নিজস্ব প্রতিবেদন: ধর্মতলা থেকে মেয়ো রোড ধরে প্রেস ক্লাব। সেখান থেকে আবার ডাফরিন রোড ধরে এসপ্লানেড। শুনশান রাস্তা। গাছের ছায়ায় ছায়ায় এগিয়ে চলেছেন বৃদ্ধ। হাঁটুর উপরে ধুতি। ঢিলেঢালা সাদা হাত কাটা পঞ্জাবি। এক হাতে চায়ের কেটলি। অন্যটাতে চা কাপ-সহ অন্যান্য সামগ্রী। মুখে মাস্ক পরা ওই বৃদ্ধটিই এখন পুলিস-সাংবাদিকদের কাছে চা-তৃষ্ণা মেটানোর একমাত্র ঠেক বলা যেতে পারে!


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

লকডাউনের বাজারে যুদ্ধকালীন তত্পরতায় পুলিসের সঙ্গে সাংবাদিকরাও কাজ করে চলেছেন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। তাই, প্রেস ক্লাব চত্বরে সাংবাদিকদের আনাগোনা লেগে রয়েছে। আশপাশের চায়ের দোকানের ঝাঁপ বন্ধ। মস্তিষ্ক একটু ঝালিয়ে নেওয়ার জন্য প্রেস ক্লাব চত্বরে বৃদ্ধ সুদেব মাহাতোই এখন অন্যতম ভরসা।


এক কাপ চা নেওয়ার ছলে প্রশ্নটাই আচমকাই ছুড়ে দেওয়া হল সুদেব মাহাতোর দিকে। ‘লকডাউনে এই বৃদ্ধ বয়সে বেরিয়েছেন কেন?’ প্রশ্ন কানে গেলেও উত্তর এলো না। চা দেওয়ার আগে স্যানেটাইজার দিয়ে ভাল করে হাত পরিষ্কার করে নিলেন। তারপর কাপে গরম চা ঢেলে একটা অমায়িক হাসি দিয়ে বললেন, লি জিয়ে...।


দু-এক পুলিস কর্মীকে চা দেওয়ার পর উত্তরটা দিলেন সুদেব মাহাতো। স্পষ্ট বাংলায় বললেন, ‘৩০ বছর চা বিক্রি করছি। এমন পরিস্থিতি কখনও দেখেনি। এক বেলা খাওয়ার জন্য একটু বেরিয়েছি।’ তবে, করোনা সতর্কতায় কোনও ত্রুটি রাখেননি সুদেব মাহাতো। মুখে মাস্ক তো পরেছেন। তার সঙ্গে বারবার হাত স্যানেটাইজারে পরিষ্কার করে সবাইকে চা দিচ্ছেন তিনি।


আরও পড়ুন- লকডাউনের মধ্যেই ২০ এপ্রিল থেকে এইসব ক্ষেত্রে মিলবে ছাড়, জানাল কেন্দ্র


ওড়িশায় বাড়ি। ছোটোবেলায় কলকাতায় চলে এসে চা বিক্রি শুরু করেন সুদেব মাহাতো। ধর্মতলা চত্বরে অনেক ইতিহাসের সাক্ষী থেকেছেন সুদেব। ইডেন গার্ডেন্স, গড়ের মাঠ ঘুরে ধর্মতলা, তিরিশ বছর ধরে চা বিক্রি করে চলেছেন। কিন্তু এমন নিশ্চুপ ধর্মতলা কখনও দেখেননি বলে জানান তিনি। জনমানবহীন ধর্মতলায় দাঁড়িয়ে মাঝে মাঝে নিজেকে অসহায় মনে করেন। বৃদ্ধ সুদেবের মনে হয়, কত সময় ধরে যেন বোবা হয়ে গেছে কোলাহল ধর্মতলা! সাংবাদিক বুঝেই সুদেব প্রশ্ন করলেন, আচ্ছা সত্যিই সুদিন ফিরবে। তা না হলে তো না-খেতে পেয়ে মরবো সবাই। উত্তর সাংবাদিক বন্ধুটির কাছেও ছিল না। যদিও উত্তরের অপেক্ষা না করে স্যানেটাইজারটা বাড়িয়ে দিয়ে বৃদ্ধ বললেন, নিন, হাতটা পরিষ্কার করে নিন দেখি...