সুদীপ দে: চিন থেকে শুরু। এর পর গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। সম্প্রতি ফ্রান্সের একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ভাইরাসে আক্রান্তকে রোগ প্রতিরোধক ওষুধের সঙ্গে যদি হাইড্রোক্সাক্লোরোকুইন দেওয়া হয়, তাহলে ওই রোগী দ্রুত সেরে উঠছে।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের রোগ প্রতিরোধের জন্য যে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে তার সঙ্গেই ম্যালেরিয়ার ওষুধ ‘হাইড্রোক্সাইক্লোরোকুইন’ ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ফ্রান্স, ইতালি, ভারত-সহ একাধিক দেশে। তবে সেই সঙ্গে এই ওষুধ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কও করা হয়েছে সবাইকে। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ (ICMR)-এর পক্ষ থেকেও এই ওষুধ প্রযোগের ক্ষেত্রে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।


কিন্তু এত বারন, সতর্কতা সত্ত্বেও ‘হাইড্রোক্সাইক্লোরোকুইন’ খেয়ে নাকি প্রাণ খোয়াতে হল অসমের গুয়াহাটির বছর চুয়াল্লিশের চিকিত্সক উৎপলজিৎ বর্মনকে। সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে না বুঝে-শুনে ওষুধ খাওয়ার একটা প্রবণতা বার বার লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু তাই বলে একজন চিকিত্সকের কী ওষুধ প্রয়োগ বা খাওয়ার ক্ষেত্রে তেমন কোনও ভুল হতে পারে?


এ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক (মেডিসিন) ডঃ অরিন্দম বিশ্বাসের মত, ভুল মানুষ মাত্রেই হতে পারে। চিকিত্সকও একজন মানুষ। তাই নিজে চিকিত্সক বলে যে কোনও ওষুধ যখন তখন কখনওই খেতে পারেন না। যে কোনও গুরুতর সমস্যায় কোনও ওষুধ খাওয়ার আগে একজন চিকিত্সককেও প্রয়োজনে পাঁচ জন চিকিত্সকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিতে হবে।


গুয়াহাটির ওই চিকিত্সক উৎপলজিৎ বর্মন সম্পর্কে ডঃ বিশ্বাস বলেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে কয়েকটা বিষয় এখনও স্পষ্ট নয়। ওই চিকিত্সকের কি করোনা টেস্ট করা হয়েছিল? রিপোর্টে কি COVID-19 পজেটিভ এসেছিল? তাছাড়া কার পরামর্শে বা কেন ডঃ বর্মন ‘হাইড্রোক্সাইক্লোরোকুইন’ খেয়েছিলেন?’’



একাধির জাতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ম্যালেরিয়ার ওষুধ খাওয়ার পরেই শরীরে অস্বস্তি শুরু হয় ওই চিকিত্সকের যা তিনি তাঁর এক পরিচিতকে হোয়াটস্যাপে লিখে জানিয়েছিলেন। প্রাথমিক ভাবে চিকিত্সকরা জানিয়েছেন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই মৃত্যু হয়েছে গুয়াহাটির ডঃ বর্মনের।


এই প্রসঙ্গে ডঃ বিশ্বাস বলেন, ‘‘ম্যালেরিয়ার ওষুধ খাওয়ার ফলেই যে গুয়াহাটির ওই চিকিত্সক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন, তা এখনও প্রমানিত নয়। ময়নাতদন্তের সম্পূর্ণ রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত অনুমানের ভিত্তিতে কিছুই বলা উচিত নয়।’’


কিন্তু ম্যালেরিয়ার ওষুধ কি কোনও ভাবে হৃদরোগের কারণ হতে পারে?


এক্ষেত্রে কিডনি-রোগ বিশেষজ্ঞ (নেফ্রোলজিস্ট) চিকিত্সক ডঃ প্রতিম সেনগুপ্তর মত, নিজের থেকে কখনওই অ্যান্টি ম্যালেরিয়া ওষুধ খেতে যাবেন না। কারণ, এর ফলে হৃদরোগের সমস্যা বেড়ে যাওয়ার একটা আশঙ্কা থেকেই যায়।



আরও পড়ুন: মশার কামড় থেকেও কি সংক্রমিত হতে পারে করোনাভাইরাস? জানালেন ভাইরাস বিশেষজ্ঞ


হাইড্রোক্সাইক্লোরোকুইনের ব্যবহার বা প্রয়োগ সম্পর্কে এর আগেও সতর্ক করেছেন জর্ডানের বিজ্ঞানীরা। এই প্রসঙ্গে জর্ডানের কিং হোসেন ক্যান্সার হাসপাতালে প্রধান ডঃ আসিম মনসুর জানিয়েছেন, হাইড্রোক্সাক্লোরোকুইন কোনও ভাবেই করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে উপযুক্ত ওষুধ নয়। কারণ, পরিমাপ সম্পর্কে এখনও সে ভাবে নিশ্চিত হতে পারেননি বৈজ্ঞানিকরা। তবে কোনও আক্রান্ত রোগীর শেষ অবলম্বন হিসেবে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে।


সর্বপরি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, করোনা আতঙ্কে সামান্য অসর্কতায় যখন একজন বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকের প্রাণ কেড়ে নিতে পারে, সেখানে না জেনে, বুঝে আন্দাজে টপাটপ ওষুধ খাওয়ার প্রবণতা যে কোনও মুহূর্তে মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে সাধারণ মানুষের। কড়া অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ তো দূরের কথা, প্যারাসিটামলও যদি নির্দিষ্ট পরিমাণ বুঝে না খাওয়া হয়, সে ক্ষেত্রে নানা শারীরিক সমস্যয় পড়তে হতে পারে।