মশার কামড় থেকেও কি সংক্রমিত হতে পারে করোনাভাইরাস? জানালেন ভাইরাস বিশেষজ্ঞ
জেনে নিন এ বিষয়ে কি বলছেন মোহালির ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ-এর অধ্যাপক ভাইরাস বিশেষজ্ঞ ডঃ ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায়...
সুদীপ দে: সারা বিশ্বে এই মুহূর্তে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৭ লক্ষ ৮৬ হাজার ৬০৮। এই ভাইরাসের প্রকোপে এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৩৭ হাজার ৮৩২ জনের। ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে লক ডাউন চলছে আমেরিকা, ইতালি, স্পেন, ভারত-সহ সারা বিশ্বের শতাধিক দেশে।
ভারতে এই মুহূর্তে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১,২৫১। এ দেশে এখনও পর্যন্ত ৩২ জনের প্রাণ কেড়েছে এই ভাইরাস। এরই মধ্যে কেউ বলছেন, তাপমাত্রা বাড়লে কমবে করোনার প্রকোপ তো কেউ ম্যালেরিয়া বা এইচআইভি ভাইরাসের চিকিত্সার ওষুধ প্রয়োগ করে করোনা আক্রান্তকে সারিয়ে তোলার দাবি করছেন। কোথাও আবার এমন তথ্য ছড়িয়েছে যা মানুষের মনে রীতিমতো আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, মশার কামড় থেকে নাকি সংক্রমিত হতে পারে করোনাভাইরাস!
আতঙ্কের পাশাপাশি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে একাধিক গুজব আর ভ্রান্ত ধারণা যা বিভ্রান্ত করছে লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষকে। করোনাভাইরাস সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণায় স্বচ্ছতা আনতে এগিয়ে এলেন মোহালির ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ-এর অধ্যাপক ভাইরাস বিশেষজ্ঞ ডঃ ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায়। আসুন জেনে নেওয়া যাক উল্লেখিত বিষয়গুলিতে তাঁর মতামত ও পরামর্শ...
উষ্ণ-আর্দ্র আবহাওয়ায় কমবে করোনার প্রকোপ, এই তত্ব কতটা সঠিক?
ডঃ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তাপমাত্রা বাড়লে বা উষ্ণ-আর্দ্র আবহাওয়ায় যদি করোনাভাইরাসের প্রকোপ সত্যিই কমে যেত, তাহলে কেরল বা মহারাষ্ট্র, বিশেষ করে মুম্বইয়ে এই ভাইরাস কোনও ভাবেই সংক্রমিত হতে পারত না। মার্চ মাসে এই দুই রাজ্যের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারির তুলনায় অনেকটাই বেশি। অথচ, এই মার্চেই এই দুই রাজ্যে করোনার সংক্রমণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ কয়েকটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে, যেগুলিতে দাবি করা হয়েছে ২৩ থেকে ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে তাপমাত্রা পৌঁছালেই ধীরে ধীরে দুর্বল হবে করোনাভাইরাস। কিন্তু সে তত্ব যে ভুল, তা তো এখন বোঝাই যাচ্ছে।
মশার কামড় থেকে কি সংক্রমিত হতে পারে করোনাভাইরাস?
ডঃ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এখনও পর্যন্ত মশার কামড় থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। মূলত, হাঁচি-কাশির ড্রপলেট থেকে এই ভাইরাস সংক্রমিত হয়। চোখ, নাক, মুখ থেকে এই ভাইরাস আমাদের শরীরে প্রবেশ করে এবং গলা হয়ে ক্রমশ ফুসফুসে সংক্রমিত হয়। এই কারণে সকলকে নাক-মুখ ঢেকে রাখতে বলা হচ্ছে। হাত পরিষ্কার রাখার বিষয়টিতেও জোর দেওয়া হচ্ছে একই কারণে। বাজারে বা কোনও জরুরি কাজে যদি বাইরে বেরোতেই হয়, সে ক্ষেত্রে বাড়িতে ফিরেই বাইরের জামা-কাপড় কেচে ফেলা, হাত, মুখ ভাল করে ধুয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন: করোনাভাইরাস নিয়ে কয়েকটি ভুয়ো তথ্য ও প্রকৃত সত্য
এ কথা ঠিক যে ম্যালেরিয়াও মশা-বাহিত ভাইরাস ঘটিত রোগ। ফ্রান্স, জর্ডান এমনকি ভারতেও পরীক্ষামূলক ভাবে ম্যালেরিয়া বা এইচআইভি ভাইরাসের চিকিত্সার ওষুধ প্রয়োগ করে করোনা আক্রান্তকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সাফল্যও মিলেছে। তবে তার মানে এই নয় যে, ম্যালেরিয়ার ওষুধে করোনার চিকিত্সা হচ্ছে বলেই এই ভাইরাসও মশার কামড় থেকে সংক্রমিত হবে। আসলে এখনও পর্যন্ত করোনাভাইরাসের কোনও টিকা বা নির্দিষ্ট কোনও ওষুধ আবিষ্কার হয়নি। তাই পরীক্ষামূলক বিকল্প চিকিত্সাপদ্ধতি আশার আলো দেখাচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
কী ভাবে করোনার সংক্রমণ ঠেকানো যাবে?
তিনি জানান, একমাত্র আগাম সতর্কতা এবং যথাযথ পরিচ্ছন্নতার মাধ্যেই এই ভাইরাসের সংক্রমণ রোখা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে ডঃ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরামর্শ, এর জন্য সরকার নির্ধারিত লক ডাউন পর্বে বাড়িতেই থাকার চেষ্টা করতে হবে। খুব প্রয়োজন না হলে এই সময় বাড়ি থেকে না বেরনোই ভাল। যেখানে-সেখানে থুতু ফেলার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। যেখানে-সেখানে আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। মেনে চলুন সরকারি নির্দেশিকা। উপযুক্ত সতর্কতায় সংক্রমণ এড়িয়ে সুস্থ থাকুন।