জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: কে না অমর হতে চান? সেই কোনও আদিতম যুগে, পুরাণের গল্প থেকে আমরা জানতে পারি, অসুর ও দেবতার মধ্যে অমৃতের ভাগাভাগি নিয়ে যুদ্ধ হয়েছিল। হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল স্বয়ং বিষ্ণুকে। শুধু হস্তক্ষেপই নয়, রীতিমতো ছলনার আশ্রয় নিয়ে অসুরদের বঞ্চিতও করেছিলেন তিনি। অর্থাৎ, দেবতাদেরও অসুরদের অমরত্বপ্রাপ্তি নিয়ে ভয় ছিল। আর আজ, এখন স্রেফ বিজ্ঞানের বদান্যতায় অমরত্ব মানুষের হাতের তালুতে! সাম্প্রতিক এক আবিষ্কারের ফলে মানুষের সেই আদি বাসনা পূরণ হবে বলে দাবি বিজ্ঞানীদের। তাঁদের দাবি, এবার মানুষও অমর হতে পারে। সেই লক্ষ্যে পৌঁছনোর চাবিকাঠি হল লবস্টার। লবস্টার, যাকে আমরা গলদা চিংড়ি জাতীয় প্রাণী, বা মাছ হিসেবে জানি।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

পৃথিবীর সব প্রজাতির মতোই মানুষেরও প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার একটি নির্দিষ্ট পর্যায় পর্যন্ত শরীরের বিকাশ ঘটে। শরীরের যাবতীয় ক্ষয়-ক্ষতি তারা মেরামত করতে পারে। কিন্তু, তারপর থেকে মানবদেহ ধীরে ধীরে এই ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ক্রমশ অকেজো হয়ে পড়ে শরীর নামক যন্ত্রটি। লবস্টার বা গলদা চিংড়িরা এই নিয়মের ব্যতিক্রম। তারা এমনিতে দীর্ঘজীবী। বার্ধক্যজনিত কারণে তাদের মৃত্যু হয় না। তারা মরে হয় খাদ্য হিসেবে মানুষ তাদের মেরে ফেলে বলে, নয়তো, বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খোলস প্রতিস্থাপন করার সময়ে শারীরবৃত্তীয় কারণে। লবস্টারের এই অবিশ্বাস্য দীর্ঘ জীবনের রহস্য হল একধরনের উৎসেচক। টেলোমারেজ এনজাইম।


আরও পড়ুন: New Cancer Treatment: সভ্যতার যুগান্তকারী আবিষ্কার! এসে গেল ক্যানসারের ওষুধ, আর মৃত্যু নয় মারণরোগে...


কোনও কোষের মৃত্যুর আগে বা সেটি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ার আগে, কোষ বিভাজনের সংখ্যা বাড়ায় এই টেলোমারেজ। এই বহু ঈপ্সিত এনজাইমটি লবস্টারের দেহকোষে উপস্থিত। মানবদেহের অল্প কিছু কোষে সক্রিয় টেলোমারেজ থাকে অবশ্য। বিশেষ করে স্টেম সেলে। এই কারণেই স্টেম সেল দীর্ঘ সময় ধরে নিজেদের মেরামত করতে পারে। ফল এদের জীবনকাল বেশি হয়। কিন্তু, মানবদেহের অন্যান্য কোষের জীবনকাল অনেক কম, যেহেতু সেখানে টেলোমারেজ থাকে না। স্বাভাবিকভাবেই অনুমান করা হয়, মানুষও দীর্ঘ জীবনের অধিকারী হত যদি তার দেহে টেলোমারেজ ধারণকারী কোষের সংখ্যা বেশি হত। 


না, স্রেফ কী হলে কী হত-- এ-জাতীয় হা-হুতাশেই শেষ হয়ে যায় না বিজ্ঞান। বিজ্ঞান চেষ্টা করে। আর সেই চেষ্টারই সূত্র ধরে বিজ্ঞানীরা এখন কী ভাবে মানবদেহে টেলোমারেজ ধারণকারী কোষের সংখ্যা বাড়ানো যায়, তার উপায় খুঁজছেন।


সমস্যা হল, টেলোমারেজের সঙ্গে ক্যানসারের যোগ রয়েছে। নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন ও স্বাস্থ্য বিভাগের ল্যাবরেটরি ফর এজিং রিসার্চের প্রধান ড. লিন্ডসে উ বলেছেন, এই কৌশলের সবথেকে বড় ঝুঁকি, টেলোমারেজ সাধারণত প্রাপ্তবয়স্ক কোষে তৈরি হয় না। তবে প্রায়শই ক্যানসার কোষে টেলোমারেজ তৈরি হয়। আর এই এনজাইম ক্যানসারকে অমর করে তোলে। কাজেই লবস্টার বা গলদা চিংড়ির মতো দীর্ঘ জীবন বা অমরত্ব পেতে টেলোমারেজ ব্যবহার করার আগে, ক্যানসারের সঙ্গে এই এনজাইমের সম্পর্ককে আরও ভালভাবে বুঝে নিতে হবে বিজ্ঞানীদের। আর যখন সেটিকে নেতিবাচক ক্রিয়া থেকে বের করে ইতিবাচক কাজে টেনে আনা যাবে, একমাত্র তখনই এটিকে দিয়ে বিজ্ঞানীরা মানুষকে অমর করার উপায় সম্বন্ধে নিশ্চিত হতে পারবেন, তার আগে নয়!


তা হলেও এমনটা ঘটলে কত দিন বাঁচতে পারবে মানুষ? বিজ্ঞানীরা বলছেন, সেটা মোটামুটি ১৪০ বছরে গিয়ে দাঁড়াতে পারে! তা মন্দ কী? 


(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)