লিলি চক্রবর্তী


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

 


সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে যখন প্রথম আলাপ তখন আমি জানতামই না তিনি কত বিখ্যাত একজন পরিচালক। আমি তখন সদ্য মধ্যপ্রদেশ থেকে এসে বাংলা সিনেমার জগতে পা রেখেছি।  ইন্ডাস্ট্রির কাউকেই চিনি না সেইভাবে। প্রথমে তিনি আমাকে দেখতে চেয়েছিলেন। পরিচালক অসিত সেন ওঁকে আমার কথা বলেন। তখন  'অপুর সংসার' ছবির কাজ শুরু করবেন। চলছে প্রি-প্রোডাকশনের কাজ। শর্মিলা ঠাকুরের সঙ্গে আগেই কথা চলছিল তাঁর। তবে কোথাও যেন  কথাটা আটকে ছিল। তাই আমাকে দেখে রেখেছিলেন। আমি গেলাম, বৌদি অর্থাৎ বিজয়া রায় আমায় সাজিয়ে দিলেন, চুল বেঁধে দিলেন, শাড়িও পরিয়ে দিলেন। অনেক ছবি তুলেছিলেন। মনে আছে, আমাকে কাছে ডেকে বলেছিলেন, 'তোমাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে। তবে আমার একজনের সঙ্গে কথা হয়ে আছে, তিনি যদি অভিনয় করেন, তাহলে তোমাকে নিতে পারব না। তুমি কিন্তু দুঃখ পেওনা'। তখনও তো আমি জানি না তিনি সত্যজিৎ রায়। পরে বুঝেছি আমি কি হারালাম!



এরপর অনেক সময় কেটে গেল। আমি তখন বেশ কয়েকটি ছবি করেছ। ফুলেশ্বরীও হিট হয়ে গেছে তখন। সেই ছবি দেখেই তিনি আমায় 'জনঅরণ্য' ছবিতে নিলেন। চিঠি পাঠালেন বম্বেতে। আমি তখন হাতে স্বর্গ পেয়েছি যেন। আমি এক কথায় রাজি। বৌদির চরিত্রের জন্য আমায় বেছে নেওয়া হল। সত্যজিৎ রায়ের স্ত্রী আমাকে দেখে প্রথম কথা বললেন, 'তোমার এত সুন্দর চুল ছিল, কোথায় গেল?'  আমি বললাম, 'রোজ নতুন নতুন হেয়ার স্টাইল করতে হয় তো। চুল নষ্ট হয় তাতে'। সত্যজিৎ রায়  বললেন, 'সেকি, আমি যে 'ফুলেশ্বরী'-তে দেখলাম তোমার কত সুন্দর চুল'। আমি বললাম, 'ওটা উইগ ছিল'। তিনি তো হতবাক। বললেন, 'আমার চোখকে ফাঁকি দেয় এমন উইগ কে বানিয়েছে, তাঁকে আমি শুটিংয়ে হেয়ার স্টাইলিস্ট হিসাবে নেব, ডেকে পাঠাও'। এরপর শুটিং শুরু হবে যেদিন নিজে মেকআপরুমে এসে মেকআপ চেক করতেন। শুটিং শেষ হল, আমি ডাবিংয়ে গেলাম। সেদিন একসঙ্গে ডিনার করেছিলাম, সেই দিনটা আমার কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। সেদিন মনে হয়েছিল একরকম, আর আজ মনে হয় এত খুঁতখুঁতে পরিচালক বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে আর আসবেন বলে মনে হয় না।



 


এর অনেক দিন পর 'শাখা প্রশাখা' ছবির জন্য ডাকলেন আমায়। অনেকদিন আমরা আউটডোরে ছিলাম। একসঙ্গে ট্রেনে করে সবাই গিয়েছিলাম। বিরাট কম্পার্টমেন্ট ভাড়া করে, খুব নস্টালজিক সেই সময়। ছবির শুটিং হল, খুব মজা করে কাজ করলাম আমরা। তারপর দীর্ঘ একটা বিরতি। মাঝে মধ্যে বৌদির সঙ্গে দেখা করতে যেতাম। বৌদি বলেছিলেন উনি অসুস্থ থাকাকালীন ওঁকে দেখতে যাওয়ার কথা, কিন্তু ওই চেহারার মানুষটাকে হাসপাতালে শোয়া অবস্থায় দেখতে চাই নি। ছবি আঁকার মতো সিনেমার গল্পকে যিনি আঁকতেন, তাঁকে অসুস্থ অবস্থায় দেখতে চাই নি। তিনি তখন অস্কার পেয়েছেন, সেটা ছুঁয়েছিলাম একবার। ওটাই আমার কাছে শেষ সত্যজিৎ দর্শন হয়ে থেকে গেছে।