শর্মিলা মাইতি


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

ফ্যান- ***1/2


দিলওয়ালে-র অনেক আগেই রিলিজের কথা ছিল ফ্যান-এর। সবকিছু ঠিকঠাক চললে এ.ক বছর আগেই মুক্তি পেত এই ছবি। কিন্তু, কিং খানের উচ্চাকাঙ্খা বলে কথা! বাণিজ্যিক বুদ্ধিতে তিনি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ধনকুবেরদের থেকে এগিয়ে। ডিডিএলজে জ্বর জিইয়ে রাখার উদ্দেশ্যেই দিলওয়ালে নিয়ে এলেন সুগন্ধি বিরিয়ানির মতো। দুর্ভাগ্য এটাই, স্মৃতিবিজড়িত সেই দিল তো আর ফিরল না, বরং দেশের অগণিত ফ্যান ক্লাব মুষড়ে পড়ল। কাজেই, ফ্যান রিলিজের আগে অগ্রিম ঢাকঢোলের প্রিপারেশনেও স্ট্র্যাটেজি বদল। সব আঞ্চলিক ভাষায় ফ্যান অ্যানথেম।


প্রথম দিনে ষোলোয় সেরা শাহরুখ 'ভক্ত'


এতগুলো শব্দ খরচের কারণ, ফ্যান ছবিটা শাহরুখের জীবনে অন্যতম চ্যালেঞ্জ। মুষড়ে পড়া ফ্যান-বৃক্ষে যথেষ্ট সার-জল দিতে তো হবেই, স্ট্যাটিসটিক্সে ছাপিয়ে যেতে হবে সলমনকেও। এসবই বহিরঙ্গে। অন্তরঙ্গের ফ্যান কিন্তু আনপ্রেডিক্টেবল। দাপুটে স্টোরিলাইন গল্পের গরুকে বার বার গাছে তুলেও ফ্যান-মননে দৃঢ বিশ্বাসযোগ্যতা আদায় করেছে, এটাই এক কথায় ফ্যান-এর সাফল্য।


ভেঙে বললে, শাহরুখ ইন অ্যান্ড অ্যাজ ফ্যান-এ কোনও ফাঁকই রাখেননি শাহরুখ। প্রথম ফ্রেম (যা দিলওয়ালে-র সেই বিখ্যাত কোরিয়োগ্রাফি, যদিও প্রশ্ন এরকম তৃতীয় শ্রেণির ফেটে-যাওয়া ইউটিউব ভিডিয়ো ডাউনলোড করলেন কেন এডিটর?) থেকে শেষ দৃশ্য শুধুই শাহরুখ-পেস্ট্রি। প্রতি কামড়েই ঠাসা ফ্রেশ শাহরুখকে পাবেন দর্শক। চোখের পলকও পড়তে দেবেন না। স্টার আরিয়ান খান্না এবং ফ্যান গৌরব চাঁদনা, কখনও আলাদা ফ্রেমে, কখনও এক ফ্রেমে। এযুগে ফ্যানের সংজ্ঞা বদলেছে। পাল্টেছে স্টার-ফ্যান ইকোয়েশন। টেক স্যাভি যুগে ফেসবুক, টুইটার হোয়াট্স্যাপ অনেকটাই কাছাকাছি এনে দিয়েছে তারকা ও অনুরাগীদের। অটোগ্রাফ বুক হাতে স্টারের পেছনে দৌড়ে সইটুকু যোগাড় করাটা সেকেলে। সবাই চায় তারকার সঙ্গে এক ফ্রেমে সেলফি তুলতে। অর্থাত্‍ কি না, নেমে এসো আমার সমতলে। আরও এগিয়ে কেউ বা তারকার কাঁধে হাত রেখে বলতে চায়, হাউ আর ইউ বাডি! আর এই যুগের সেন্টিমেন্টকে পাথেয় করেই কাহিনির সূত্রপাত। ফ্যানের অনুরাগ বনাম তারকার অহমিকা। যে তারকা বা ফ্যান কেউই নিরীহ, রিপু-রহিত নয়। দু তরফেই মনুষ্যত্ব আছে, আছে অন্তহীন চাহিদা। তারকা চায় আবেগের আফিম দিয়ে বশে রাখতে অনুরাগীদের, না-ছোঁয়া দূরত্ব থেকে। অনুরাগের স্রোত যেন অটুট থাকে, সংখ্যায় ও বহরে বাড়ে। অথচ তার সর্বগ্রাসী ঢেউ যেন কোনওমতেই না এসে পড়ে তারকার বিলাসবহুল ব্যালকনিতে। বাইরের মিষ্টি-সুখের বর্ম ভেঙে কখনও যেন এই তুচ্ছতার সম্পর্কটা না বেরিয়ে আসে!


অথচ ফ্যান-এ সেই রেয়ার কেসটাই ঘটে গেল। মায়ের হাতের বানানো হালওয়াই প্যাকেট আর পাড়ার সুপারস্টার কনটেস্ট-এ জিতে নেওয়া ট্রোফি, দিতে গৌরব চাঁদনা দৌড়ে এসেছিল জন্মদিনে তারকার বাড়িতে পাঁচ মিনিটের সাক্ষাতের জন্য। সিকুরিটির প্রহার আর ফ্যানসমুদ্রের নির্মম ধাক্কায় পিষ্ট সেই স্বপ্ন। স্বপ্নের তারকাকে ছোঁয়ার জন্যে এবার অন্য রাস্তা ধরল সে। পৌঁছল তারকার মুখোমুখি। কিন্তু সে কী নির্মম অভিজ্ঞতা। বদলে গেল গোটা জীবনের উদ্দেশ্য।


যতটা যুক্তিগ্রাহ্য কাঠামো মেনটেন করা হল স্টার আরিয়ান খান্না-র চরিত্রায়ণে। গৌরব চাঁদনার ক্ষেত্রে সেটা ততটাই ধোঁয়াশার। কোথা থেকে সে পৌছে গেল লন্ডন, সেখান থেকে ডুব্রোনিক, সে ভাবনা ভাবতে বসলে ফিল্ম উজাড় হয়ে যাবে। বরং স্টার আর ফ্যানের মুখের সাদৃশ্যটাকে সিনেমাটিক লাইসেন্স ভেবে নিয়েই এগোলে ফিল্মটার এনটারটেনমেন্ট ভ্যালু খুঁজে পাওয়া যায়। টানটান রুদ্ধশ্বাস। উদ্দাম নাটকীয় চেজ সিকোয়েন্স, যার অনেকটাই বিশ্বাসের অযোগ্য। খুলে-আম পাবলিক প্লেসে রাস্তায় দৌড়োচ্ছেন দেশের স্বনামধন্য তারকা, তাও তাঁর বিগড়ে যাওয়া ফ্যানের পেছনে! এক কুইন্টাল হাজমোলাতেও হজম হবে না। বরংতর্কের খাতিরে মেনে নেওয়া যায় তারকা ও ফ্যানের দৃষ্টিভঙ্গিমাকে। তারকা বোঝাতে চায় কারওর ছায়া হয়ে কখনও কৃতী হওয়া যায় না, দুজনের সামাজিক অবস্থানের দুস্তর ব্যবধানটাই সত্য। ফ্যান বোঝাতে চায়, মিথ্যের রাজত্ব থেকে তোমাকে নামতেই হবে প্রভু, ফ্যানদের ভৃত্যজ্ঞানে দেখা চলবে না। অসভ্যতামির জন্য সরি বলতেই হবে!


তবুও, ফ্যান দর্শকের ভাল লাগবে। দিলওয়ালে-র চেয়ে বেশি। পরিচালক মণীশ শর্মার সাফল্য এখানেই। ভাল লাগবে সেক্রেটারির ভূমিকায় সায়নী গুপ্তর অভিনয়। বলিউড তাঁর জন্য বড় জানলাটাই খুলবে।