সুদীপ দে: প্রতি ২২ জন ভারতীয় মহিলাদের মধ্যে ১ জন স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত। গোটা বিশ্বে যেখানে স্তন ক্যানসারে আক্রান্তদের গড় বয়স প্রায় ৫০ বছর, সেখানে ভারতে ২০-৩০ বছরের মহিলারাও আক্রান্ত হচ্ছেন স্তন ক্যান্সারে। অর্থাৎ, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতে স্তন ক্যানসার অনেক বেশি আগ্রাসী এবং ভয়ঙ্কর গতিতে ছড়াচ্ছে!


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয় হল, প্রায় ৫০ শতাংশ স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত মহিলা এর তৃতীয় পর্যায়ে (থার্ড স্টেজ) চিকিত্সকের কাছে আসেন। স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত ২০ থেকে ২৫ শতাংশ রোগী একেবারে অন্তিম পর্যায়ে (ফোর্থ/লাস্ট স্টেজ) চিকিত্সা শুরু করেন। ফলে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশেরই মৃত্যু হচ্ছে এই রোগে। তাই প্রয়োজন উপযুক্ত সচেতনতার। অক্টোবরে স্তন ক্যান্সার সচেতনতা মাস পালিত হচ্ছে গোটা বিশ্বে। এই উপলক্ষে ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণগুলি সম্পর্কে জানাচ্ছেন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ (এমসিএইচ সার্জিক্যাল অঙ্কোলজিস্ট) ডঃ শুভদীপ চক্রবর্তী


স্তন ক্যান্সার মানে কি অবধারিত মৃত্যু?


ডঃ চক্রবর্তী বলেন, “প্রাথমমিক (ফার্স্ট স্টেজ) বা দ্বিতীয় পর্যায়ে (সেকেন্ড স্টেজ) ধরা পড়লে ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীকে বাঁচানো সম্ভব। তৃতীয় পর্যায়ে (থার্ড স্টেজ) চিকিত্সা শুরু করতে পারলেও প্রায় ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব। এমনকি একেবারে অন্তিম পর্যায়ের শুরুতেই (ফোর্থ/লাস্ট স্টেজ) চিকিত্সা শুরু করতে পারলে ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। তাই স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়া মানেই রোগীর বাঁচার আর কোনও আশা নেই— এমনটা ভেবে নেওয়ার কিন্তু কোনও কারণ নেই!”


আরও পড়ুন: স্তন ক্যান্সারের তৃতীয় বা চতুর্থ পর্যায়ে রোগীর বাঁচার সম্ভাবনা কতটা? জেনে নিন...


ডঃ চক্রবর্তী জানান, সচেতনতার অভাবে ভারতের প্রায় ৭৫ শতাংশ মহিলা সময় মতো স্তন ক্যান্সারের চিকিত্সা করান না। এর জন্য স্তন ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণগুলি চেনা জরুরি। আসুন চিনে নেওয়া যাক স্তন ক্যান্সারের প্রথমিক লক্ষণগুলি...


স্তন ক্যান্সারের প্রথমিক লক্ষণ:


১) কমবেশি সব মহিলাদের স্তনেই লাম্প (পিণ্ড) থাকে। এর মধ্যে কয়েকটি ক্যানসারাস ও কয়েকটি নন-ক্যানসারাস। যে লাম্পগুলি টিপলে শক্ত লাগে এবং অবস্থান পরিবর্তন করে না, সেগুলি ক্যান্সারের উপসর্গ হতে পার। এ ছাড়াও…


২) বগলে লাম্প বা পিণ্ড।


৩) স্তনে ব্যথা অথচ তা মাসিক চক্র সম্পর্কিত নয়।


৪) স্তনের আকারে অস্বাভাবিক পরিবর্তন।


৫) স্তনের রং পরিবর্তন। স্তন হঠাৎ লাল কিংবা লালচে রঙের হয়ে যাওয়া।


৬) স্তনের ত্বক অস্বাভাবিক কুঁচকে যাওয়া।


৭) স্তন বৃন্ত থেকে তরল পদার্থের নির্গমন হওয়া।


৮) স্তনের ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেওয়া।


স্তন ক্যান্সারের বিপদ থেকে বাঁচতে ডঃ চক্রবর্তীর পরামর্শ হল, প্রতি মাসে নির্দিষ্ট একটা সময় ভালভাবে স্তন পর্যবেক্ষণ করা উচিত। ২০ বছর বা তার থেকে বেশি বয়সের মহিলারা প্রত্যেক মাসিক চক্রের ৪-৫ দিন নিজেরাই স্তন পরীক্ষা করে দেখতে পারেন কোনও রকম লাম্প বা পিণ্ডর অস্তিত্ব টের পাচ্ছেন কিনা। তবে ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই স্তনের লাম্প বা পিণ্ড ক্যান্সারের কারণে হয় না। মাত্র ১০ শতাংশ ক্ষেত্রেই লাম্প বা পিণ্ডের কারণ ক্যান্সার। তাই অযথা ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। তবে নিশ্চিত হতে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা জরুরি। এর সঙ্গেই উল্লেখিত লক্ষণগুলির যে কোনও একটি চোখে পড়লেই দেরি না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং পরীক্ষা করান। সচেতন থাকুন, সুস্থ থাকুন।