রহস্য রোমাঞ্চ ও রাইমার চোখ


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

শর্মিলা মাইতি


ছবির নাম-89


রেটিং- ****


 


বছর ছয়েক ধরে রহস্য রোমাঞ্চ বলতে আমরা বুঝি দুই দাদাকে।এক ব্যোমকেশ বক্সী, দুই ফেলু মিত্তির। কিন্তু তার অনেকটাই ঘটে যায় দশর্কের চেনাজানা পরিসরেই। সত্যজিত্-শরদিন্দুর বই বহুবার পড়া। চলচ্চিত্রে আলাদা করে রহস্যের উন্মোচন হয় না। মনোজ মিশিগানের ছবি এইট্টিনাইন এই ঘরানায় একটা ব্রেক নিশ্চয়ই। কাহিনি পুরোটাই অজানা, কাজেই রোমাঞ্চ রয়েছে পুরোমাত্রায়। সাহিত্যের ওপরে নিভর্র না করেও, মনোজ একেবারে টানটান করে বেঁধেছেন স্ক্রিপ্ট। কোথাও এক চুলও নড়তে দেননি, অতিরিক্ত  মেদ জমতে দেননি।


রহস্যের অনেকটাই অজানা থেকে যেত যদি না এক অভিনেত্রী এই ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র না হতেন। রাইমা সেন। আরো বলা ভল, রাইমা সেনের দুটি চোখ। তাঁর চোখ কত সুন্দর সেই বর্ণনায় না গিয়ে, যে কারণে চোখদুটো সারা ছবি জুড়েই মাস্টারস্ট্রোক প্লে করেছে, সেটাই বলা যাক। অনেক রহস্যই ঘনীভূত হয়েছে ওই চোখের অভিব্যক্তিতেই। দর্শকের উত্কণ্ঠা, অনুসন্ধিত্সার অনেকটাই নির্ণয় করেছে ওই চোখের এক্সপ্রেশন। ঋতুপর্ণ ঘোষের মতো পরিচালক রাইমাকে বিভিন্ন চরিত্রে ব্যবহার করেছেন, রাইমার ভেতরের অভিনেত্রীর বিভিন্ন দিক শানিয়ে তোলার জন্য। মনোবিদ ড. পূর্বা ব্যানার্জির চরিত্রটায় সেই অভিনেত্রীর একটা পূর্ণবৃত্ত খুঁজে পাওয়া যায় যেন। রাইমার চোখই অভিনেত্রী হয়ে উঠেছে, এমন এক উত্তরণ সত্যিই বহুদিন পর দেখা গেল রহস্য ছবিতে। আরও যোগ হয়েছে রাইমার চলনবলনে ও কস্টিউমেও চরিত্র হয়ে ওঠা। শুধু মন দিয়ে কাজ করলেই এই এফেক্টটা পাওয়া যায় না। তৃতীয় কোনও সমীকরণ দরকার হয়, যেটা একেবারেই ভগবানের দান। রাইমা সেনের চোখও এই ছবির চরিত্র। অলিখিতভাবে।


হলিউডি এলিমেন্ট অনেকটাই পাবেন এই ছবিতে। রহস্যকে জ্বাল দিয়ে গাঢ করার চেষ্টা, ক্যামেরার কারিকুরি, জাম্প কাট। টুকরো স্মৃতির কোলাজে শিরশিরানি ভয়, সবরকম খেলা খেলেছেন পরিচালক। শুধুমাত্র এক্সপেরিমেন্টেশনের খাতিরে নয় , কাহিনিতে মোচড় আনার জন্যেই ব্যবহার করা হয়েছে এইসব টেকনিক। অহেতুক নয়। বিশেষ করে পুনর্জন্ম, পূর্বস্মৃ,তি এইসব সেনসিটিভ শব্দগুলো খুবই যত্ন করে খেলেছেন পরিচালক। যে-দৃশ্যে সম্মোহনের প্রয়োগে রাইমার পূর্বস্মৃতি ঝালিয়ে নেওয়া হচ্ছে, সেখানে কলাকুশলীদের অভিনয় এত পোক্ত ও বিশ্বাসযোগ্য, ভাবাই যায় না! বরুণ চন্দ ও শতাফ ফিগারের অভিনয় এখানে লক্ষ করবেন, যাঁরা দেখতে যাবেন। বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের সীমারেখাটা অতিক্রম করে কখন সেটা দর্শকের বোধের রাজত্বে চলে যায়।


সিরিয়াল কিলার বিষয়টা সবসময়েই বিদেশি ছবিতে খুবই উপভোগ্য বিষয়। অনেকরকম এক্সপেরিমেন্টেশনের সুযোগ থাকে। বছর চারেক আগে সৃজিত মুখার্জি বাইশে শ্রাবণ নামে একটি ছবি বানিয়েছিলেন। প্রসেনজিতের সেখানে ছিল সিরিয়াল কিলারের ভূমিকা। তবে যদি সত্যিই কোনও তুলনা করতে হয়, স্মার্টনেসে অনেকটাই এগিয়ে থাকবে এইট্টিনাইন। সিরিয়াল কিলারের মনস্তত্ত্বের গভীরে ঢুকে গিয়ে কারণটা খুঁড়ে বের করে আনা হয়েছে, একেবারে ধাপে ধাপে। কখনও সরলরেখায়, কখনও বক্ররেখায় এগিয়েছে ছবির কাহিনি। শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয়টাই বড় পাওনা। তিনি নিজেকে ভাঙতে গড়তে অভ্যস্ত। চরিত্র আর মানুষ এই দুটোসত্তাকে তিনি অঙ্কের নিয়মে মিলিয়ে দিতে পারেন। যে কোনও চরিত্র তাঁর ছোঁয়াতেই আন্তর্জাতিকতায় উত্তীর্ণ হয়। শাশ্বত ও রাইমার কথোপকথনের ক্লাইম্যাক্স টা অবশ্যই মিস করবেন না। ছবির নামটা কেন এইট্টি নাইন, সেটা বুঝতে পারবেন।


একটাই খেদ। হতাশাও বলতে পারেন। সঠিক স্পটলাইট না পেলে এমন পরিণত একটি সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার দেখার থেকে বঞ্চিত হবেন অনেকেই। প্রচারের যুগের এটাই সমস্যা! তবু যাঁরা রাইমা সেনের প্রেমে পড়েছেন, তাঁরা একটা নতুন কিছু আবিষ্কার করবেন, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না।