রণিতা গোস্বামী


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

'মঙ্গল পাণ্ডে', 'তলাশ', 'তেভর', 'সমীর', 'রক্তচরিত্র'-এর মতো একাধিক হিন্দি ছবির দৌলতে সুব্রত দত্ত বেশ পরিচিত মুখ। তবে শুধু তাঁর হিন্দি ছবির নাম করলে ভুল হবে। হিন্দির পাশাপাশি বেশকিছু বাংলা ছবিতেও নিজের জাত চিনিয়েছেন অভিনেতা। সুমন মুখোপাধ্যায়ের 'চতুরঙ্গ', সুব্রত সেনের 'বিবর', এর মতো ছবিতে তাঁর অসামান্য অভিনয় সিনেমাপ্রেমীদের মুগ্ধ করেছে। পাশাপাশি, তিনি অভিনয় করেছেন অরিন্দম শীলের 'হর হর ব্যোমকেশ'এর মতো ছবিতেও। পাকাপাকি ভাবে মুম্বইতেই থাকেন, তাই মেয়ে ছোট থাকার জন্য মাঝে বেশকিছুদিন কলকাতায় এসে কাজ করতে পারেননি অভিনেতা। তবে বাঙালি হয়ে বাংলার টান কি আর ভোলা যায়? তাই আবারও শিকড়ের টানে ফের ফের বাংলা ছবিতে কাজ করতে কলকাতা এসে মাঝে মধ্যেই থাকছেন অভিনেতা সুব্রত দত্ত। 


একটা, দুটো নয়, একসঙ্গে প্রায় তিনটি বাংলা ছবিতে ফের কাজ করেছেন সুব্রত দত্ত। যার মধ্যে 'দোতারা' ও 'বৃষ্টি তোমাকে দিলাম' ইতিমধ্যেই মুক্তি পেয়েছে। মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে 'সীতারা' ছবিটি। একসঙ্গে এতগুলো বাংলা ছবি মুক্তি পেতে চলায় বেশ খুশি অভিনেতা। 'বৃষ্টি তোমাকে দিলাম' মুক্তির ঠিক আগেই কলকাতায় এসে Zee ২৪ ঘণ্টা ডিজিট্যালের সঙ্গে একান্তে কথা বলেন সুব্রত দত্ত।


আরও পড়ুন-সইফের 'প্রাক্তন' অমৃতাকে নিয়ে মুখ খুললেন করিনা



'বৃষ্টি তোমাকে দিলাম' ছবিতে তাঁর চরিত্র নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অভিনেতা সুব্রত দত্ত জানান, ''এই ছবিতে রুদ্র সান্যালের চরিত্রে অভিনয় করেছি। যিনি একজন তদন্তকারী আধিকারিক। ছবিতে জয়া আহসান অর্থাৎ বৃষ্টি, স্প্লিট পারসোনালিটি ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত হবেন। আর জয়ার সেই মানসিক সমস্যা নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়, রুদ্র সান্যালের উপর সেটার তদন্তের দায়িত্বভার পড়ে। জয়া যা কিছু বলছেন, সেটা সত্যি নাকি বানানো, সেটাই খতিয়ে দেখবে রুদ্র।''  অভিনেতার কথায়, ''গোটা ছবিতেই একটা অন্যরকম থ্রিলিং এলিমেন্ট রয়েছে। এটা একটা সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার বললেই ভালো হয়।''


আরও পড়ুন-এই কারণেই কাজলের সঙ্গে এখনও একসঙ্গে রয়েছেন, মুখ খুললেন অজয়



'বৃষ্টি তোমাকে দিলাম' ছবিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?


সুব্রত দত্তের কথায়, ছবিতে প্রত্যেকে ভালো অভিনেতা। চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী, জয়া আহসান, বাদশা মৈত্র, রজতাভ দত্ত সকলেই অসাধাণ অভিনেতা। তাই কাজ করতে ভীষণ সুবিধা হয়েছে। নতুন অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সঙ্গে কাজ করার থেকে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন অভিনেতাদের সঙ্গে কাজের মজাটাই আলাদা। (তবে আবার এমন নয়, যে নতুনদের সঙ্গে কাজ করতে চাই না, আমি সবসময়ই নতুনদের সঙ্গে কাজ করার পক্ষে। কারণ নতুনদের সুযোগ দেওয়া উচিত। তবে প্রতিযোগিতা বাড়বে, কাজও ভালো হবে) এই ছবিতে পুলিস আধিকারিকের চরিত্রে কাজ করেছি। তবে এই প্রথম নয়, এর আগেও আমি 'জমিন', সহ বেশকিছু ছবিতে এধরনের চরিত্রে অভিনয় করেছি। তাই চরিত্রটা নতুন নয়, ছবিটা, অভিজ্ঞতাটা নতুন। 


বরাবরই একটু অন্যরকম ছবিতে অভিনয় করেছেন, 'বৃষ্টি তোমাকে দিলাম' ছবিটি কেন বাছলেন?


চিত্রনাট্য। শুধুমাত্র চিত্রনাট্য পছন্দ হওয়াতেই ছবিটি করার সিদ্ধান্ত নি। এই ছবিটি একটি বাণিজ্যিক ছবি হিসাবে কমপ্লিট প্য়াকেজ বলতে পারেন। আর তাছাড়া এই ছবিটি অর্ণবের (পরিচালক অর্ণব পাল) প্রথম ছবি, তাই ও বলাতেই রাজি হয়ে যাই। এই ছবির সাফল্য নিয়ে আমি আশাবাদী।



'সীতারা' কবে মুক্তি পাচ্ছে? এই ছবিতে দর্শক আপনাকে কীধরনের চরিত্রে দেখতে পাবেন?


খুব শীঘ্রই, মার্চেই মুক্তি পাওয়ার কথা। আসলে ছবিটি বাংলাও তেলেগু দুটি ভাষাতেই একসঙ্গে মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে। তেলেগু ভাষায় ডাবিংয়ের কাজ এখনও শেষ না হওয়ায় ছবিটি মুক্তি পেতে দেরি হচ্ছে। আবুল বাশারের ভোরের প্রসূতি অবলম্বনে তৈরি হচ্ছে ছবি। সীতারাতে আমি একজন রাজনৈতিক নেতা। আর আমার বিপরীতে রয়েছেন রাইমা সেন।


কলকাতায় নাকি মুম্বই কোথায় কাজ করতে বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করেন?


অবশ্যই কলকাতা। আমি বাঁকুড়ার ছেলে। তাই এখানকার খাবার-দাবার, সংস্কৃতি, ভাষা, সবকিছুই আমার নিজের। তাই কলকাতা বরাবরই আমায় টানে। বাংলা ছবিতে কাজ করতে স্বচ্ছন্দ্য বোধ করি। আর মুম্বই কাজ করার বিষয়টি অন্যরকম। ওখানে সবসময় সচেতন হয়ে কাজ করতে হয়। ওখানে সকলেই ভীষণই প্রফেশনাল। এটাই পার্থক্য। তবে আমার কাছে ছবির বিষয় চিত্রনাট্যটাই আসল। আর সেটা ভালো হলেই আমি যেকোনও জায়গায় কাজ করতে রাজি। 


এই মুহূর্তে আর কোনও হিন্দি ছবিতে কাজ করছেন?


হ্যাঁ, জোসেফ বলে একটি ছবিতে কাজ করছি। এই ছবিতে আমিই জোসেফ। গল্পটা আমার উপরই এগোবে। ছবিতে ফাদারের চরিত্রে দেখা যাবে ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়কে।



সম্প্রতি বাংলা ছবি 'ভবিষ্যতের ভূত' মুক্তির পরপরই বন্ধ করে দেওয়া হয়, যা নিয়ে শোরগোল পড়ে, এবিষয়ে আপনি কিছু বলতে চাইবেন?


ছবি বন্ধ কেন হবে? (একটি উত্তেজিত ভাবে) এটাই তো কলকাতার সমস্যা। এখানে একজন কেউ উঠলে, অন্যজন তাঁকে উঠতে দিতে চায় না। এটা হবে কেন? এখানে এই দাদাগিরির জন্যই সিনেমার ক্ষতি হচ্ছে। যে ছবির সেন্সর হয়েছে, তারপর সেটা কীভাবে প্রদর্শন বন্ধ হতে পারে? 'পদ্মাবত' অন্যান্য জায়গায় বন্ধ করে দেওয়ার পর এখানে চলতে দেওয়া হয়। তাহলে সেই রাজ্যেই কীভাবে একটা ছবি বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে? এটাই তো অদ্ভুত বিষয়। এই জন্যই তো বাংলা ছবি পিছিয়ে যাচ্ছে। বলিউডের ছবি না হয় বাদ দিলাম, দক্ষিণের ছবিও যেখানে আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যবসা করছে, সেখানে বাংলা ছবি পিছিয়ে যাচ্ছে, এটা কেন হবে? যাঁর একটা সিনেমার জন্য বিনিয়োগ করবে, তাঁরা তো চাইবেন, ছবিটা ব্যবসা করুক। একটা ছবি ব্যবসা না করলে কীভাবে নতুন ছবির জন্য কেউ বিনিয়োগ করবে? এসমস্ত কারণেই পিছিয়ে যাচ্ছে বাংলা ছবি। উন্নতির জন্য ছবির বিকেন্দ্রিকরণ ভীষণ প্রয়োজন।


(প্রসঙ্গক্রমে) আরও একটা কথা আমার মনে হয়, দক্ষিণের ছবির মতো বাংলা ছবিও আন্তর্জাতিক স্তরে আরও বেশি করে মুক্তি পাওয়া দরকার। এখানকার সব ছবিতে কেন ইংরাজি সাব-টাইটেল দেওয়া হয় না বুঝি না। ইংরাজি সাব-টাইটেল দিলে অন্যান্য ভাষার মানুষও ছবি দেখতে পারে, তাতে ছবির ব্যবসা বাড়ে। আর ব্যবসা বাড়লে তবে উন্নতি। আরও বিনিয়োগ আসবে। তবেই না এগোবে।


বাংলা ছবির ব্য়বসা বলিউড, ও দক্ষিণের ছবির থেকে কম হওয়ার পিছনে আর কী কারণ থাকতে পারে বলে আপনার মনে হয়?


কনটেন্ট। মাঝে বেশকিছু সময় দেখেছি দক্ষিণের ছবির, হিন্দি ছবির কপি করে বাংলা ছবি বানিয়েছেন অনেকে। এমনটা কেন হবে? একটা সময় তো ছিল বাংলা ছবি কপি করে হিন্দি ছবি বানানো হতো। তবে এখন কেন এই অবস্থা? হিন্দিতে বিভিন্ন বিষয়ের উপর ছবি হয়। ওখানে 'স্ত্রী'র মতো ছবিও হয়, আবার 'বধাই হো'র মতো ছবিও হয় আবার 'সঞ্জু', উরি-র মতোও ছবি হয়। একটা কথা প্রমাণ হয়ে গেছে, ছবির বিষয়, চিত্রনাট্য ভালো না হলে, সলমন, আমির, শাহরুখরাও ছবি চালাতে পারেন না। আবার বিষয় ভালো হলে কম খরচের ছবিও চলে। একথাটা সবক্ষেত্রেই সত্যি, বাংলা ছবির ক্ষেত্রেও। তবে একটা কথা মানতেই হয়। বাংলাতেও আজকাল অনেক নতুন বিষয়ের উপর অনেক নতুন পরিচালকরা ছবি করছেন। যা একটা ভালো লক্ষণ। পাশাপাশি, এখানে কৌশিক গাঙ্গুলির মতো ভালো পরিচালকরাও রয়েছেন। আমার তাই মনে হচ্ছে, খুব শীঘ্রই বাংলা ছবিতেও পরিবর্তন আসছে। এখন অনেক ভালো ছবি হচ্ছে। এটা সবার জন্যই ভালো। আমি আশাবাদী।


আজকাল অনেক অভিনেতাই সিনেমার পাশাপাশি ওয়েব সিরিজেও কাজ করছেন। এবিষয়ে আপনি কতটা আগ্রহী?


আমিও তো করেছি। নেটফ্লিক্সে করেছি। এসভিএফ-এর হইচই-তেও কাজ করেছি। ভালো চিত্রনাট্য পেলে ওয়েব সিরিজেও কাজ করবো। চিত্রনাট্য ও চরিত্রই শেষ কথা। এগুলি পছন্দ থাকলে কোনও মাধ্যমেই কাজ করতে আপত্তি নেই।


আরও পড়ুন-স্প্লিট পারসোনালিটি ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত জয়া আহসান?