Pannalal Bhattacharya: কালীর গান গাইতে-গাইতে মা ভবতারিণীর দর্শন কি পেয়েছিলেন পান্নালাল?
Pannalal Bhattacharya: কেউ বলে তাঁর গানের সব থেকে বড় গুণ, গান শেষ হওয়ার পরেও একটা রেশ থেকে যায়। কেউ বলেন, অদ্ভুত মায়া আছে তাঁর উচ্চারণে, তাঁর গায়নে, অদ্ভুত সারল্য তাঁর গায়কিতে! ১৯৬৬ সালের আজকের দিনে তিনি প্রয়াত হন। আত্মহত্যা করেছিলেন তিনি।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: 'আমার চেতনা চৈতন্য করে দে মা', 'আমি মন্ত্রতন্ত্র কিছু জানিনে মা', 'আমি সকল কাজের পাই হে সময়', 'অপার সংসার নাহি পারাপার', 'ভেবে দেখ মন কেউ কারো নয়', 'কালো মেয়ের পায়ের তলায়', 'মায়ের পায়ে জবা হয়ে', 'সকলই তোমারই ইচ্ছা'-- পান্নালাল ভট্টাচার্যের অবিস্মরণীয় সব গান। কেউ বলে তাঁর গানের সব থেকে বড় গুণ, গান শেষ হওয়ার পরেও একটা রেশ থেকে যায়। কেউ বলেন, এক অদ্ভুত মায়া আছে তাঁর উচ্চারণে, তাঁর গায়নে, অদ্ভুত সারল্য আছে তাঁর গায়কির মধ্যে! এহেন আশ্চর্য প্রতিভাবান শিল্পী, সঙ্গীতপ্রতিভা পান্নালাল মাত্র ছত্রিশ বছরেই তাঁর জীবনপ্রদীপ নিভিয়ে দিয়েছিলেন। আত্মহত্যা? হ্যাঁ, তাই।
আরও পড়ুন: Pakistan: রক্তাক্ত পাকিস্তান! পরপর বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নৌ-বিমানঘাঁটি...
খ্যাতির মধ্যগগনে থাকা তাঁর মাপের এক শিল্পী কেন আত্মহত্যা করতে গেলেন? শিল্পীসুলভ বিষাদ, শূন্যতার বোধ থেকে?
অনেক রকম ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। তবে সব চেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যাখ্যাটি হল-- পান্নালাল কোনও দিনই নিজের গান নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে পারেননি। তাঁর দাদা প্রখ্যাত শিল্পী ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য নাকি মা ভবতারিণীর দর্শন পেতেন! তাঁর মনে হত, তাঁর কপালে কবে এমন মাতৃদর্শন ঘটবে? মাতৃদর্শন হয়নি। পান্নালাল নাকি শিশুর মতো কাঁদতে-কাঁদতে মাকে ডাকতেন! শেষে দেবীদর্শন না পাওয়ায় অবসাদে, অতৃপ্তিতে আত্মহননের পথ বেছে নেন তিনি। সেই দিনটি ছিল ২৭ মার্চ। ১৯৬৬ সালের ২৭ মার্চ (১৩৭২ বঙ্গাব্দের ১৩ চৈত্র) কলকাতার কাকুলিয়া রোডের বাড়িতে মাত্র ৩৬ বৎসর বয়সে আত্মহত্যা করেন তিনি। সেই হিসেবে আজকের দিনটি বাংলা ভক্তিগীতির দুঃখের দিন, শোকের দিন।
১৯২৯ বা ১৯৩০ সালে হাওড়ার বালিতে জন্ম। বাড়িতে গানের পরিবেশ ছিল। মা ভালো গাইতেন। আর পান্নার ছোটবেলাতেই তো তাঁর দাদা ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য প্রতিষ্ঠিত শিল্পী। পান্নারও খুব গাইবার সাধ, শিল্পী হওয়ার সাধ। ১৯৪৭ সালে সতেরো বছর বয়সে দাদা প্রফুল্ল ভট্টাচার্য পান্নালালকে নিয়ে যান তৎকালীন এইচএমভি'তে। 'আমার সাধ না মিটিল আশা না পূরিল' শ্যামাসঙ্গীত দিয়ে তাঁর সঙ্গীতজীবনের শুরু। পান্নালালের ইচ্ছে ছিল চলচ্চিত্রের নেপথ্য গায়ক হবেন। পাশাপাশি আধুনিক গানও গাইবেন। কিন্তু তখন গাইছেন সব স্টার শিল্পীরা-- শচীন দেববর্মণ, জগন্ময় মিত্র, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এবং তাঁর অগ্রজ স্বয়ং ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য।
দাদা ধনঞ্জয় ভাই পান্নালালকে এই বাস্তবটা বুঝিয়ে তাঁকে ভক্তিমূলক গানেই সীমাবদ্ধ থাকার পরামর্শ দেন। দাদার কথামতো আধুনিক গানের জগতে পা রাখতে চেষ্টা না করে বা ছবির নেপথ্যসঙ্গীত গাইবার স্বপ্ন ছেড়ে দিয়ে শুধু ভক্তিমূলক গানই তুলে নিলেন নিজের কণ্ঠে। ব্যস! যেন ম্যাজিক ঘটে গেল! নিছক সঙ্গীতশিল্পী থেকে হয়ে উঠলেন প্রকৃত অর্থে একজন সাধক। হয়ে উঠলেন সাধক-গায়ক। পান্নালাল তাঁর সমগ্র সঙ্গীতজীবনে সৃষ্টি করেছেন ৩৬টি আধুনিক গান-সহ ১৮টি রেকর্ড, ৪০ টি শ্যামাসঙ্গীতের রেকর্ড। তবে এসবের পাশাপাশি ৩টি বাংলা ছবির গানও গেয়েছেন। 'শ্রী অভয়' নামে তাঁর লেখা ও সুর দেওয়া বেশ কিছু শ্যামাসঙ্গীতও আছে।