সৌমিত্র সেন


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

২০০৮ সালের কলকাতার এক প্রখ্যাত প্রেক্ষাগৃহে এক বিরল ঘটনা ঘটেছিল। বহু বহু বছর বাদে দুই মহাশিল্পীকে সেদিন একত্রে গাইতে দেখেছিল বাঙালি। সেই অনুষ্ঠান হওয়ার আগে এবং পরে শহরবাসীর মুখে মুখে শুধু সেই সঙ্গীতানুষ্ঠানের কথাই। তৎকালীন মিডিয়াও সেই সময়ে যতটা সম্ভব বিষয়টি নিয়ে চর্চা চালিয়ে গিয়েছিল।


কে ছিলেন সেদিন শিল্পীর আসনে?


মান্না দে ও সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। সেদিন তাঁরা মাতিয়ে দিয়েছিলেন বাঙালির মন। কিন্তু কেন তাঁরা সেদিন এমন সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন? দু'জনেই তো বয়সের প্রান্তে! কণ্ঠসম্পদেরও কি কিছুটা প্রান্তে নয়? তবুও কেন সেদিন এত উন্মাদনা?


কারণটা আসলে লুকিয়ে এই দুই মহাশিল্পীর দ্বৈতসঙ্গীতের ঐশ্বর্যে। খুবই কম সংখ্যক, হাতেগোনা কয়েকটি ছবিতে এঁরা একত্রে গেয়েছেন। আর সেই গুটিকয় গানেই তাঁরা এক অন্যরকম সুরমাধুরী ছড়িয়ে গিয়েছেন।


যেমন 'চিরদিনের' ছবিতে 'তুমি আমার চিরদিনের'। এক অসাধারণ সৃষ্টি, অ-ভূতপূর্ব গান। নচিকেতা ঘোষের কিছুটা ওয়েস্টার্নাইজড প্যাটার্নের সুরে মান্না-সন্ধ্যার আশ্চর্য ইম্প্রোভাইজেশনের ললিত মাধুর্য, স্খলিত রোম্যান্টিকতা ও গলিত আবেগ গানটিকে যেন দ্বৈতগানের চূড়ায় তুলে দিয়েছিল। ১৯৬৯ সালের ছবির সেই গান আজও বাঙালিকে 'হন্ট' করে।


তবে মান্না-সন্ধ্যা তাঁদের ডুয়েটে ফুল ফুটিয়েছিলেন এই ছবিরই দু'বছর আগে রিলিজ হওয়া ১৯৬৭ সালের 'জীবনমৃত্যু' ছবিতে। ঠিক চেনা ছকের ছবি এটা ছিল না। ফলে গানের সংখ্যাও খুব কম ছিল। মাত্র দু'টি। তারই একটি 'কোনো কথা না বলে'। গোপেন মল্লিকের সুরে গানটির দৃশ্যায়ন ছিল কলেজের একটি অনুষ্ঠানে গান গাইছেন ওই কলেজেরই ছাত্র-ছাত্রী উত্তম-সুপ্রিয়া। ওই গানেও মান্না দে'র সঙ্গে দারুণ তালমিল, দারুণ বোঝাপড়া দেখা গিয়েছিল সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের। সেই গানও সাড়া ফেলে দিয়েছিল। আজও সেই সুর গুনগুন করে বাঙালি।


কিন্তু মান্নাকে নিয়ে সন্ধ্যার সর্বোত্তম সৃষ্টি সম্ভবত 'অ্যান্টনি ফিরিঙ্গী' ছবির 'চম্পা-চামেলি গোলাপেরই বাগে' গানটি। অনিল বাগচীর অসাধারণ সুরসৃষ্টি এই ছবিতে। আর সেই সুরে অপূর্ব কণ্ঠ দিয়েছিলেন মান্না দে। বলা হয়, এ ছবিতে পর্দায় নায়ক উত্তমকুমার হলে, পর্দার পিছনে নায়ক মান্না দে'ই! আর এ হেন এক ছবিতে মান্না দে'র সঙ্গে ডুয়েটে বা একক ভাবে সন্ধ্যা মুখোপাধ্য়ায়ও অসাধারণ সব সঙ্গীতসৃষ্টি করেছিলেন।


তবে এই দুই শিল্পীর একক গান বাদ দিয়েও তাঁদের এই একটি ডুয়েট নিয়েই অনেকখানি পথ চলা যায়। জমাট রসের গান এই চম্পা-চামেলি। মীড়ের সৌকর্যে, সুরের ওঠা-নামায়, সূক্ষ্ম কারুকাজে সঙ্গীতের অপূর্ব কারুবাসনাকে এ গানে যেন চরণে-চরণে মূর্ত করে তোলে সন্ধ্যা-মান্না কণ্ঠদ্বয়।


বাংলা ছবির গানের ইতিহাস বলছে, অন্তত আরও দুটি ছবিতে আরও দুটি গানের জন্ম দিয়েছিল এই জুটি। 'সংসারের ইতিকথা' ছবিতে 'মনের কথা কই তোমারে' এবং 'অগ্নিভ্রমর' ছবিতে 'ভয় পেলে বাঙালিরা'। তবে সে দু'টি গান হয়তো ততটা ছাপ ফেলেনি। কিন্তু তাতে কিছু যায় আসেনি। কেননা তাঁরা ওই অল্প কয়েকটি গানে যে-রঙরসের জাল বুনে গিয়েছেন তারই ফাল্গুনী ঘুরে ঘুরে প্রতি ফাল্গুনে এসে ছুঁয়ে দেয় বাঙালিকে। হয়তো আগামি আরও অনেকগুলি ফাল্গুনেও দেবে। 


Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)


আরও পড়ুন: Sandhya Mukhopadhyay: সুচিত্রার ঠোঁটে সেই প্রথম জন্ম নিল সন্ধ্যার অতুল 'ইন্দ্রধনু'