বা ভারতীয়, যিনি গোটা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম এক ব্যক্তিত্ব। তাঁর কথা তো সিনেমায় আনলে আমি কল্পনায় আশ্রয় নিতে পারি না। তাঁর চরিত্র সিনেমায় থাকলে ইতিহাস মাথায় রেখেই আমায় সবটা করতে হবে। আমার মনে হয় ওই আলোচনা এখন থাক। কারণ, আমরা এখনো জানি না গল্পের পরিবেশনা কীভাবে হবে। এখন শুধু এটুকু বলতে পারি নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারীকে নিয়ে সিনেমাটা হচ্ছে।


ছবির শ্যুটিং কবে থেকে শুরু হচ্ছে?


ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়- জানুয়ারি প্রথম সপ্তাহ থেকে শ্যুটিং শুরুর কথা রয়েছে।


পরিচালক ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা থেকেই স্পষ্ট আগামী বছরে তাঁর হাত ধরেই আরও 'ম্যাগনাম অপাস' উপহার পেতে চলেছে সিনেমাপ্রেমী বাঙালি। তাঁর ছবির হাত ধরেই বাঙালি যে তাঁর হৃত গৌরব ফিরে পাবে এবং ফুটবল প্রেম নিয়ে নস্টালজিক হয়ে উঠবে তা আশা করাই যায়।