সুদীপ দে: ভিড় বাস। কোনও রকমে দাঁড়িয়ে আছেন। এর মধ্যেই হঠাত্ প্যান্টের পকেটে রাখা ফোনটা কেঁপে উঠল। কোনও মতে ভিড়ের ঠেলা সামলে পকেট থেকে ফোনটা বের করে দেখলেন, কিছুই আসেনি। না কোনও ফোন, না কোনও নোটিফিকেশন! তাহলে কি এটা নেহাতই আপনার মনের ভুল!


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

এমন ঘটনা কিন্তু কম-বেশি প্রায় সকলের সঙ্গেই ঘটে। জানেন কি এমনটা হওয়ার কারণ কি?


গবেষকরা জানাচ্ছেন, ৯০ শতাংশেরও বেশি মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী মাঝে মধ্যেই এমন বিভ্রান্তির শিকার হন। কোনও কল বা নোটিফিকেশন ফোনে না এলেও মনে হয় যেন ফোনটা কেঁপে উঠল! এ বিষয়ে মনরোগ বিশেষজ্ঞ ডঃ সুব্রত সাহা জানান, এটি একটি প্রযুক্তিগত মানসিক বিভ্রান্তি। বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলা হয় ‘ফ্যান্টম ভাইব্রেশন সিন্ড্রোম’। এ ক্ষেত্রে গবেষকদের ব্যাখ্যা হল, ইদানীংকালে মোবাইল ফোনের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে এই জাতীয় মানসিক বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। তাঁর মতে, বর্তমানে দিনের বেশির ভাগ সময়েই আমরা আমাদের মোবাইল বা স্মার্টফোন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে ব্যস্ত থাকি। তাছাড়া, দিনের মধ্যে চোদ্দবার নানা নেটিফিকেশন ঢুকতে থাকে আমাদের ফোনে। তাই সব মিলিয়ে এই মানসিক বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়।


ডঃ সাহা জানান, মূলত তিন ধরনের হ্যালুসিনেশন বা ভ্রম এই ‘ফ্যান্টম ভাইব্রেশন সিন্ড্রোম’-এর জন্য দায়ি। ট্যাকটাইল হ্যালুসিনেশন, রিফ্লেক্স হ্যালুসিনেশন আর ফাংশনাল হ্যালুসিনেশন। এর মধ্যে ট্যাকটাইল হ্যালুসিনেশন হল স্পর্শগত বিভ্রান্তি।


আরও পড়ুন: গালাগাল দেওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী! দাবি গবেষকদের


ডঃ সাহা জানান, দীর্ঘদিন ধরে দিনের বেশির ভাগ সময় ফোনের ভাইব্রেশনে সজাগ হওয়া আমাদের একটি অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তাঁর মতে, বেশির ভাগ মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী ‘পাছে কোনও ফোন কল বা নেটিফিকেশন মিস না হয়ে যায়’, সেই আতঙ্কেই সব সময় সতর্ক হয়ে থাকেন। আর অতিরিক্ত সচেতন মনেই কখনও কখনও এই ধরনের বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়।


তবে এই সমস্যা আজকের নয়। সমস্যার সূত্রপাত নয়ের দশকে। ডঃ সাহা জানান, মোবাইল ফোন আসার আগে যাঁরা পেজার ব্যবহার করতেন, তাঁদের মধ্যেই প্রথম এই ‘ফ্যান্টম ভাইব্রেশন সিন্ড্রোম’ ধরা পড়েছিল। বর্তমানে মোবাইল ফোনের ব্যাপক ব্যবহারের ফলে আমাদের মধ্যে এই প্রযুক্তিগত মানসিক বিভ্রান্তি অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে।



‘ফ্যান্টম ভাইব্রেশন সিন্ড্রোম’-এর মতোই আর একটি প্রযুক্তিগত মানসিক বিভ্রান্তির নাম ‘রিংজাইটি’ বা ‘রিং অ্যাংজাইটি’ (Ringxiety)। একটু খেয়াল করলেই দেখবেন, আমাদের অনেকেরই মাঝে মধ্যে মনে হয়, ‘ওই বুঝি ফোনটা বেজে উঠল’! কিন্তু আদপে এমন কিছুই হয়নি। এ ক্ষেত্রেও মনোবিজ্ঞানীরা মোবাইল ফোনের প্রতি আমাদের অত্যাধিক নির্ভরশীলতাকেই দায়ি করেছেন। যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে চশমা ব্যবহার করছেন, তাঁদের মধ্যেও অনেকে মাঝে মধ্যে চশমা পরেই চশমা খুঁজে বেড়ান।


কী ভাবে এই ‘ফ্যান্টম ভাইব্রেশন সিন্ড্রোম’ বা ‘রিং অ্যাংজাইটি’ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব?


ডঃ সাহা জানান, এই সমস্যার জন্য সামান্য একটা পরিবর্তন অনেকটা ফারাক এনে দিতে পারে। তাঁর মতে, যাঁদের ফোন বেশির ভাগ সময় বা সব সময় ‘ভাইব্রেশন অ্যালার্ট’ মোডে থাকে, তাঁরা ফোনটিকে ‘রিঙ্গিং মোড’ বা ‘রিং মোড’-এ দিন। ভাইব্রেশনের পরিবর্তে ফোনে রিং হতে থাকলে ‘ভাইব্রেশন অ্যালার্ট’-এর অভ্যাস সহজে কাটিয়ে ফেলা সম্ভব হবে।


যাঁদের ফোন ‘রিঙ্গিং মোড’ বা ‘রিং মোড’-এ রয়েছে বা যাঁদের ‘রিং অ্যাংজাইটি’র সমস্যা রয়েছে তাঁরা কয়েকদিন পর পর মোবাইল ফোনের রিং টোন বদলে ফেললেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। ডঃ সাহার মতে, এর ফলে নির্দিষ্ট কোনও রিং টোনের প্রতি আমাদের অবচেতন মন অভ্যস্ত হওয়ার সুযোগ পাবে না। ফলে ধীরে ধীরে কেটে যাবে ‘রিং অ্যাংজাইটি’র সমস্যাও।


বর্তমানে মোবাইল ফোন ছাড়া এক মুহূর্তও চলা খুব মুশকিল! তাই বলে ‘ফ্যান্টম ভাইব্রেশন সিন্ড্রোম’ বা ‘রিং অ্যাংজাইটি’র মতো সমস্যাকে বাড়তে দেওয়া চলবে না। তাই মেনে চলুন মনরোগ বিশেষজ্ঞ ডঃ সুব্রত সাহা পরামর্শ আর সহজে দূরে সরিয়ে রাখুন এই সব প্রযুক্তিগত মানসিক বিভ্রান্তি।