অর্কময় দত্ত মজুমদার


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

ট্যাক্সি ড্রাইভার, রেজিং বুল, গুড ফেলাস, দ্য কিং অফ কমেডি, কুন্দুন, দ্য শাটার আইল্যান্ড, দ্য এভিয়েটর, দ্য লাস্ট টেমপটেশন অফ ক্রাইস্ট। যেই ছবিগুলি একসময় পড়ার বইয়ের থেকে বেশি সময় ও গুরুত্ব পেয়েছে তাদের মধ্যে যোগসূত্র একজনই। মার্টিন স্কর্সেসে। আমার মতো চলচ্চিত্রের ডিসটেন্স এডুকেশনের অনেক ছাত্রের যিনি ফুল টাইম প্রফেসর। তাই এহেন স্কর্সেসে যখন যতবার নতুন ছবি নিয়ে আসছেন বলে শুনেছি অপেক্ষার প্রহর গোনা শুরু হয়ে গিয়েছে। আর এবার উত্তেজনা ছিল দুগুণ। কারণ যেই স্কর্সেসে বার বার বলেছেন যে তিনি ছবি বানান বড়পর্দার জন্য সেই তিনিই এবার ছবি বানালেন নেটফ্লিকসের মত ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য। সেই নেটফ্লিকস যেটা নাকি বর্তমান প্রজন্মের অবসরের সবথেকে প্রিয় সঙ্গী।


দুগুণ বলে ভুল করলাম। মানে দ্য আইরিশম্যান নামক যে ফেনোমেননটা নেটফ্লিকসে ঘটেছে সেটাকে ছোট করলাম। এবার প্রশ্ন উঠতেই পারে, কেন গদগদ হয়ে কথা বলছি? তার কারণ বলতে গেলে পর পর বেশ কয়েকটি কথা বলতে হয়। প্রথমত, ১৯৯৫ সালে মুক্তি পায় ক্যাসিনো। ২০১৯- এ দ্য আইরিশম্যান। মাঝখানে ২৪ টা বসন্ত। ২৪ বছর পর স্কর্সেসের বন্ধু এবং একসময় তার সব ছবির মুখ্য অভিনেতা রবার্ট ডিনিরোর সঙ্গে ফের কাজ করলেন পরিচালক। দ্বিতীয়ত, নিজের রিটায়ারমেন্ট ভেঙে ফের পর্দায় ফিরলেন স্কর্সেসের আরেক বন্ধু ও সহকর্মী জো পেসি। ১৯৯৯ সালে রিটায়ারমেন্ট ঘোষণা করেন পেসি। পরে অবশ্য ২০০৬ সালে দ্য গুড শেফার্ড ছবিতে ক্যামিও চরিত্রে অভিনয় করেন। আরও কিছু খুচরো কাজ করছিলেন বটে তবে পুরোদমে চলচ্চিত্রাভিনয়ে ফিরলেন আইরিশম্যানের হাত ধরে। তৃতীয়ত, এবং আমার কাছে যেটা সবথেকে রোমাঞ্চকর। এই ছবি বিশ্ব চলচ্চিত্রের দুই কিংবদন্তি মার্টিন স্কর্সেসে ও অ্যাল প্যাচিনোর প্রথম কোল্যাবোরেশন। নিজেদের কর্মজীবনের সায়াহ্নে আসা দুই বিস্ময় প্রতিভার প্রথম যৌথ কাজ দেখতে কোন চলচ্চিত্রে প্রেমী মুখিয়ে থাকবে না বলুন তো।


মানে ভাবতে পারছেন? একই ছবিতে আমার গোটা বড় হয়ে ওঠা। অস্কারের ছড়াছড়ি। স্কর্সেসে, প্যাচিনো, ডি নিরো, পেসি মেলালে ৫ টা অ্যাকাডেমি পুরস্কার। স্বভাবতই এই ছবি সাড়ে তিন ঘণ্টা বড় হলেও এক নিশ্বাসে দেখে ফেলাটা সিনেপ্রেমীর ধর্ম। ছবির গল্প নিয়ে কিছু বলব না। শুধু জানিয়ে রাখব এই ছবির অনুপ্রেরণা চার্লস ব্র্যান্ডটের আই হার্ড ইউ পেইন্ট হাউসেস নামক বই। যেই বইয়ের মুখ্য চরিত্র ফ্র্যাঙ্ক শিরান নামে এক আইরিশ বংশোদ্ভূত মার্কিন হিটম্যান। তবে এই ধরণের ব্যাক্তিকে দিয়ে আপনি অবশ্যই নিজের বাড়ি রং করাতে চাইবেন না। কারণ এদের পেইন্ট ব্রাশে শুধুমাত্র লাল রং লেগে থাকে।


ছবির মেইন কাস্টে থাকা সকলেই হলিউডি গ্যাংস্টার ছবির পুরোধা। দ্য গডফাদার, স্কারফেস, গুডফেলাস ইত্যাদি ইত্যাদি। স্কর্সেসে নিজেও এই জনরাতে সাবলীল। তাই ছবি এগিয়েছে তার নিজস্ব ভঙ্গিতে। স্বভাবসিদ্ধ গতিতে। খবরে পড়লাম ইন্টারনেট ইউজাররা নাকি ছবিটিকে বোরিং আখ্যা দিয়েছেন। হতে পারে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সাংবিধানিক অধিকারে ভূষিত সকলেই। তবে আমার ধারণা তারা স্কর্সেসের ছবি দেখার হোমওয়ার্কটা করেননি ঠিক। আমার বরং মনে হল বেশ কয়েক বছর পর সেই পুরনো স্কর্সেসেকে ফিরে পেলাম। যিনি চরিত্রায়ণে সময় ব্যয় করেন। মিলিউ তৈরিতে জোর দেন। যদি সেটা না করতেন তাহলে নিজের পরম বন্ধুকে নির্বিকার চিত্তে গুলি করে কেউ কিভাবে খুন করতে পারে সেটা জাস্টিফাই করতে পারতেন কি?


যারা অভিনয় করেছেন তাদের কারুর অভিনয় নিয়ে কিছু বলার অধিকার বা ক্ষমতা আমি রাখি না। তবে কয়েকটা সিনের কথা না বললেই নয়। তাদের মধ্যে অবশ্যই শীর্ষে থাকবে মৃত বন্ধুর স্ত্রীকে ফোন করে ফ্র্যাঙ্ক শিরানের কথা বলার দৃশ্য। এছাড়া জিমি হফা রূপী প্যাচিনো ও শিরান রূপী ডিনিরোর কথোপকথনের সিন গুলি। এ বলে আমায় দেখ তো ও বলে আমায়। উল্লেখ করতেই হয় অ্যান্টনি 'প্রো' প্রভেনজানো রূপী স্টিফেন গ্রাহামের কথা। ছবির সিনেমাটোগ্রাফার রদ্রিগো প্রিয়েতো আগেও স্কর্সেসের সঙ্গে কাজ করেছেন। তাই জন্যই হয়তো পরিচালকের মন্থর চিন্তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ক্যামেরার গতি বজায় রাখতে পেরেছেন।


স্কর্সেসের বয়স এখন ৭৭, প্যাচিনো ৭৮, পেসি ও ডিনিরোর বয়স ৭৬। এই লোকগুলো আগামী দিনে আরও কয়েকটা ছবিতে কাজ করবেন হয়তো। হয়তো করবেন না। কিন্ত মার্লন ব্র্যান্ডো পরবর্তী হলিউডের দিকপালরা সকলে একসঙ্গে এসে আরেকটা ছবি করতে পারবেন কি না তাতে আমার সন্দেহ আছে। এই ছবি তাই আমার কাছে একটা ইতিহাসের চেয়ে কম কিছু নয়।


আরও পড়ুন, সারাজীবন জেলে বন্দি করে রাখা হোক ধর্ষকদের, হায়দরাবাদ গণধর্ষণ নিয়ে ফুঁসে উঠলেন হেমা মালিনী


পুনশ্চ: ভাবতে অবাক লাগে এই ছবিতে পয়সা লাগাতে চাননি হলিউডের তাবড় প্রযোজকরা। তাই অবশেষে নেটফ্লিকসের হাত ধরে বৈতরণী পেরোতে হয় স্কর্সেসেকে। তবে সেখানেও নিজের শর্ত রেখেছিলেন পরিচালক। নেটফ্লিকসে রিলিজ করার আগে সীমিত সংখ্যক প্রেক্ষাগৃহে রিলিজ হয় ছবি। সাধে কি আর বলে স্কর্সেসে নিজেই একজন গ্যাংস্টার, এবং তার নেশা অনেকটা মার্টিনির মতো।