রইস বড়ই অসহিষ্ণু, কালস্রোতে রইবে কি?
শর্মিলা মাইতি
ছবির নাম- রইস
রেটিং- ***
রিভিউ করতে গিয়ে প্রথম কথাটাই মাথায় আসে, শারহরুখকে কি প্রমাণ করতেই হবে যে, তিনি বাদশা। সেই কবে বলেছিলেন আই অ্যাম দ্য বেস্ট, এখনও সেই ট্র্যাডিশন বজায় রাখার প্রাণপণ চেষ্টা করেই চলেছেন। তাই প্রতি রিলিজের আগে বাড়তি উপযোগ, নয়া ধাঁচে প্রোমোশন। জনসমুদ্রকে নিজের অঙ্গুলিহেলনে নাচিয়ে ওয়ার্ম-আপ সেশন করিয়ে নেওয়া। অন্তত একবার যাচাই করে নেওয়া, চুলচেরা বিচার করে নেওয়া যে, ফ্যানবর্গের উৎসাহে কোথাও ঘাটতি হল কি না.. হলেও সেটা সারাই করে, মেরামত করে নিতে তাৎক্ষনিক প্লাস্টিক সার্জারি করা যায় কিং খানের।
কিন্তু রইস নিয়ে কম হাঁসফাঁস করতে হয়নি তাঁকে। একেই এমএনএস-এর তপ্ত নিঃশ্বাস ঘাড়ে। তার ওপর ট্রেন সফরের গিমিকে ভদোদরা স্টেশনে জনৈক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মৃত্যু। শাহরুখের শোকপ্রকাশ। মাহিরার হাহুতাশ। মাহিরা প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের নায়িকা। সবে মিলল ভারতে জমি শক্ত করার হাতছানি, তাতেই ব্রাত্য প্রচারে। অবশেষে কিং খান তাঁকে উড়িয়ে নিয়ে গেলেন দুবাই। দুজনে দিব্য মাতলেন প্রচারে। মন খুশ।
প্রচারের ঢক্কানিনাদ বরাবরই চড়া মাত্রায়। রইস এর আরও এক কালিমা, রাকেশ রোশন। কাবিল ছবিটা তিনি মোটেই একসঙ্গে মুক্তি পাওয়াতে চাননি। তবু বিশ্বাস রাখেননি নাকি শাহরুখ। যুদ্ধ আর প্রণয়ে, কিছুই নহে বাধা। এই ফর্মুলাতেই চললেন তিনি।
এতদূর বলে আসা যাক রইস-এ। আমরা কী পেলাম, না, গ্যাংস্টার ঘরানার একটা ছবি যেখানে ডন শাহরুখের ডায়লগ পাল্টেছে। প্রচারে জানলাম আব্দুল লতিফের জীবনী নিয়ে ছবি। কিন্তু এরকম মার্কামারা টেররিস্টকে বেছে নেওয়া কেন? কেনই বা মদ ব্যবসাকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে কোই ধান্দা ছোটা নেহি হোতা অউর ধান্দে সে বড়া ধর্ম নেহি হোতা ইত্যাদি বলে? কেনই বা এই সংলাপকে আরও প্রকৃষ্ঠ, সুসংহত রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হবে এমন একটি লেজুড় জুড়ে যে, যতক্ষণ না সেই ধান্দা অন্য কারওর ক্ষতি করছে? তর্কের খাতিরে যদিও মেনে নেওয়া যায় যে, সিনেমার দায়িত্ব সমাজসেবা নয়, সমাজকে তুলে ধরা। তাহলে কেনই বা এমন এক ব্যক্তিত্বকে অতিরিক্ত মশলা-সহকারে, কাহিনিতে অতিরিক্ত চর্বি মিশিয়ে পরিবেশন করা হবে। আসলে অনেকগুলো ধন্দ থেকেই যায় কারণ কোনও বাস্তব ব্যক্তিত্বের নাম যখন বার বার উঠে আসে। আবার সিনেমাহলে যখন শুরুতেই বলে দেওয়া হচ্ছে বাস্তবের কোনও চরিত্রের সঙ্গে মিলটা নেহাতই কাকতালীয়, তখন যেন কেমন প্রতারিত মনে হয় দর্শকাসনে বসে। এমনটা কি শাহরুখের মতো ব্যক্তিত্বের কাছ থেকে প্রত্যাশিত? তিনি উন্নতশির থাকুন তাঁর কোটি কোটি অনুরাগীদের কাছে, এটাই তো কাম্য।
তবু রাহুল ঢোলাকিয়ার গল্প বলার স্টাইল লা-জবাব। শাহরুখকে তিনি অনেকটাই ভেঙেচুরে দিয়ে, আদ্যন্ত এক গ্যাংস্টারকে টেনে বের করেছেন। সে স্বাদ অপূর্ব, কিন্তু সহজপাচ্য নয়। মাহিরার উপস্থিতিকে বড়জোর এক সুসজ্জিত ফুলদানি বলা হয়েছে, যার জলটা যত্ন করে বদলানো হয় প্রতিদিন। আমি তোমার প্রেমে হব সবার কলঙ্কভাগী। তাঁকে একেবারে ম্যাড়মেড়ে না হলেও বিশেষ প্রয়োজনীয় বলে তো মনে হয় না একেবারেই। আসলে নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি ছাড়া বাকি চরিত্রগুলো ফেসলেস হোক এটাই বোধহয় চেয়েছিলেন বাদশা। ইদানীং নওয়াজ পরের পর ছবিতে খান সাহেবদের মোস্ট ডিপেন্ডেবল হয়ে উঠছেন, এটাই একটা বড়সড় পাওনা দর্শকের। তাঁর তীক্ষ্ণ চোখ, স্বল্প কথায়, চোখের ভাষায় বাকিটা বুঝিয়ে দেওয়ার আর্টটা তিনি রপ্ত করেছেন দুর্দান্ত। ইন ফ্যাক্ট, নওয়াজ না হলে চলছে না ছবি। এ কথা বিলক্ষণ বুঝেছেন শাহরুখ আর সলমন।
রইস ছবির গান ইতিমধ্যেই মন কেড়েছে সবার। বাজছে কলারটিউন, নেট দুনিয়ায়। ছবিতে। বাদশাকে দেখার জন্যে ভিড় হয়েছে প্রথম কদিন। বাণিজ্যও ফার্স্ট ক্লাস! কিন্তু বাণিজ্যই সেরা কথা নয়। শেষ কথাও নয়। কালের স্রোতে এ ছবি কাবিল কি না, সেটা প্রমাণের যোগ্যতা রইস-এর আছে বলে মনে হয় না। গ্যাংস্টার মুভির বিরাট লাইনে হারিয়ে না যায়, সেই আশা রইল।