সৌরভ পাল


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

মন্দিরতলা থেকে মুম্বই, জার্নিটা একেবারেই সহজ ছিল না। স্রেফ রূপকথার গল্প বুনবে বলেই বাসন্তী দেবী কলেজের ইংরাজি অনার্সের মেয়েটা সেদিন ঘর ছেড়েছিল। ও জানত, একটা অনিশ্চিয়তার দিকে ঝাঁপাচ্ছে। তবে কথায় আছে না, ‘নো রিস্ক নো গেইন’, ঝুঁকি না নিলে সাফল্য জোটে না! অগত্যা, 'মরণঝাঁপ'টাই দিল ঈশিকা।


‘চৌকাঠ’ এই বাঙালি অভিনেত্রীর কাছে বড় ব্রেক, ঠিকই। কিন্তু, ঈশিকাকে ‘ব্রেকিং নিউজ’ করেছে অনুরাগ কাশ্যপের ‘সেক্রড গেমস’। নওয়াজউদ্দিনের সঙ্গে একটা দৃশ্যই ঈশিকার জীবনের ‘ভাইরাল মোমেন্ট’। অনুষ্কা শর্মার ‘পরি’-তেও ছিলেন ঈশিকা। ছিল-ই বা কেন বলছি! আছেন। তবে এডিট টেবিল থেকেই বাদ পড়েছে ঈশিকার দৃশ্যগুলি, ফলে নাম রয়েছে শুধুই 'ক্রেডিট লাইনে'। তবে এবার গোটা ‘ক্রেডিট’-ই (কৃতিত্ব) ঈশিকার এবং অবশ্যই এটা হয়েছে তাঁর অভিনয়ের জন্য।


যৌনদৃশ্যে একই ফ্রেমে নওয়াজ-ঈশিকা। আর পরিচালনায় অনুরাগ কাশ্যপ। বোঝা গেল, চরিত্র যত 'ছোট'-ই হোক না কেন, অভিনেতার ক্ষমতা আছে তা বড় করে দেওয়ার। কয়েকটা সেকেন্ড, কয়েকটা সংলাপ, মুখের কিছু ভঙ্গি- এগুলিই খেলাটাই ঘুরিয়ে দিতে পারে। অনেকের মতোই এটা প্রমাণ করেছেন ঈশিকাও।



টলি(উড) থেকে বলি(উড)- সবাই এখন ঈশিকাকে এক ডাকে চেনেন। কেউ চেনেন নান্দীকারের পরিচয়ে, কেউ চেনেন থিয়েটার আর্টিস্ট হিসেবে, আবার কারও কারও কাছে ঈশিক সেই মেয়েটা, যাকে নিয়ে টিনেজাররা বলাবলি করে, ‘উ-ফ-ফ নওয়াজের সঙ্গে সেক্স সিনটা যা করল না’! বেশ কিছু পর্নগ্রাফি সাইটে ঈশিকার এই দৃশ্য এখন ট্রেন্ড করছে। রবিনা টন্ডন, বিদ্যা বালান, কঙ্গনা, রাধিকা আপ্তের যৌনদৃ্শ্যর ক্লিপিংসের সঙ্গে তালিকায় আছে ‘সেক্রড গেমস’-এর এই দৃশ্যও!


ঠিক এখানেই ঈশিকাকে প্রশ্ন- সাফল্যের সঙ্গে হাত ধরাধরি করে বিড়ম্বনাও তো চলে এল। কী বলবেন?


উত্তর দিতে গিয়ে প্রথমে তিনি কিছুটা অবাক। তারপর মৃদু হাসে বাংলা-ইংরাজি মিশিয়ে যা বললেন তা ঠিক এ রকম- "যে দৃশ্যটা আমি করেছি, সেটা আমি জানি। আমার কোনও সমস্যা নেই। আমার খারাপ লাগছে না, তবে না থাকলেই ভাল হত। আসলে মানুষ কীভাবে আমাকে দেখবে, আমার কাজ দেখবে, সেটা আমার হাতে নেই। আপনা আপনা নজরিয়া হ্যায়"।


মন্দিরতলা থেকে মুম্বই, জার্নিটা কেমন ছিল?


উত্তর- মুম্বই এসেছিলাম একটা বাগদান অনুষ্ঠানে। ঠিক ছিল সামান্য কয়েকদিনই থাকব। পরে হাতে সময় নিয়েই বোম্বে-তে আসি। এরপর বিশ্বদীপ চট্টোপাধ্যায়ের (সাউন্ড ডিরেক্টর) সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারপর...



এভাবেই শুরু হয় ঈশিকার ‘মুম্বই ডায়েরিস’। মাথার উপর ছাদ নেই। হাতে কাজ নেই। অচেনা শহর। শুরু হল ঈশিকার ‘অস্তিত্বের সংগ্রাম’। বাড়িওয়ালার মার খেয়েছেন। জুটেছে ‘নষ্ট মেয়ে’র কটূক্তিও। তবুও দমে যাননি। “আমি প্রতিভাবান, অভিনয়টা পারি। আর বম্বে প্রতিভাবানদের ফিরিয়ে দেয় না”, কেবল এই বিশ্বাস নিয়েই আজ সাফল্য ছুঁয়েছেন ঈশিকা। অথচ, হাওড়ার মন্দিরতলার এই মেয়ে একটা সময় পর্যন্ত এটাই বিশ্বাস করতেন না, যে তিনি অভিনয় করতে পারেন। পরিবার, ব্যক্তিগত সম্পর্ক, চারিদিকের পরিস্থিতি এমন জায়গায় তাঁকে পৌঁছে দিয়েছিল, যে আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছিলেন ঈশিকা। সে যাত্রায় বাঁচিয়ে দিয়েছিল রাজকুমার হিরানির ‘থ্রি ইডিয়েটস’। তবে এখন আরও বেশি করে বাঁচতে চান এবং জীবন উপভোগ করতে চান তিনি। ঈশিকার ইচ্ছা, ‘বোম্বে’তে তাঁর বাড়ি হবে।


তার মানে, কলকাতায় কি আর ফিরবেন না?


উত্তর- না। আর না।


ভাল কাজের সুযোগ থাকলেও না?


উত্তর- না। ভাল কাজের সুযোগ থাকলে কলকাতায় আসব, কাজ করব, আবার বম্বে ফিরে আসব।


কলকাতা ইন্ডাস্ট্রি আর মুম্বই ইন্ডাস্ট্রি-র মধ্যে ফারাক কতটা?


উত্তর- উ-ম-ম। এই প্রশ্নে সবাই ডিপ্লোম্যাট হবে, কিন্তু আমি সেটা হব না। দেখো, কলকাতায় অনেক প্রতিভা। সেই অনুযায়ী কাজের জায়গাটা খুবই ছোট। একটা অনিশ্চয়তাও রয়েছে। বম্বেতে পরিসরটা বড়। কাজের পারিশ্রমিকও বেশি। তবে হ্যাঁ, এখানে যেমন আয়, তেমন ব্যয়। একথা বলতে বলতেই জুড়ে দিলেন ‘সেক্রড গেমস’-এ অভিনয়ের অভিজ্ঞতা। অনুরাগ কাশ্যপের থেকে অভিনয়ের তালিম পেয়েছেন। পরিচালক তাঁকে বলেছেন, চোখের ব্যবহার করতে। আর নওয়াজের টিপস, “ঈশিকা, তুই এমনিতেই এক্সপ্রেসিভ। নেভার এভার ট্রাই টু অ্যাক্ট”।


সবমিলিয়ে বেশ খুশিই তিনি। তবে হাসিতে গাল উঠে গেল বাবার কথায়। যৌনদৃশ্যে অভিনয়ের বিষয়টা আগে থেকেই মা-কে জানিয়েছিলেন, ‘ম্যানেজ’-ও করে ফেলেছিলেন। তবে বাবার ব্যাপারটা বুঝে উঠতে পারছিলেন না। সাক্ষাত্কারের একেবারে শেষে একমুখ হাসি নিয়ে ঈশিকা দে বললেন, “আমি কখনও চাইনি মা-বাবর সঙ্গে কোনও বিষয়েই আমার ভুল বোঝাবুঝি হোক। আমি চেয়েছি তাদের গর্বিত করার। আজ সেটা পেরেছি। আমি ভীষণ খুশি”।