সত্যি কি সন্তানের জন্ম দিতে পারবে পুরুষও? কী বলছেন চিকিত্সকরা
ঝুমুর দাস: চিকিত্সা বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে এখন আগের থেকে অনেক কিছুই সম্ভব হচ্ছে। চিকিত্সা বিজ্ঞানের উন্নতিতেই আর শুধু মহিলারাই নন, এবার সন্তনের জন্ম দিতে পারবেন পুরুষও। ‘উম্ব ট্রান্সপ্ল্যান্ট’ বা গর্ভ রোপনের মাধ্যমে পুরুষরাও হতে পারবেন অন্তঃসত্ত্বা এবং ভবিষ্যতে জন্ম দিতে পারবেন সন্তানের। এমনটাই দাবি বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রজনন বিশেষজ্ঞের।
ইন্ডিপেন্ড-এ প্রকাশিত খবর অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে, যে পদ্ধতিতে মহিলাদের ‘উম্ব ট্রান্সপ্ল্যান্ট’ করা হয়ে থাকে, সেই একই পদ্ধতি পুরুষদের উপর প্রয়োগ করলে, পুরুষরাও সন্তানের জন্ম দিতে পারে। প্রজনন বিশেষজ্ঞ ডক্টর রিচার্ড পলসন এই প্রসঙ্গে বলেন যে, ‘চিকিত্সা বিজ্ঞানের কাছে এটা একটা চ্যালেঞ্জ। মহিলা এবং পুরুষদের আলাদা আলাদা আকৃতির পেলভিস রয়েছে। গর্ভ রোপনের পদ্ধতি খুবই জটিল একটি বিষয়। আর বিষয়টা সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে একজন ট্রান্সজেন্ডার মহিলার সন্তান জন্ম দেওয়ার মতোই।’
তবে, আমাদের দেশের চিকিত্সা শাস্ত্রের যা পরিকাঠামো, তাতে কি আদৌ সম্ভব পুরুষদের ‘উম্ব ট্রান্সপ্ল্যান্ট'? আমরা কথা বলেছিলাম স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ গৌতম খাস্তগীরের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'উম্ব ট্রান্সপ্ল্যান্ট বিষয়টি আমাদের কাছে এখনও প্রায় বলতে গেলে কল্পনার জগতেই রয়েছে। এটি করা আদৌ সম্ভব কিনা, তা এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত নয়। মহিলাদের ক্ষেত্রেই বিষয়টি এখনও বেশ জটিল পর্যায় রয়েছে, পুরুষদের ক্ষেত্রে আরও বেশি জটিল। মহিলাদের ক্ষেত্রেই এই উম্ব ট্রান্সপ্ল্যান্ট-র মতো জটিল অপারেশন সারা পৃথিবীতে মাত্র ৩ থেকে ৪টি হয়েছে। এবং সেগুলিও এখনও পর্যন্ত খুব একটা সফল নয়। ‘উম্ব ট্রান্সপ্ল্যান্ট’-র ক্ষেত্রে রোগীকে দুটি বড় বড় অপারেশনের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে।'
তবে, অনেকে মনে করেন, সারা পৃথিবীতে এত বাচ্চা রয়েছে। তাদেরকে তো অ্যাডপ্ট করা যায়। তাহলে ‘উম্ব ট্রান্সপ্ল্যান্ট’-এর মতো কঠিন অপারেশনের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার কী দরকার। ‘উম্ব ট্রান্সপ্ল্যান্ট’ অপারেশন হওয়ার পর কী কী ঝুঁকি থাকছে? চিকিত্সক খাস্তগীর বলেন, 'একটা বড় অপারেশনে যা যা ঝুঁকি থাকে, সবই রয়েছে এই অপারেশনেও। পেটে ব্যথা হতে পারে, অতিরিক্ত রক্তপাত হতে পারে এমনকী প্রাণহানির ঝুঁকিও রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও। এটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ একটা অপারেশন।'
‘উম্ব ট্রান্সপ্ল্যান্ট’-এর জন্য যা যা পরিকাঠামো প্রয়োজন, তা কি আদৌ রয়েছে আমাদের দেশে? তিনি এই প্রসঙ্গে বলেন, '‘উম্ব ট্রান্সপ্ল্যান্ট’-এর ক্ষেত্রে উন্নত পরিকাঠামোর প্রয়োজন। আমাদের দেশে এক থেকে দুটি এমন অপারেশন হয়েছে। সেগুলি সব হয়েছে পুনেতে। বেশিরভাগ জায়গাতেই এই অপারেশনের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো নেই। পাশাপাশি সেই পরিকাঠামো তৈরির জন্য যা খরচ রয়েছে, তা অন্য কোনও ক্ষেত্রে ব্যবহার করলে অনেক বেশি ফল পাওয়া যাবে। বিদেশে এই অপারেশন সফল হয়েছে। তবে, ১০টি অপারেশনের মধ্যে একটি সফল হয় এই ক্ষেত্রে। পুনেতে যে অপারেশনগুলি হয়েছে, তাও সফল হয়েছে কিনা জানা যায়নি।'
কী এই ‘উম্ব ট্রান্সপ্ল্যান্ট’?
অন্য কোনও মহিলার ইউট্রাস নিয়ে অন্য কোনও মহিলা কিংবা পুরুষের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়। এই প্রতিস্থাপনের জন্য ৬ থেকে ৮ ঘণ্টার দীর্ঘ অপারেশন হয়। যার শরীরে ‘উম্ব ট্রান্সপ্ল্যান্ট’ করা হচ্ছে, তার পরিবর্তন হচ্ছে হরমোনেরও। হরমোন পরিবর্তনে কী কী ঝুঁকি কিংবা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে? চিকিত্সক গৌতম খাস্তগীর বলেন, 'হরমোন পরিবর্তনে তেমন কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। কিন্তু এই অপারেশনে ঝুঁকি এত বেশি যে, চিকিত্সকরা এখনও ‘উম্ব ট্রান্সপ্ল্যান্ট’ নিয়ে আশাবাদী নন। তবে, আরও একটি পদ্ধতি রয়েছে। কৃত্রিমভাবে ‘উম্ব ট্রান্সপ্ল্যান্ট’। যাতে শরীরের মধ্যে প্লাস্টিকের মতো একটা বস্তু ভরে দেওয়া হবে। যার মধ্যে বাচ্চাটি বড় হবে। এবং এটাকে পেটের মধ্যে ভরে দেওয়া ‘উম্ব ট্রান্সপ্ল্যান্ট’-এর তুলনায় অনেক সহজ হবে। কৃত্রিম প্রক্রিয়াটিকে কতটা সফল করা যায়, তা নিয়েই এখন গবেষণা চলছে।'