শুভঙ্কর চক্রবর্তী : খবরটা গতকালের। ‘লাইফ ইন এ মেট্রো’র পরিচালক অনুরাগ বসু, আনতে চলেছেন আরেকটি নতুন ছবি। ‘মেট্রো ইন দিনো’। কাস্টিংয়ে রয়েছে নতুন চমক। সারা আলি খান, আদিত্য রয় কাপুর, অনুপম খের, নীনা গুপ্তা, পঙ্কজ ত্রিপাঠী, কঙ্কনা সেনশর্মা, আলি ফজল এবং ফাতিমা সানা শেখ। এত সব ভাল খবরের মধ্যে যা কিছুটা হলেও মনখারাপের, তা হল দু’জন মানুষের কথা মনে করাবে অনুরাগ বসুর নতুন এই ছবি। কোনও না কোনওভাবে।  প্রথমজন ইরফান খান। মানে ‘লাইফ ইন এ মেট্রো’র মন্টি। বছর ত্রিশেকের সেই ভদ্রলোক। একটু দুষ্টু টাইপের। খানিক নিমফোম্যানিয়াক। তবে ভালবাসা পেতে মন্টি ঘোড়া ছোটাতে পারে। রেল স্টেশন লাফে-লাফে ওতরাতে পারে অবিলম্বে। লেডিজ কামরায় শ্রুতিকে (কঙ্কনা সেন শর্মা) জড়িয়ে ধরতে পারে।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

এবং দ্বিতীয় মানুষটি, কেকে। ‘লাইফ ইন এ মেট্রো’র ৭টি গানের মধ্যে দুটি গেয়েছিলেন কেকে। ‘অলবিদা’ এবং ‘ও মেরি জান’। দুটি গান ছাপিয়ে গিয়েছে বাকি সবগুলোকে। কেকের এই হঠাত্‍ চলে যাওয়ায় অদ্ভূতভাবে মিশে গিয়েছে ‘অলবিদা’ গানটি। যথাযথ সুর আর লিরিক্সের সঙ্গে কেকের প্রয়াণ যেন এক অবিচ্ছেদ্য মুহূর্ত তৈরি করতে পেরেছে শ্রোতাদের মনে। যা কেকের গানকে ‘অলবিদা’ বলাতে পারবে না কোনও কালেই। অনুরাগের ‘মেট্রো ইন দিনো’র গান, সুরে বাঁধতে চলেছেন প্রীতম চক্রবর্তী। বাড়ি ফিরতে ফিরতে, গতকালের নতুন ছবির খবরটি এবং মনে চলা যাবতীয় মনখারাপ চলছে যখন, মনে হল, একবার ফোনে কি ধরা যেতে পারে অনুরাগের ছবির সুরকার প্রীতম চক্রবর্তীকে? তাইই হল। তবে, রিং হতেই কেটে গেল। বোঝা গেল তিনি ব্যস্ত। মেসেজ এল। ‘কলিং ইউ আফটার ফিফটিন মিনিটস’। ফোন এল। তবে সময়মতো নয়। কুড়ি মিনিট। টেলিফোনিক কথোপকথন পুরোটাই তুলে ধরা হল...


সরি, এই স্টুডিয়োয় ছিলাম...বলো, কেমন আছো?


আমি ভাল আছি, আপনি কেমন?


আমার চলছে। অনেক কটা কাজ নিয়ে এগোচ্ছি। নাস্তানাবুদ অবস্থা।


সে তো ভাল কথা। বন্ধুর, নতুন ছবি নাকি…‘মেট্রো ইন দিনো’তে আবার একসঙ্গে...


অনুরাগের কাজ তো আছেই। বাকিও আছে কয়েকটা। আসলে ওর সঙ্গে কাজ করার একটা আলাদা আনন্দ আছে। মজা আছে। ‘মেট্রো ইন দিনো’তে ও আর আমি একসঙ্গে কাজ করছি। আর ‘লাইফ ইন এ মেট্রো’ আমার খুব কাছের এক ছবি। ভীষণ কাছের। তা-ই বারবার পুরনো কথা মনে পড়ে যায়...পনেরো বছর হতে চলল প্রায়...


হ্যাঁ...লাইফ ইন এ মেট্রোর আলাদা গল্প, জীবনের আলাদা-আলাদা অনুভূতি-সম্পর্কের কথা বলেছিল, তাই বোধহয় দর্শকের মনে আজও গেঁথে রয়েছে...আর সঙ্গে...


(থামিয়ে) কেকের গান...(খানিক চুপ থেকে)



হুম...
আসলে, কী জানো, শুধু গান আমাকে আর ওঁকে একসঙ্গে মেলায়নি। কেকের সঙ্গে সম্পর্কটি যে কী ছিল তা সত্যি বলে বোঝাতে পারব না। ও চলে গিয়েছে। কিন্তু আমার কাছে ও রয়ে গিয়েছে। ওকে ছাড়া আমার অনেক কাজ মনে হয় অসম্পূর্ণ হয়ে থাকছে। ‘জন্নত’ যদি আবারও হয়, তখনও মানুষ ওঁকে বারবার খুঁজবে। শুধু অনুরাগের এই ছবিতেই নয়। কিছুদিন আগে আমি একটা ছবিতে কাজই করলাম না। কারণ আমি জানতাম ছবির গানগুলো ও (কেকে) ছাড়া আর কেউ গাইতে পারত না। গায়ক তো বটেই ওর মতো মানুষ আমার জীবনে খুব কম এসেছে। ওকে আমি রোজ মিস করি। আর অনুরাগের ছবিতে আবার দর্শক-শ্রোতা কেকে-কে মিস করবে। করবেই।



আরেকজন মানুষ যাঁকে ছাড়া ‘লাইফ ইন এ মেট্রো’ লাইফলেস হয়ে পড়ত, তিনি ইরফান খান...
আমি জানি ইরফানকে সব থেকে বেশি মিস করবে অনুরাগ। অ্যান্ড কঙ্কনা টু। ইরফান অসামান্য অভিনেতা। কত অভিনেতা ইরফানকে আইডোলাইজ করে। লাইফ ইন এ মেট্রোতে যদি সব থেকে কেই লাইভলি ছিল, সেটা ইরফানই। খারাপ লাগে...(থামে)। আমার লাইভ শোগুলোয় ‘লাইফ ইন এ...মেট্রো’র গান যখন গাই, তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে ভিডিয়ো ক্লিপ চলে। তাতে ইরফান থাকে। ওঁর হাসি, ওঁর পাগলামো, ঘোড়ার সিন। যখন গাইতে গাইতে পিছনে ফিরে তাকাই, মনে হয় সব আনরিয়েল। এমন কিছুই হয়নি। কেউ কোথাও যায়নি। সবাই আছে। ইরফান আছে। কেকে আছে...(আবার চুপ)


এবার একটু হ্যাপি-হ্যাপি কথা হোক... আপনার ছাত্রের প্রসঙ্গে আসি?


আমার ছাত্র..? কে?


অরিজিত্ সিং...
হাহাহাহা। কী যে বলছো…


তাই-ই তো...অরিজিতের কোনও ইন্টারভিউতে আপনার নাম উঠলে, ওঁর মুখে তো শুধুই প্রশংসা...
ও এমনই...। ওকে আমি বড় হতে দেখেছি। ও যত বড় হচ্ছে, তত গর্ব হয়। ওর গান নিয়ে আমার বলার কিছু নেই। সারা বিশ্ব আমার থেকে বেশি জানে। তবে মানুষ অরিজিতকে যা দেখেছি, তার থেকে বলি, হি ইজ ওয়ান অফ এ কাইন্ড।


 ‘মেট্রো ইন দিনো’তে অরিজিৎ আছে কি? খবরটা দিন?
(আবার হাসি)। থাকবে হয়তো আবার নাও থাকতে পারে।



শেষ এবং কঠিন এক প্রশ্ন...রাজি?
হোক।


প্রীতম চক্রবর্তীর সুরে অরিজিতের গলায় কোন গান আপনার এখনও অবধি মোস্ট ফেভারিট...
খেয়েছে! একটা বলতে পারব না। আগেই বলে দিলাম। অনেকগুলো আছে।


তাই বলুন না...
‘ফির লে আয়া দিল’, ‘মেরে ঢোলনা’ও কী ভাল গেয়েছে। ‘রঁসিয়া’ অরিজিতের গাওয়া আরেকটা দারুণ গান।


শুনলাম, কলকাতায় আসছেন...
আসছি। কবে বলব না। (হাসি)...