জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: আর কয়েকদিন পরেই তাঁর হাতে উঠত ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার। সেই সময়টা তিনি আর দিলেন না। ভারতীয় সংগীতজগৎকে শোকে ডুবিয়ে দিয়ে চলে গেলেন ভারতীয় ফিল্মসংগীতের 'মীরা' বাণী জয়রাম। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। চেন্নাইতে হ্যাডোস রোড অ্যাপার্টমেন্টে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন এই শিল্পী। বাণীর স্বামী কয়েক বছর আগেই মারা গিয়েছেন। তাঁদের কোনও সন্তান নেই। পুলিসকে এসে দরজা ভাঙতে হয় তাঁর অ্যাপার্টমেন্টের। ঘরে ঢুকে তাঁকে মৃত দেখে পুলিস। দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়। পুলিস তদন্ত করেছে। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

চেন্নাইয়ে তাঁর হ্যাডোস রোড অ্যাপার্টমেন্টে একাই থাকতেন শিল্পী। পাঁচ দশক ধরে প্রায় ১০ হাজার গান গাওয়া এই শিল্পীর আকস্মিক প্রয়াণে সংশ্লিষ্ট সমস্ত মহল কিংকর্তব্যবিমূঢ়। জানা গিয়েছে, বাণী জয়রামের কাছে ডোমেস্টিক হেল্প হিসেবে যিনি কাজ করতেন তিনি আজ, শনিবার কাজ করতে এসে দরজার কলিংবেল একাধিকবার বাজিয়েও কোনও সাড়া পাননি। তখনই শিল্পীর আত্মীয়-স্বজনদের খবর দেন তিনি। তাঁরাই পুলিসের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পুলিস এসে দরজা ভেঙে ঢুকে দেখে শিল্পী মারা গিয়েছেন। মনে করা হচ্ছে, বাণী কোনও ভাবে পড়ে গিয়ে থাকবেন, আর তখনই দুর্ঘটনা ঘটে যায় বলে ধারণা। কেননা, তাঁর কপালে চোট দেখতে পেয়েছে পুলিস। ইদানীংকালে তাঁর অসুস্থতার কোনও খবর পাওয়া যায়নি। তিনি এ বছর পদ্ম ভূষণ পাচ্ছেন ঘোষণা হওয়ার পর প্রতিদিনই প্রচুর ফোন আসত তাঁর কাছে, অনেকে দেখাও করতে আসতেন। সকলের সঙ্গে কথাবার্তা বা দেখা করা ইত্যাদি স্বাভাবিকতার সঙ্গেই করতেন। কিন্তু তারপরই এই দুর্ঘটনা! 


আরও পড়ুন: Padma Bhushan Vani Jairam: পদ্ম ভূষণে সম্মানিত আধুনিক ভারতের 'মীরা'! চেনেন অসাধারণ এই সংগীতশিল্পীকে?


এ বছর যে ন'জন 'পদ্ম ভূষণ' পেয়েছেন, তার মধ্যে অন্যতম তামিল নাডুর বাণী জয়রাম। বাণী জয়রাম তামিল নাড়ুর ভেলোরে এক তামিল পরিবারে ১৯৪৫ সালের ৩০ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পরিবার ছিল শাস্ত্রীয় সংগীতে প্রশিক্ষিত এক পরিবার। ছোটবেলায় নাম ছিল কলাবাণী। তাঁর মা পদ্মাবতী, নিজের গুরু রঙ্গ রামানুজ আয়েঙ্গারের কাছে বাণীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য নিয়ে যান। সেখানে বাণী কবি মুথুস্বামী দীক্ষিতের কিছু কবিতাও শিখেছিলেন। পরে তাঁকে কাদালুর শ্রীনিবাস আয়েঙ্গার, টি আর বালাসুব্রহ্মণিয়ান এবং আর এস মণির মতো সংগীতগুরুর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে কর্ণাটকী সঙ্গীতের প্রশিক্ষণ নেন। ১৯৬০ এর দশকের শেষের দিকে, বিয়ের পরে, তিনি স্বামী জয়রামের সঙ্গে মুম্বই চলে যান। তাঁর গানের দক্ষতা জেনে জয়রাম স্ত্রী বাণীকে হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীতের প্রশিক্ষণ নিতে উদ্বুদ্ধ করেন।


আরও পড়ুন: Padma Bhushan Suman Kalyanpur: জন্মদিনের ঠিক আগেই পদ্ম ভূষণে সম্মানিত মুম্বইয়ের স্বর্ণযুগের এই গায়িকা...


দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্রে নেপথ্য সংগীতশিল্পী হিসেবেই বেশি পরিচিত বাণী। সংগীতে তাঁর পেশাজীবন শুরু হয় ১৯৭১ সালে। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে গান গেয়েছেন। সহস্রাধিক সিনেমাতে ১০ হাজারেরও বেশি গান রেকর্ড করেছেন। গেয়েছেন অসংখ্য ভক্তিগীতি। ভারতে এবং বিদেশেও অসংখ্যবার একক সংগীতানুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন।


আরও পড়ুন: Padma Vibhushan Zakir Hussain: উস্তাদ জাকির হুসেন এবার পদ্ম বিভূষণে সম্মানিত...


তেলুগু চলচ্চিত্র এবং ভক্তিমূলক গানে বাণীর অবদান বিপুল। তিনি 'অভিমানবন্তুলু' (১৯৭৩) চলচ্চিত্রের জন্য তাঁর প্রথম তেলুগু গানটি রেকর্ড করেছিলেন। এস পি কোদনদাপানি রচিত 'এপটিভালিকাডুর না স্বামী' গানটি ছিল শাস্ত্রীয় নৃত্যভিত্তিক একটি গান। তবে 'পূজা' (১৯৭৫) ছবির জন্য গাওয়া গানগুলিই তাঁকে তেলুগু সিনেমার একজন নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী হিসেবে প্রথম সারিতে নিয়ে আসে।


বসন্ত দেশাইয়ের সঙ্গে পরিচয় ছিল বাণীর। সেই সূত্রে হৃষীকেশ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গেও বাণীর যোগাযোগ ঘটে।  এবং শুধু যোগাযোগই নয়, তিনি হৃষীকেশবাবুর ছবিতে গাইবার সুযোগও পান। হৃষীকেশ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত 'গুড্ডি' (১৯৭১) ছবিতে গাওয়া তাঁর গান রাতারাতি বিখ্যাত হয়। এই ছায়াছবির মাধ্যমে তাঁর নাম হিন্দি ছায়াছবির জগতেও প্রথম সারিতে উঠে আসে। বসন্ত দেশাই বাণীকে ছবিতে তিনটি গান রেকর্ড করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন যার মধ্যে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করা জয়া বচ্চনের লিপে ছিল 'বোল রে পাপিহারা'। গানটি খুবই জনপ্রিয় হয়। 'মিয়াঁ কি মলহার' রাগে রচিত এই গানটিতে তাঁর শাস্ত্রীয় সংগীত গাইবার দক্ষতার পরিচায়ক ছিল। 


বাণী প্রবীণ কণ্ঠশিল্পী পণ্ডিত দিনকর কৈকিনির সঙ্গে ‘মীরা’ ছবিতে গান করেন। এই ছবির সংগীত পরিচালক ছিলেন পণ্ডিত রবিশঙ্কর। এই ছবির গানই বাণীকে এক ভারতজোড়া নামে পরিণত করেছিল। এর পর থেকেই তিনি মীরা নামে পরিচিত হতে শুরু করেন!


 (Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)