সুদীপ দে: হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর ২৪ ঘণ্টাও কাটল না। চলে গেলেন অভিনেতা ইরফান খান। দীর্ঘদিন ধরেই ক্যান্সারে আক্রান্ত অভিনেতার চিকিৎসা চলছিল। তাঁর মাঝেই অভিনয়ের কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। নিউরেনডোক্রাইন টিউমার বা ক্যান্সার নেটে আক্রান্ত হন ইরফান। কী এই নিউরেনডোক্রাইন টিউমার? কতটা ভয়ঙ্কর এই ক্যান্সার? আসুন জেনে নেওয়া যাক এ বিষয়ে কী বলছেন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ (এমসিএইচ সার্জিক্যাল অঙ্কোলজিস্ট) ডঃ শুভদীপ চক্রবর্তী


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

ডঃ চক্রবর্তী জানান, নিউরোএন্ডোক্রাইন টিউমার একটি বিরল ধরণের টিউমার যা শরীরের যে কোনও অংশে দেখা দিতে পারে। নিউরেনডোক্রাইন কোষ যা প্রত্যক্ষ ভাবে হরমোনের নিঃসরণের জন্য দায়ী। নিউরেনডোক্রাইন কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হলে তাকে নিউরোএন্ডোক্রাইন টিউমার বলা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই টিউমার ফুসফুস, অগ্ন্যাশয়, ক্ষুদ্রান্ত (গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্ট), অ্যাপেন্ডিক্স, থাইরয়েড এবং মলদ্বারকে প্রভাবিত করে। কখনও কখনও স্নায়ুকোষও এই ধরনের টিউমারে আক্রান্ত হয়।


ক্ষুদ্রান্ত বা মলদ্বারে নিউরেনডোক্রাইন টিউমার হলে কী কী উপসর্গ প্রকাশ পায়?


ডঃ চক্রবর্তী জানান, নিউরেনডোক্রাইন টিউমার বা ক্যান্সার নেটের সেই অর্থে নির্দিষ্ট কোনও উপসর্গ নেই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি কোনও সমস্যাই বোধ করেন না। আসলে, নিউরেনডোক্রাইন টিউমার থেকে হরমোনের নিঃসরণের ফলে তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসাবে বিভিন্ন উপসর্গ প্রকাশ পায়। যেমন, অগ্ন্যাশয়ে নিউরেনডোক্রাইন টিউমার হলে আক্রান্তের মধ্যে জন্ডিসের উপসর্গ প্রকাশ পায়। কোলনে বা মলাশয়ে নিউরেনডোক্রাইন টিউমার হলে আক্রান্তের মধ্যে কখনও ডাইরিয়া, কখনও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা প্রকট হয়। এছাড়াও, অবসাদ, দুর্বলতা, পেটে ব্যথার মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে। এই নিউরেনডোক্রাইন টিউমার বা ক্যান্সার নেটের উপসর্গগুলি এতটাই সাধারণ যে, সরাসরি এই সমস্যা শনাক্ত করা প্রায় অসম্ভব! অন্যান্য রোগের চিকিৎসা করাতে গিয়ে ধীরে ধীরে এই সমস্যা সামনে আসে।



ডঃ চক্রবর্তী জানান, প্রায় ২০ শতাংশ ক্ষেত্রে নিউরেনডোক্রাইন টিউমার বা ক্যান্সার নেটে অস্বাভাবিক হরমোন নিঃসরণের ঘটনা লক্ষ্য করা যায়। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নিউরেনডোক্রাইন টিউমারের বৃদ্ধি বা বিস্তার অত্যন্ত ধীর গতিতে হতে থাকে। তাই বেশির ভাগ আক্রান্তই এই সমস্যা শরীরে নিয়েই মোটামুটি স্বাভাবিক ভাবেই বছরের পর বছর জীবনযাপন করেন।


আরও পড়ুন: লড়াই শেষ হল, প্রয়াত বলিউড অভিনেতা ইরফান খান


কেন হয় এই নিউরেনডোক্রাইন টিউমার বা ক্যান্সার নেট?


নিউরেনডোক্রাইন টিউমারগুলি কেন হয়, তার কোনও সঠিক কারণ এখনও জানা যায়নি। সারা শরীর জুড়ে নিউরেনডোক্রাইন কোষ পাওয়া যায়। এই ক্যান্সার স্নায়ু কোষ এবং হরমোন উত্পাদনকারী কোষগুলির মতো বৈশিষ্ট্যযুক্ত নিউরেনডোক্রাইন কোষগুলিতে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। নিউরেনডোক্রাইন টিউমারগুলি শুরু হয় যখন নিউরেনডোক্রাইন কোষগুলির ডিএনএ পরিবর্তিত (মিউটেশন) হয়ে অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।


ঝুঁকির কারণ:


কারও পরিবারের মধ্যে নিউরেনডোক্রাইন টিউমারে আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস থাকলে তাঁদের মধ্যে এই ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি। শুধুমাত্র অতি বেগুনি আলো ত্বকের নিউরেনডোক্রাইন টিউমার বা ক্যান্সার নেট জন্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে। এই সমস্যা ‘ম্যার্কেল সেল কার্সিনোমা’ নামে পরিচিত। একটি বিরল রোগ। তবে অভিনেতা ইরফান খানের ক্ষেত্রে উপরে উল্লেখিত কোনও ইতিহাস ছিল না।