সৌমিত্র সেন 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

'রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত' (১৯৫৮ সাল) ছবির ইউনিটেই তরুণ মজুমদারের ভাগ্যোদয়ের সূচনা হয়েছিল বললে হয়তো অত্যুক্তি হয় না। কেন হয়েছিল তার একটা গল্প আছে।


কাননদেবীর প্রোডাকশন 'শ্রীমতী পিকচার্স'-এর 'রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত' ছবির শুটিং চলছে। ছবির পরিচালক হরিদাস ভট্টাচার্য। ইনডোরের কাজ সাঙ্গ। এবার আউটডোর। আউটডোরের লোকেশন ঠিক হয়েছে রাজগীর। খুবই টানাটানির মধ্যে দিয়ে কষ্টে-সৃষ্টে নানা প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে ইউনিটের কাজ চলছে। আর ইউনিটের একেবারে তিন তরুণতুর্কি এই পাহাড়প্রমাণ কাজের মধ্য়েই নিজের মতো স্বপ্ন দেখে চলেছেন। শচীন মুখার্জী, দিলীপ মুখার্জি আর স্বয়ং তরুণ মজুমদার, ইউনিটের সামান্য 'অবজার্ভার'। 


রাজগীরে তো হইহই করে শুটিং চলছে। একদিন সাড়ে তিনটে নাগাদ সেদিনের মতো কাজ শেষ। ঘোষণা হয়ে গিয়েছে ব্রেক-ফর-লাঞ্চ। যে যেমন পেরেছেন গাছের ছায়ায় ইতিউতি বসে লাঞ্চ-স্বরূপ দেওয়া সামোসা-জিলিপির সদগতি করতে শুরু করে দিয়েছেন। তরুণ মজুমদার ও দিলীপ মুখার্জী হাতে খাবারের ঠোঙা নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সামনের একটি ছোট্ট টিলার দিকে এগিয়ে গেলেন। টিলার উপরে একটি মহুয়া গাছ। সেখানে গিয়ে দাঁড়াতেই অপূর্ব প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে মোহিত হয়ে গেলেন তরুণ।


আরও পড়ুন: Tarun Majumdar Death: 'আমি কিছু বলার অবস্থায় নেই' কান্নায় ভেঙে পড়লেন সন্ধ্যা রায়


বেলা পড়ে আসছে। বিস্তীর্ণ গমের খেতের পিছনে সূর্যের হলদে আলোর বিস্তার। পড়ন্ত সেই আলো মেখে একে একে ফিরে যাচ্ছে গোরুর গাড়িগুলি। ধুলোয় ঢেকে গিয়েছে পথ। বলদগুলির পায়ে পায়ে উত্থিত ধুলোর মেঘে ছেয়ে গিয়েছে সেই পথটুকু। তার ফাঁক দিয়ে গাড়িগুলিকে কখনও দেখা যাচ্ছে, কখনও দেখা যাচ্ছে না। বিকেলের নিভে-আসা আলোয় মাখামাখি আক্ষরিক অর্থেই একখানি আঁকা ছবি যেন! দৃশ্যপট হিসেবে যা সত্যিই অপূর্ব। ফ্রেম হিসেবে চমৎকার। তে দেখে হঠাৎই তরুণ মজুমদারের মুখ থেকে বেরিয়ে এল, 'ইশ! এরকম একটা শট যদি আমাদের ছবিতে থাকত!'


কথাটি মুখ থেকে শুধু বেরনোর অপেক্ষা; প্রায় সঙ্গে সঙ্গে তরুণের কানে এল একটা ভরাট গলার আওয়াজ-- 'আপনি নিজে ছবি ডিরেক্ট করছেন না কেন?' কে? পাশে তো দিলীপ ছিলেন, কিন্তু দিলীপের কণ্ঠস্বর তো এ নয়! চমকে উঠে তরুণ দেখেন ঠোঙা হাতে তাঁর পিছনে দাঁড়িয়ে স্বয়ং উত্তমকুমার!


হঠাৎ করেই খুব অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন তরুণ। সঙ্গে সঙ্গে কথা ঘুরিয়ে অন্য প্রসঙ্গে চলে যান। কিন্তু তিনি চাপা দিতে চাইলেও প্রসঙ্গ আসলে চাপা পড়ল না। তখনকার মতো কথা আর এগলো না। কিন্তু তা ফিরল।


রাত আটটা-সাড়ে আটটার সময়ে ডিনারের তখনও দেরি আছে দেখে বাংলোর লনে এসে বসে পড়েন তরুণ। আর সেই সময়ে হঠাৎই উত্তম চলে আসেন তরুণের কাছে। তিনি তরুণকেই খুঁজছিলেন। উত্তম এসে ঘাসের উপরেই বসে পড়েন। সরাসরি প্রশ্ন করেন তরুণকে 'তখন ওটাকে ঠাট্টা বলে ধরে নিয়েছিলেন তো?...আমি কিন্তু মোটেই ওভাবে কথাটা বলিনি।' 


আরও পড়ুন: Tarun Majumdar Death: 'আমাদের অভিভাবক ছিলেন, মাথার উপর থেকে চলে গেলেন'


এর পর তরুণ যা শোনেন, তা শোনার জন্য স্পষ্টঃতই তিনি প্রস্তুত ছিলেন না। নিজের সেই অভিজ্ঞতাকে তরুণ নিজেই বহু বছর পরে লেখা তাঁর স্মৃতি-কথকতায় লিখেছেন এভাবে: 'আজ এতদিন বাদে মনে হয়, তার ফলেই আমার ভাগ্যের স্রোত সম্পূর্ণ অন্য দিকে মোড় নিল'!


কী সেই উত্তম-বাক্য?


উত্তম সেদিন বলেছিলেন, 'শুনুন ভালো করে। যদি কোনও দিন মনে হয় স্বাধীন ভাবে কোনও ছবি করবেন, কথা দিচ্ছি, আমি পাশে থাকব-- অবশ্য যদি আপনার চিত্রনাট্যে মানিয়ে যায়।'এটুকু বলেই আর কথা না বাড়িয়ে উত্তম উঠে গিয়ে নিজের ঘরে ঢুকে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেন। আর তরুণ সেই মুহূর্তটিকে এভাবে বর্ণনা করেছেন-- 'এদিকে আমার ভাগ্যের দরজাটা খুলে গেল'!


আরও এক বছর পরে সেই খোলা দরজা দিয়ে বেরিয়ে এল ঝকঝকে নতুন এক ছবি। সুপারহিট। উত্তম-সুচিত্রা অভিনীত 'চাওয়া-পাওয়া'। পরিচালনায় 'যাত্রিক'। 'যাত্রিক', মানে তিন স্বপ্নদেখা তরুণের দল। শচীন মুখার্জী, দিলীপ মুখার্জী এবং তরুণ মজুমদার। সেদিনই জন্ম হল এক প্রতিশ্রুতিমান পরিচালকের। যিনি আগামি দিনে সোনার ফসলে ভরিয়ে তুলবেন বাংলা ছবির প্রাঙ্গণ। সিনেমাপাড়া দিয়ে যেতে যেতে যিনি রুপোলি পর্দায় জ্বেলে দেবেন আশ্চর্য সোনালি প্রদীপ।             


(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)  


আরও পড়ুন: Tarun Majumdar Death : পলাতক জীবনপুরের পথিক