ভুবন ভোলানো হাসি আর চোখের চাউনিতে আজও বঙ্গ ললনাদের হৃদয়হরণ করেন উত্তম
আজকের তারকাদের কাছেও তিনি বিস্ময়। বিখ্যাত অভিনেত্রী ঋতুপর্ণার চোখে, `হি ইজ ম্যাজিক।`
সুমন মহাপাত্র: "আমার স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা থাকে/ সাত সাগর আর তেরো নদীর পারে" তবে রাজকন্যা নয় আজও আপামর বাঙালি মেয়েদের স্বপ্নের রাজপুত্র এক এবং অদ্বিতীয় উত্তম কুমার। মহানায়ক তো বটেই কিন্তু তার থেকেও বেশি তাঁকে ঘিরে নস্টালজিয়া। তাঁর দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে গোল গোল সিগারেটের রিং, আজও হার মানায় এইট কিংবা সিক্স প্যাককে। তাঁর বাঙালিয়ানায় মোড়া বাধ ভাঙা হাসিতেই কাত শয়ে শয়ে বঙ্গ ললনা।
আজকের তারকাদের কাছেও তিনি বিস্ময়। বিখ্যাত অভিনেত্রী ঋতুপর্ণার চোখে, "হি ইজ ম্যাজিক।" তাঁর তৈরি করা শিল্পী সংসদের দায়িত্বভার বয়ে চলেছেন ঋতুপর্ণা। উত্তম কুমারের শিল্পী সংসদ প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য ছিল শিল্পীদের পাশে থাকা। আজকের দিনেও উত্তম কুমারের সেই লক্ষ্য পূরণের কাজই করে চলেছেন অভিনেত্রী। বাঘা বাঘা চরিত্র, সুপার হিট সব সিনেমা, উত্তম কুমার প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে আলোচনায় উঠে এল সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, মাধবী মুখার্জী, সুপ্রিয়া দেবীর নাম। সব জুটিতেই উত্তম কুমার মহানায়ক।
একবার শিবরাম চক্রবর্তী গিয়েছেন মিষ্টি খেতে। তা খাদ্য রসিক চক্বোত্তি মশাইকে পেয়ে বেজায় খুশি ময়রা। মিষ্টি খেয়েই শিবরাম বললেন উত্তম। ফের প্লেটে একটা মিষ্টি, এবার শিবরাম বললেন অতি উত্তম। তাতে কী আবার একটা মিষ্টি। এবার শিবরাম বললেন, উত্তম উত্তম। কিন্তু তাতেও নাছোড়বান্দা দোকানদার। আরও একটা মিষ্টি দিয়ে বলল এবার! কিছুক্ষণের জন্য চুপ শিবরাম। ময়রা বলল কী বলবেন বুঝতে পারছেন না? স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই শিবরাম বললেন, উত্তমের পর এবার তো সুচিত্রাই বলা যায়। সেই উত্তম-সুচিত্রা আজও বাংলার সেরা জুটি। তাঁরা চিরসবুজ।
সালটা ১৯৫৩, বিজন ভট্টাচার্যের কাহিনী নিয়ে মেসবাড়ির গল্প বড় পর্দায় আঁকলেন নির্মল দে, ছবির নাম "সাড়ে চুয়াত্তর।" সেখান থেকেই পথ চলা শুরু। দীর্ঘ ২২ বছরের পথ! যেমন সে "পথে হলো দেরি," তেমনই হয়েছে "হার না মানা হার," "শাপমোচন" দিয়ে "হারানো সুর" কিংবা "সাগরিকা।" প্রত্যেক ছবিতেই উত্তম-সুচিত্রা 'দ্য টপ, দ্য টপ, দ্য টপ।' "প্রিয় বান্ধবী"-তে পথটা না শেষ হলেই ভালো হতো। হয়তো বাঙালি দর্শক তখন গুনগুন করে বলছিল, "কিছুক্ষণ আরও না হয় রহিতে কাছে।" একবার উত্তম কুমার বলেছিলেন, "সুচিত্রা পাশে না থাকলে আমি কখনওই উত্তম কুমার হতে পারতাম না। এ আমার বিশ্বাস। আজ আমি উত্তম কুমার হয়েছি কেবল ওর জন্য।" ২২ বছরের উত্তম-সুচিত্রা জুটি দর্শককে উপহার দিয়েছে ৩০টি সিনেমা। যা বাঙালির মননে আজও চির তরুণ।
তবে ফ্লপ মাস্টার জেনারেল থেকে মহানায়ক হয়ে ওঠার সুদীর্ঘ পথে সুচিত্রা ছাড়াও সুপ্রিয়া দেবী, সাবিত্রী চ্যাটার্জী , মাধবী মুখোপাধ্যায়, শর্মিলা ঠাকুর, থেকে শুরু করে অঞ্জনা ভৌমিক, তনুজা, অপর্ণা সেন সকলের সঙ্গেই জুটি বেঁধেছেন উত্তম কুমার। এসেছে চড়াই উতরাই, রোগা বলে অপমানিত হতে হয়েছিল প্রথম শ্যুটিং সেটে। সেই রোগা ছেলেটারই ছবি আজ টাঙানো থাকে প্রত্যেক ঘরে ঘরে। তবে তিনি শুধুই রোমান্টিক নায়ক নন। সত্যজিৎ রায়ের চিড়িয়াখানার প্রথম দৃশ্য, হাতে একটি সাপ নিয়ে ব্যোমকেশ বললেন, "বিচিত্র জীব এই সাপ, মেরুদণ্ডহীন এই অপবাদটা আর যাকেই দাও সাপকে দেওয়া চলে না।" তিনি "সপ্তপদীর" কৃষ্ণেন্দু আবার "চিড়িয়াখানার" ব্যোমকেশ, "দেওয়া নেওয়ার" প্রশান্ত রায় কিংবা "ওগো বধূ সুন্দরীর" অধ্যাপক গগন সেন। তিনি আজও বাঙালির স্টাইল আইকন অরুণকুমার চ্যাটার্জী।
আরও পড়ুন- কয়েকশো কোটির চুক্তি? বিগ বসের জন্য সলমন কত করে পারিশ্রমিক নিচ্ছেন জানেন!