পর্দার ভাই জয়ের মা-কেই `মা` বলে ডাকতে শুরু করেন, সুশান্তকে নিয়ে লিখলেন অভিনেতা
সুশান্তের মৃত্যুতে সোশ্যাল মিডিয়ায় লম্বা একটি পোস্টে অনেক কথাই শেয়ার করলেন আদিল ও জয়।
নিজস্ব প্রতিবেদন : ১১ বছর আগের কথা, সেসময় 'পবিত্র রিস্তা' ধারাবাহিকে সুশান্ত সিং রাজপুতের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করেছিলেন। তখন তাঁর বয়সও ছিল ভীষণ কম। সেই ছোট্ট আদিল এখন অনেকটাই বড় হয়ে গিয়েছেন। সুশান্তের মৃত্যুতে সোশ্যাল মিডিয়ায় লম্বা একটি পোস্টে অনেক কথাই শেয়ার করলেন আদিল।
'পবিত্র রিস্তা' ধারাবাহিকে ভিখারির চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন আদিল। বর্তমানে তাঁর পোস্ট গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট হয়ে গিয়েছে। তাঁর পরিবারে এখন সে-ই সবথেকে বেশি শিক্ষিত সদস্য। আদিলের কথায়, সুশান্ত সিং-ই তাঁকে পড়াশোনা না ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। প্রিয় অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতকে শ্রদ্ধা জানিয়ে পুরনো স্মৃতিতে নস্টালজিক হয়েছেন আদিল খান। লিখেছেন, ''আমি পবিত্র রিস্তা ধারাবাহিকে সামান্য ভিখারির ভূমিকায় অভিনয় করেছিলাম। সুশান্ত সি রাজপুতের সঙ্গে একই পর্দা শেয়ার করেছিলাম। ১১ বছর আগে এটাই উপলব্ধি করেছিলাম, আমি অভিনেতা হতে চাই, নায়ক হতে চাই। আমি এসআরকে-কে দেখে বড় হয়েছি। আমার বাবা আমায় পরামর্শ দিয়েছিলেন, আমার শ্যুটিং সেটে বেশিক্ষণ কাটানোর জন্য যেন একটা কারণ থাকে। গোটা প্রক্রিয়াটা কীভাবে হচ্ছে, কীভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করে শ্যুটিং হচ্ছে, সেটা যেন আমি শিখি।''
আরও পড়ুন-সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু, বিস্ফোরক পরিচালক শেখর কাপুর
আরও পড়ুন-''আমিও আত্মহত্যাপ্রবণ, বেশ কয়েকবার আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলাম'', লিখলেন পার্নো, মুখ খুললেন ভাস্বরআদিল খান আরও লিখেছেন, ''আমার বয়স তখন ছিল ১২ বছর। মায়ের সঙ্গে আমি দরজায় দরজায় ঘুরেছি কাজের সুযোগ পাওয়ার জন্য। এরপর পবিত্র রিস্তায় আমায় ডাকা হয়। শ্যুটিংয়ে আসার আগের দিন রাতে আমি ঘুমোয় নি। ক্লিক নিস্কন স্টুডিওতে সকাল ৮টায় কল টাইম ছিল। ওখানেই আমি ওকে দেখেছি। ভ্যানিটি ভ্যান থেকে নেমে আসছেন। তিনিই ধারাবাহিকের প্রধান অভিনেতা ছিলেন। তবে ওনার হাবভাব ছিল, যেন ওই দিনটি ওনারও প্রথম শ্যুটিংয়ের দিন। আমি ওনাকে (সুশান্ত সিং রাজপুত) একটা ছবির জন্য অনুরোধ করি। উনি হাসলেন, তারপর রিহার্সাল করে লাঞ্চ করলাম। লাঞ্চের পর শ্যুটিং এবং আবারও ব্রেক পরে আবারও শ্যুটিং। সবশেষে আমি ওনার অনুরাগী হিসাবে আরও একটা ছবি চেয়েছিলাম। সেসময় উনি আমায় বলেছিলেন যেন অভিনয়ের জন্য কখনওই পড়াশোনা না ছাড়ি। তারপর থেকে আমার স্বপ্ন ছিল, আমি আবারও ওনার সঙ্গে অভিনয় করবো। ওনাকে বলতে চেয়েছিলাম, আমি সেদিনের সেই শিশু অভিনেতা, যিনি ওনার সঙ্গে অভিনয় করেছিলাম এবং ওনার পড়ামর্শ মেনে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছি। আমিই এখন আমার বংশে সবথেকে বেশি শিক্ষিত মানুষ।''
আদিলের কথায়, ''উনি (সুশান্ত সিং রাজপুত) আমায় সবসময় অনুপ্রেরণা দিয়ে এসেছেন। আমি সবসময় আমাকে বোঝাতাম, আমার পরিবারে আমিই শুধু প্রথম অভিনয়ে আসিনি, উনিও এসেছিলেন। ওনার মধ্যেই আমি নিজেকে দেখতে পেতাম, যনি বাইরে থেকে এসেছিলেন, কোনও ফিল্ম পরিবারে থেকে আসেননি। সিনেমার প্রতি ভালোবাসা নিয়ে আসা, একজন ভালো মনের মানুষ উনি (সুশান্ত সিং রাজপুত। উনি নেই এটা আমার পক্ষে মানা কষ্টকর। ''
আরও পড়ুন-''সুশান্তকে আমিই লঞ্চ করেছিলাম, আর আমার বিরুদ্ধেই মামলা!'', মুখ খুললেন ক্ষুব্ধ একতা
পবিত্র রিস্তা ধারাবাহিকে সুশান্তের আরও এক ক্ষুদে সহ অভিনেতা জয় থক্কর সুশান্তের সঙ্গে কাটানো প্রিয় কিছু মুহূর্ত শেয়ার করেছেন। লিখেছেন, ''১১ বছর আগে পবিত্র রিস্তা ধারাবাহিকে সুশান্ত সিং রাজপুতের ছোট ভাইয়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলাম। সুশান্ত ভাইয়া আমার টিফিন বক্সে রাখা থেপলা (গুজরাতি খাবার) চুরি খেয়ে নিয়েছিলেন। একসপ্তাহ পর আমার মা একটু চিন্তিত হয়েই সেটে এসে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, আমার থেপলাটা কে খেয়েছেন? ''
জয় থক্কর আরও লেখেন, ''পরে একদিন রাতে শ্যুটিংয়ে সুশি ভাইয়া নিজেই আমার মাকে এসে বলেছিলেম, তিনিই থেপলা খেয়ে নিয়েছেন। কারণ, সুশান্ত ভইয়া বলেছিলেন, ওনার মায়ের কথা ভাইয়ার ভীষণ মনে পড়ে। আর থেপলাটাও একজন মায়ের তৈরি খাবার। উনি আমার মায়ের কাছে ক্ষমাও চান। তারপর থেকে আমার মা ওনার জন্যও থেপলা বানিয়ে আনতেন। উনি আমার মা-কে শ্যুটিং সেটের মধ্যেই মা বলে ডাকতে শুরু করেন। কী অবিশ্বস্যা মন খারাপ করা ট্রাজেডি। আমার মা ও আমি দুজনেই তোমাকে খুব মিস করছি ভাই, তোমার সঙ্গে খুব সুন্দর সময় কাটিয়েছি।''
শুধু জয় থক্কর ও আদিল খান-ই নন, পবিত্র রিস্তা ধারাবাহিকের আরও অনেকের সঙ্গে সুন্দর, ও কাছের সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছিল সুশান্ত সিং রাজপুতের।