Salman Rushdie : রুশদি হামলার পর তসলিমাকে নিয়ে চিন্তায় জয় গোস্বামী
বুকারজয়ী ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক সলমন রুশদির উপর হামলার ঘটনায় হতবাক গোটা বিশ্ব। জানা যাচ্ছে, এই মুহূর্তে অস্ত্রোপচারের পর ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়েছে রুশদিকে। বারবার আততায়ীর ছুড়ির আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে তাঁর দেহ। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রুশদির লিভার, একাধিক স্নায়ু ছিঁড়ে গিয়েছে। তিনি দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারেন বলেও আশঙ্কা করা হয়েছে। প্রকাশ্য সমাবেশে তাঁকে যেখাবে কুপিয়ে খুনের চেষ্টা হয়েছে, তা দেখে ভাষা হারিয়েছেন বাংলার সাহিত্যিক, কবিরা। Zee ২৪ ঘণ্টায় মুখ খুলেছেন সাহিত্যি শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, কবি জয় গোস্বামী এবং শ্রীজাত। বিষয়টি নিয়ে টুইটারে নিজের আশঙ্কার কথা লিখেছেন তসলিমা নাসরিন।
Salman Rushdie, জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: বুকারজয়ী ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক সলমন রুশদির উপর হামলার ঘটনায় হতবাক গোটা বিশ্ব। জানা যাচ্ছে, এই মুহূর্তে অস্ত্রোপচারের পর ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়েছে রুশদিকে। বারবার আততায়ীর ছুড়ির আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে তাঁর দেহ। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রুশদির লিভার, একাধিক স্নায়ু ছিঁড়ে গিয়েছে। তিনি দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারেন বলেও আশঙ্কা করা হয়েছে। প্রকাশ্য সমাবেশে তাঁকে যেখাবে কুপিয়ে খুনের চেষ্টা হয়েছে, তা দেখে ভাষা হারিয়েছেন বাংলার সাহিত্যিক, কবিরা। Zee ২৪ ঘণ্টায় মুখ খুলেছেন সাহিত্যি শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, কবি জয় গোস্বামী এবং শ্রীজাত। বিষয়টি নিয়ে টুইটারে নিজের আশঙ্কার কথা লিখেছেন তসলিমা নাসরিন।
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সাহিত্যিক : কী আর বলব, কাল থেকে আমার মন খুবই খারাপ। সলমন রুশদি একজন মুক্ত চিন্তক মানুষ। চিন্তা প্রকাশে স্বাধীনতাতেই তিনি বিশ্বাস করেন। এই যে ঘৃণ্য, জঘন্য আক্রমণ ওঁর উপর হল, তাতে আমাদের সমস্ত বিশ্বাস, বেঁচে থাকাকেই যেন তিক্ত করে দিল। আয়াতুল্লাহ খামেনি ফতোয়া জারি করেছিলেন সলমন রুশদিকে যে মারতে পারবে তাঁকে পুরস্কার দেওয়া হবে। এটা অত্যন্ত অন্যায়। গতকাল একটা নিরীহ সমাবেশে বক্তৃতা রাখার কথা ছিল সলমন রুশদি। আমি জানি না ওঁর নিরাপত্তারক্ষীরা সেসময় কোথায় গেলেন? কীভাবে এমন আক্রমণ হল। যতদূর জানি, উনি নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যেই থাকতেন। অত্যন্ত উজ্জ্বল, সাহসী একজন মানুষ। লেখক, কবি, সাহিত্যিক, এঁরা তো হত্যার উপযুক্ত মানুষ নন। এঁরা তো আর কাউকে মারেন না, ভাষাটাই তাঁদের সম্বল। তাঁদের উপর এই আক্রমণ একবারেই সমর্থন যোগ্য নয়। এনিয়ে নিন্দার ভাষা নেই। যেকোনও বুদ্ধিজীবী কোনও ধর্মীয় বিষয়ে মুখ খুললেই তাঁদের উপর আক্রমণ, রক্তপাত, হত্যা, এই ট্রেন্ডটাই তো অমানবিক। যাঁরা ধার্মিক তাঁরা তো ভালোবাসার কথা বলবেন, ভালোবাসার মধ্যে দিয়েই মানুষকে বদলাবেন। সেখানে হত্যাটা আসে কোথা থেকে? একজন মানুষ যুক্তি দিয়ে কোনও কথা বলতে পারবেন না! তাহলেই তাঁকে হিংসার শিকার হতে হবে, এটা কেমন নীতি?
জয় গোস্বামী, কবি : এটা খুব ভয় পাওয়ার মতো একটা ঘটনা। কোনও লেখক যদি মনের কথা বলতে চান, লিখতে চান, তাহলে কোনও ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষ সেই লেখককে এভাবে হত্যা করার চেষ্টা করবে! সলমন রুশদির মাথার দাম মিলিয়ন ডলার ধার্য করেছিলেন আয়াতুল্লাহ খামেনি। সেটা হয়েছিল ৮-এর দশকে। ইরানের আয়াতুল্লাহ খামেনি তো মারা গেছেন বহু আগেই। এখন আবার দেখছি, সেই পুরনো হত্যার ফতোয়া মেনে এক যুবক ফের হত্যার চেষ্টা করলেন। এই প্রসঙ্গে একজনের কথা খুব মনে করছে, বাংলা ভাষায় বই লিখেছিলেন তসলিমা নাসরিন, তাঁর সেই বই ২৮টি ভাষায় অনুবাদ হয়ে ছড়িয়ে যায়। তসলিমার উপরও কিন্তু হত্যার ফতোয়া জারি করা আছে। উনি যখন কলকাতায় আসতেন, তখন ওঁকে আমি একবার বলেছিলাম, আপনি একটা বই লিখলেন, সেটা পৃথিবীর ২৮টি ভাষার মানুষ পড়তে পারেন, সেটা তো গর্বের বিষয় বাংলার জন্য। তসলিমা খুব বিষন্ন গলায় বলেছিলেন, আমি তো লিখি বাংলা ভাষায়, চাই সেটা বাংলা ভাষার মানুষ পড়ুন, তবে তা তো হয়না। সত্যিই তো, গত ১৫ বছরে তসলিমার বাংলা কোনও বই বের হয়েছে, আমরা কি দেখেছি? উনি লেখেন বাংলায়, সেই লেখা পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় ছড়িয়ে পড়ে, তবে ওঁর খারাপ লাগা, বাঙালি পাঠকের কাছে সেই লেখা পৌঁছোয় না। ওঁর সম্পর্কেও আমার দুশ্চিন্তা থেকে গেলো। ওঁর জীবনেও আঘাত এসে পৌঁছতে পারে। আশঙ্কা কিন্তু থেকেই গেলো।
প্রসঙ্গত, রুশদির উপর হামলার ঘটনার পর নিজের মতামত জানিয়ে একাধিক টুইট করেন লেখিকা তসলিমা নাসরিন। লেখেন, 'সলমন রুশদির উপর নিউ ইয়র্কে যে হামলা হয়েছে, তাতে আমি হতবাক। কখনও ভাবতে পারিনি এমনটা হবে। উনিতে পশ্চিমের দেশে ১৯৮৯ সাল থেকে নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যেই ছিলেন। ওঁর উপর যদি হামলা হতে পারে, তাহলে ইসলামের সমালোচনা করলে, যেকোনও ব্য়ক্তির উপরই এই হামলা হতে পারে। আমি চিন্তায় আছি।' এছাড়াও একাধিক টুইট করেন তসলিমা।
শ্রীজাত, কবি : নতুন করে আশঙ্কা হচ্ছে বা অবাক হচ্ছি, তা বলব না। সত্য়িই হতাশ লাগে, আজও আমরা কতটা পিছিয়ে। আমি সলমন রুশদির দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। যত দ্রুত সম্ভব তিনি আবার লেখায় ফিরে আসুন, তাহলে সেটাই হবে ওঁর জবাব। চিরকালই দেখেছি মুক্ত কণ্ঠার উপর উগ্রপন্থার কোপ নেমে এসেছে। এটা তেমনই একটা ঘটনা এবং ভীষণভাবে নিন্দনীয়। যত দ্রুত এর থেকে মুক্তি মেলে ততই মঙ্গল। আর এই মুক্তি একমাত্র শিল্পই দিতে পারে। এই মারের মুখের উপর দাঁড়িয়ে শিল্পই জবাব দিতে পারে।