নিজস্ব প্রতিবেদন: উত্তম কুমার, এমন একজন ব্যক্তিত্ব যে নামটির সঙ্গে শুধু 'মহানায়ক'-এর খ্যাতিই নয়, জড়িয়ে রয়েছে আরও অনেক কিছুই। তিনি বাংলা সিনেমা জগতের আইডল তো বটেই। তবে তাঁকে নিয়ে বিতর্কও কিছু কম ছিল না। আজ, ২৪ জুলাই, ২০১৯ তাঁর ৩৯ তম মৃত্যু দিবসে জেনে নেওয়া যাক সকলের প্রিয় মহানায়ককে নিয়ে এমন অনেক কথা। যা হয়ত অনেকেরই অজানা।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING


ছবি- অগ্নিপরীক্ষা


১৯৫৪ সালে মুক্তিপ্রাক্ত উত্তম-সুচিত্রা জুটির অগ্নিপরীক্ষা সেসময় সুপার হিট। তবে সেসময় প্রকাশ্যে আসা 'অগ্নিপরীক্ষা' ছবির পোস্টারের ক্যাপশনে বিতর্ক তৈরি করেছিল। ক্যাপশনে লেখা ছিল, ''অগ্নিপরীক্ষা: চিরন্তন ভালোবাসার সাক্ষী''। শোনা যায়, এই পোস্টারের ক্যাপশনটি উত্তম কুমারের স্ত্রী গৌরীদেবী এবং সুচিত্রা সেনের স্বামী দিবানাথ সেন মোটেও ভালো চোখে নেননি। এমনকি এই পোস্টারটি উত্তম-সুচিত্রার প্রেম নিয়ে ছড়িয়ে থাকা নানান গুজবে আরও অগ্নিসংযোগ করেছিল।



ছবি- অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি


মদন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ধারাবাহিক উপন্যাস 'কবিয়াল অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি' অবলম্বনে ১৯৬৭ সালে উত্তম-তনুজা অভিনীত 'অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি' ছবিটি বানিয়েছিলেন সুনীল বন্দ্যোপাধ্যায়। এই ছবিতে মন কেড়েছিল অনিল বাগচির সুরে কবিগান ও হাফ আখড়াই গান। পর্তুগীজ হ্যান্সম্যান অ্যান্টিনি ছিলেন প্রথম ইউরোপীয় বাংলা ভাষার কবিয়াল। যাঁর জীবনের ঘটনা অবলম্বনেই তৈরি হয়েছিল 'অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি' ছবিটি। পর্তুগীজ হ্যান্সম্যান অ্যান্টনি বাংলায় এসে এখানকার সবকিছু আপন করে নিয়েছিলেন। বাংলা লোকসঙ্গীত, ট্র্যাডিশনাল গান বদলে দিয়েছিল তাঁর জীবন। যিনি একজন বাঙালি বিধবা সৌদামিনী নামে এক মহিলাকে সতীদাহ প্রথার হাত থেকে উদ্ধার করেন ও বিয়ে করেন। ছবিতে অবশ্য এই বিষয়টি একটু অন্যভাবে তুলে ধরা হয়েছে। সৌদামিনীর নাম বদলে চরিত্রের নাম রাখা হয়েছে নিরুপমা।



ছবি- দেয়া নেয়া


১৯৮০ সালে মুক্তি প্রাপ্ত 'দেয়া নেয়া' ছবিটি উত্তম কুমারের কেরিয়ারে অন্যতম হিট ছবি। এই ছবিতে উত্তম-তনুজা জুটি সকলের মন কেড়েছিল। তবে অনেকেই হয়ত জানেন না এই ছবির প্রযোজনা করেছিলেন খ্যাতনামা গায়ক তথা সুরকার শ্যামল মিত্র। প্রযোজক হিসাবে এটাই ছিল তাঁর প্রথম ছবি। এই ছবির সুরকারও ছিলেন শ্যামল মিত্র। ছবির পরিচালক ছিলেন সুনীল বন্দ্যোপাধ্যায়।



ছবি- হার মানা হার


১৯৭২ সালে উত্তম-সুচিত্রা যখন চাঁদিপুরে একটি নাচের দৃশ্যের শ্যুটিং করছিলেন 'হার মানা হার' ছবির জন্য। সেসময় সুচিত্রা সেনের সঙ্গে সুপ্রিয়া দেবীর বিবাদের গুজব শোনা যায়। শোনা যায়, সেসময় সুচিত্রা সেন সেখানে উপস্থিত সুপ্রিয়া দেবীকে প্রশ্ন করেন, তাঁদের (উত্তম-সুচিত্রা) একসঙ্গে নাচতে দেখে কি হিংসে হচ্ছে? উত্তরে সুপ্রিয়া দেবী জানিয়েছিলেন বড় পর্দায় তিনি এই রকম অনেক রোম্যান্টিক দৃশ্য দেখেছেন। তাই এতে তাঁর কিছুই যায় আসে না। যদিও এই ঘটনা সত্যি নাকি নেহাতই রটনা তা অবশ্য সঠিক জানা যায় না।



জানা যায় বলিউডের অন্যতম কোরিওগ্রাফার সরোজ খান ১৯৬১ সালে উত্তম কুমারের অন্যতম হিট ছবি 'সাথী হারা'র একটি গানের কোরিওগ্রাফির জন্য কলকাতায় এসেছিলেন। তবে সেসময় উত্তম কুমার অসুস্থ ছিলেন। তাঁর জ্বর হওয়ার জন্য তিনি শ্যুটিং সেটে আসতে পারেননি। তাই মহানায়কের সঙ্গে সরোজ খানের কাজ করার সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়। প্রসঙ্গত 'সাথী হারা' ছবিতে উত্তম কুমারের বিপরীতে মালা সিনহাকে দেখা গিয়েছিল। 



ছবি- সপ্তপদী


১৯৬১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত উত্তম-সুচিত্রা অভিনীত 'সপ্তপদী' ছবিটি এখনও বহু সিনেমাপ্রেমীর মনে গাঁথা হয়ে রয়েছে। বিশেষ করে এই ছবিতে উত্তম সুচিত্রা বাইকে করে গান গাইতে গাইতে যাওয়ার দৃশ্যটা চিরন্তন একটি রোম্যান্টিক দৃশ্য বললেও ভুল হয় না। যেখানে এক ব্রাহ্মাণ যুবকের সঙ্গে খ্রিস্টান যুবতীর প্রেম দেখানো হয়। শোনা যায়, ষড়যন্ত্র করে এই ছবির শ্যুটিং বন্ধ করানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। অনেকেই নাকি সেসময় সুচিত্রাকে বোঝানোর চেষ্টাও করেছিলেন, এই ছবিতে তিনি উত্তমের বিপরীতে অভিনয় করলে উত্তম কুমারের ছায়ায় তিনি ঢাকা পড়ে যাবেন। যদিও এইসব চেষ্টা আদপে কোনওভাবেই সফল হয়নি।



শোনা যায়, সত্যজিৎ রায় পরিচালিত 'নায়ক', 'চিড়িয়াখানা'-র মতো ছবিতে অভিনয় করার পর তাঁর 'ঘরে বাইরে' ছবিতেও উত্তম কুমারকে সন্দীপের চরিত্র অভিনয়ের প্রস্তাব দেন পরিচালক সত্যজিৎ রায়। তবে তাঁর চরিত্রটি খলনায়কের চরিত্র হওয়ায় উত্তম কুমার এই ছবির প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। পরে এই চরিত্রে দেখা গিয়েছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে।