রণিতা গোস্বামী


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

হঠাৎই তরুণীর ফোনে আসে একটা অযাচিত ফোন। তোলা মাত্র ব্যক্তিগত ছবি কিংবা ভিডিয়ো ফাঁস করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে চাওয়া হয় মোটা অঙ্কের টাকা। কীভাবে এমনটা হল! তরুণীর চোখেমুখে বিষ্ময়! কিছু বুঝে ওঠার আগেই নজরে পড়ে ফ্ল্যাটে লাগানো সিসিটিভি ক্যামেরা। সেটিই কি আসল কালপ্রিট নাকি বাড়ির কাঁচের জানালা দিয়ে কেউ দূর থেকে ক্যামেরায় ছবি তুলেছে? 


এখানেই শেষ নয়। পরিস্থিতি কিন্তু আরও কঠিন। ডার্ক ওয়েবের দুনিয়াটাই যে কতটা ভয়ঙ্কর সে ছবিই ধরা পড়েছে দেব-রুক্মিণী, পরমব্রত-পাওলি, আদৃত অভিনীত 'পাসওয়ার্ড' ছবিতে। পাসওয়ার্ডে কোনও কিছুই সুরক্ষিত নয়। এমনকি হ্যাকারদের পাতা ফাঁদে সুরক্ষিত নয় স্বরাষ্ট মন্ত্রকের নথিও। ভারতই ইন্টারনেট ব্যবহারকারী দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। ই-কমার্সের ব্যবসার রমরমাও তাই এদেশেই। প্রতি মুহূর্তে আমরা হ্যাকারদের নজরবন্দি। আমাদের পায়ে পায়েই এগোচ্ছে বিপদ। এই বুঝি ফাঁদে পা দিলাম। এমনই একটি সাইবার টেররিজম গ্যাং অনিয়ন। যাঁর মাথায় রয়েছেন ইসমাইলভ (পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়) ও তাঁর স্ত্রী মারিয়াম (পাওলি দাম)। তবে তাঁদের লক্ষ্যটা অবশ্য আলদা। এর পিছনে অবশ্য রয়েছে অন্য এক গল্প। 


এদিকে সাইবার ক্রাইমের তদন্তে নেমে DCDDরোহিত দাশগুপ্তর (দেব) সঙ্গে মোলাকাত হয় আরও দুই হ্যাকার  নিশা(রুক্মিণী মৈত্র) ও আদি (আদ্রিত রায়)এর সঙ্গে। পরিস্থিতি ক্রমাগত জটিল হয়ে ওঠে। শুরু হয় হ্যাকারদের সঙ্গে DCDD রোহিত দাশগুপ্তর লড়াই। তবে কাহিনী কীভাবে এগিয়েছে এটা জানতে হলে 'পাসওয়ার্ড' দেখতেই হচ্ছে। 


আরও পড়ুন- সবকিছুই ডিজিটাল হচ্ছে, বিপদও বাড়ছে, 'পাসওয়ার্ড'-এর ঝুঁকি নিয়ে মুখ খুললেন দেব



গোটা ছবির শুরু থেকে শেষপর্যন্ত অ্যাকশন, থ্রিল, টান টান উত্তেজনা, সবই রয়েছে। ঠিক কী ঘটতে চলেছে? কেই বা আসল কালপিট তা জানতে দর্শকরা যে শেষ অবধি চেয়ার আঁকড়ে বসে থাকতে বাধ্য হবেন তা বলাই বাহুল্য। ছবিতে সবথেকে বেশি যিনি নজর কেড়েছেন তিনি হলেন রুক্মিণী মৈত্র। দুর্দান্ত অভিনয়, চরিত্রের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাঁর বডি ল্যাঙ্গুয়েজ। হলিউড ফিল্মের কায়দায় বাইক চালানো, গান ফাইট, অভিব্যক্তি সবতেই দর্শকদের মুগ্ধ করেছেন তিনি। আবার রেভ পার্টিতে ট্রিপি লাগের মত  গানেও তাঁর বোল্ড, সিডাক্টিভ মুভমেন্ট নজর কেড়েছে। 'পাসওয়ার্ড'এ নিশার ভূমিকায় তিনিই যে পারফেক্ট তা না বললে অন্যায় হবে। অ্যাকশন দৃশ্যে, গান ফাইটে নজর কাড়লেন দেব। এই ছবিতে দেব থেকে বেরিয়ে তিনি DCDD রোহিত দাশগুপ্তর ভূমিকায় এক্কেবারেই পারফেক্ট। 



আর পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় ও পাওলি দামের কথাতেই যদি আসি, তাহলে ওঁরা যে ভালো অভিনেতা অভিনেত্রী সেকথা আর নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। একইভাবে 'পাসওয়ার্ড' এ ইসমাইলভ ও মারিয়ামের চরিত্রে যে একাধিক শেড রয়েছে, প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই অসামান্য অভিনয় পরমব্রত ও পাওলির। ছবিতে আদির ভূমিকায় আদ্রিত রায়ের অভিনয়ের প্রশংসা না করলেও সত্যিই অন্যায় হয়। তিনি যে লম্বা রেসের ঘোড়া তা তিনি 'পাসওয়ার্ড' এ বেশ ভালো করেই বুঝিয়ে দিয়েছেন। 


'পাসওয়ার্ড'-এর অসামান্য মেকিংয়ের জন্য প্রশংসা প্রাপ্য পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়েরও। তিনি এই ছবিটি বানানোর জন্য যে যথেষ্ঠ রিসার্চ করেছেন তা 'পাসওয়ার্ড' দেখলেই বুঝতে পারবেন। ছবিতে অসংখ্য তথ্য, প্রযুক্তি, হলিউডি কায়দায় মেকিং কোনওকিছুই বাদ রাখেননি তিনি। বাংলা ছবিতে এমন কার চেজিংয়ের দৃশ্য এর আগে কোনও বাংলা ছবিতে দেখা গেছে বলে তো মনে পড়ে না।  একটা কথা বলতেই হচ্ছে, বাংলায় অন্যধারার যে বানিজ্যিক ছবিকে অন্যমাত্র দিতে, কনটেন্ট ভিত্তিক করে তোলার যে চেষ্টা প্রযোজক দেব করছেন 'পাসওয়ার্ড' তারই সফল উদাহরণ।


আরও পড়ুন-গায়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল ৬০টি ইঁদুর, আঁচড়ে-কামড়ে একাকার: রুক্মিণী



'পাসওয়ার্ড'-এ নজর কেড়েছে অভিক মুখোপাধ্যায়ের সিনেমাটোগ্রাফি। যদিতে অহেতুক গান ব্যবহার করে দর্শকদের বিরক্ত করে তোলার কোনও চেষ্টাই এই ছবিতে নেই। স্যাভির সঙ্গীত পরিচালনায় যে দুটি গান 'পাসওয়ার্ড'এ রয়েছে তা এক্কেবারেই চিত্রনাট্যের প্রয়োজনেই। পুরো চিত্রনাট্যের প্রেক্ষিতে এক্কেবারেই পারফেক্ট ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকও। ছবির সম্পদনার কাছে রবিরঞ্জন মৈত্রর মত দক্ষ সম্পদকের ভূমিকা 'পাসওয়ার্ড'-এর জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বলাই বাহুল্য। তবে 'পাসওয়ার্ড'-এর সুন্দর মেকিংয়ের মধ্যে কোথাও যেন একটা খটকা লেগেছে অ্যান্ডরসনের মৃত্যুর দৃশ্যটি। ওই দৃশ্যটিই গোটা ছবির মধ্যে যেন বড় বেশি নাটকীয় বলে মনে হয়েছে। বাকিটা পারফেক্ট। হিন্দি ছবির সঙ্গে টক্কর দেওয়ার ক্ষমতা 'পাসওয়ার্ড'-এর যে রয়েছে, তা ছবিটা দেখলেই বুঝতে পারবেন। পুজোর মুখে এধরনের একটা বাংলা ছবি না দেখলে সত্যিই অনেককিছু মিস করতে হয়।


সবমিলিয়ে দেব-রুক্মিণী, পরমবব্রত-পাওলি, ও আদৃতের 'পাসওয়ার্ড'কে ৫ এর মধ্যে ৪ দিতেই হচ্ছে।