Remembering Tilak Maharaj: সুরে-শোকে-শ্রীখোলে স্মরণ লোকসাধক শ্মশানবাসী তিলক মহারাজকে...
Remembering Tilak Maharaj: সম্প্রতি সহজিয়া ফাউন্ডেশনের আয়োজনে রবীন্দ্রসদনে তিলক মহারাজের স্মরণে নিবেদিত হল `একাদশ সহজিয়া উৎসব`। তিলক মহারাজ বাংলার লোকসংগীতজগতের শ্রীখোলবাদনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নাম।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: তিনি শিল্পী, তিনি সাধক, তিনি বাউল, তিনি ত্যাগী। একই অঙ্গে নানা রূপ, নানা পরত। তিনি তিলক মহারাজ। বাংলার লোকসংগীত জগতের অন্যতম উজ্জ্বল মুখ। শ্রীখোলবাদনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নাম। সম্প্রতি গানে-গানে তাঁকে স্মরণ করা হল।
আরও পড়ুন: WB Weather Update: শীতের দরবারে অনাহূত বর্ষা! ভোর থেকেই বিপর্যস্ত কলকাতার জনজীবন...
তাঁর দীর্ঘ সংগীতজীবনে দেশে-বিদেশে তিলক মহারাজ সঙ্গত করেছেন গোষ্ঠগোপাল দাস, পূর্ণদাস বাউল, সনাতনদাস বাউল, পবনদাস বাউল, নিমাই বৈরাগী, গৌর ক্ষ্যাপা, কালাচাঁদ দরবেশ-সহ বাংলার বিশিষ্ট লোকশিল্পীদের সঙ্গে। সঙ্গত করেছেন পণ্ডিত রবিশংকরের সঙ্গেও। ২০১৩ সালে তাঁকে 'সহজিয়া সম্মানে' ভূষিত করা হয়েছিল। বাংলার প্রায় প্রতিটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানেই ওঁকে দেখা যেত। 'জি বাংলা সারেগামাপা'-র মঞ্চে বিশেষভাবে সম্মানিত হয়েছিলেন তিনি। বলিউডখ্যাত সংগীত পরিচলক শান্তনু মৈত্র ওঁর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেছিলেন। ভারতীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক, পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্রের উদ্যোগে ও সহজিয়া ফাউন্ডেশনের সহায়তায় 'গুরু-শিষ্য পরম্পরা'র শ্রীখোল প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের গুরু হিসেবে ছিলেন এক বছর।
তিলক মহারাজ বর্ধমান স্টেশন থেকে ৩০ কিমি দূরে মোহনপুরে গ্রামের এক শ্মশানপ্রান্তের কালীমন্দির-সংলগ্ন আশ্রমে থাকতেন। সেখানে তিনিই শ্মশানযাত্রীদের শেষকৃত্যে সহায়তা করতেন আবার তিনিই তান্ত্রিকাচারে মায়ের নিত্যপুজোও করতেন। এই 'শ্মশানবাসী'রা বাংলার লোকসাধকদের বিলুপ্তপ্রায় এক সম্প্রদায়। গত ৩ এপ্রিল তাঁর বর্ণময় জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে।
সম্প্রতি সহজিয়া ফাউন্ডেশনের আয়োজনে রবীন্দ্রসদনে তিলক মহারাজের উদ্দেশ্যে নিবেদিত হল 'একাদশ সহজিয়া উৎসব'। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দেবদাস বাউল, মনসুর ফকির, গৌতম দাস বাউল, স্বপন বসু, তন্ময় বসু, হিরণ মিত্র, অনিন্দ্য-উপল (চন্দ্রবিন্দু), সিধু (ক্যাকটাস), মনোময়, হৃদিস্রোতা, ঋষভ, স্বর্ণাভ, নাজমুল, শোভনসুন্দর, মৌনিতা, সহজ সুরের পাঠশালা প্রমুখ।
অনুষ্ঠান শুরু প্রবীণ শিল্পী দেবদাস বাউলের আসর বন্দনা দিয়ে। এরপর ছিলেন উমারাণী দাস ও গৌতম দাস বাউল। ছিল সিধু ও দেবের যৌথ নিবেদন 'মুর্শিদ ধন হে' এবং উপল-অনিন্দ্যর 'টাপা টিনি'। অনুষ্ঠানে বিশেষ উল্লেখযোগ্য ছিল সহজিয়ার কর্ণধার এবং 'জি বাংলা সারেগামাপা'র মেন্টর দেব চৌধুরীর পরিচালনায় 'সহজ সুরের পাঠশালা'র ছাত্রছাত্রীদের সংগীত-কোলাজ, যা সদ্যপ্রয়াত বাউলগুরু সাধনদাস বৈরাগী, ঝুমুরিয়া সুভাষ চক্রবর্তী ও মহীনের ঘোড়াগুলির বাপি দাসের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নিবেদিত।
আরও পড়ুন: Soumitra Chattopadhyay Death Anniversary: তিন বছর আগে এই দিনেই চলে গিয়েছিলেন তিনি...
এছাড়াও দর্শকদের মন্ত্রমুগ্ধ করে মনোময়ের 'আমার গহীন জলের নদী', স্বপন বসুর 'কান্দিয়া আকুল হইলাম ভবনদীর পারে'। জি-বাংলাখ্যাত তিন বিস্ময়কর খুদে প্রতিভা স্বর্ণাভ, হৃদিস্রোতা ও ঋষভ দর্শকদের মন জয় করে। উৎসবের এক বিরল মুহূর্ত পণ্ডিত তন্ময় বোসের কণ্ঠে পরিবেশিত হয় এক মহাজনী গান। রাগসংগীত ও লোকসংগীত-- এই দুই ধারার সংগীতই যে আদি এবং তারা পরস্পরের পরিপূরক, তা তিনি তাঁর গানের মধ্য দিয়ে সুচারু ভাবে প্রকাশ করেন। দর্শকেরা উঠে দাঁড়িয়ে তাঁকে অভিবাদন জানান। এবছর সহজিয়া সম্মান পেলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শ্রীখোল-গুরু গোপাল বর্মণ ও গিটার-গুরু টুটুল গাঙ্গুলি। শ্রীখোলের একক বাদ্যে তিলক মহারাজকে সম্মান জানালেন গোপাল। মনসুর ফকিরের মিলনগীতি দিয়ে উৎসবের সমাপ্তি হয়। কলকাতার সংগীতরসিকেরা এক বিরল সন্ধ্যার সাক্ষী হয়ে থাকলেন।