নিজস্ব প্রতিবেদন : 'বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচ্যগ্র মেদিনী'। সেই কোনকালে লেখা হয়েছিল মহাভারত মহাকাব্যে। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের প্রেক্ষিতে দুর্যোধনের মুখ নিঃসৃত সেই বাক্য কালের প্রবাহে প্রবাদে পরিণত হয়েছে। যে প্রবাদ আজ বর্তমান 'মহাভারতের কুরুক্ষেত্র'-এও একইরকমভাবে প্রাসঙ্গিক। সময় পাল্টেছে। চরিত্রগুলো বদলেছে। ঘটনাক্রম পাল্টেছে। সাজপোষাক বদলেছে। কিন্তু পরিস্থিতির অদলবদল হয়নি কিছুই। সেদিনের কুরুক্ষেত্র আজকের ভোটযুদ্ধ। যেখানে কেউ কাউকে এক চিলতে জমিও ছাড়ে না। ভোট কৌশলে টেক্কা দিতে অবিরত চলে স্ট্র্যাটেজি বদল। দলিত-আদিবাসী ইস্যুতে এখন এমনই যুযুধান দু'পক্ষ অমিত-অধীর। আরও বিশদে বললে বিজেপি বনাম বাম-কংগ্রেস। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

বছর ঘুরলেই বিধানসভা ভোট। একুশের বিধানসভা ভোটে বাংলা বিজয়ের লক্ষ্য বিজেপির। আর সেই লক্ষ্য়ে বিজেপির অন্যতম টার্গেট আদিবাসী ভোটব্যাঙ্ক। আদিবাসী ভোট নিজের ঘরে টানার লক্ষ্যে চেষ্টায় কোনও কসুর করছে না বিজেপি। এর শুরুটা অবশ্য হয়ে গিয়েছিল ২০১৯ লোকসভা ভোটের আগে থেকেই। বিভিন্ন আদিবাসী মহল্লায় যাওয়া, সেখানে আদিবাসী বাড়িতে বসে খাওয়াদাওয়া করা, তাঁদের সঙ্গে অমিত শাহ সহ বিজেপি নেতাদের সময় কাটানোর বিভিন্ন ছবি উঠে এসেছে সংবাদমাধ্যমে। এবারও বিধানসভা ভোটের আগে আদিবাসী জনসংযোগে জোর দিচ্ছে বিজেপি। আজই বাঁকুড়ায় এসেছেন অমিত শাহ। আদিবাসী নেতা বিরসা মুন্ডার মূর্তিতে মাল্যদান করেন তিনি। দুপুরে জঙ্গলমহলের এক আদিবাসী বাড়িতেই মধ্যাহ্নভোজ করবেন তিনি।


এভাবে একদিকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যখন বিজেপিকে 'আদিবাসীদের অভিভাবক' হিসেবে তুলে ধরতে চাইছেন, ঠিক তখনই দলিত উত্পীড়ন ইস্যুতে গেরুয়া শিবিরকে কাঠগড়ায় তুলে অধীর চৌধুরীর নেতৃত্বে পাল্টা আন্দোলনে নামছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। দলিত উত্পীড়নকে সামনে রেখে আজ বিধানভবনের সামনে দিনভর টানা ধরনা, অবস্থান বিক্ষোভে সামিল হবেন কংগ্রেস নেতারা। অধীর চৌধুরীর নেতৃত্ব এই আন্দোলন-প্রতিবাদ কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে 'সত্যাগ্রহ'। কংগ্রেস দাবি করেছে, বিজেপির এই 'আদিবাসী প্রেম' সবটাই ভোটের চাল। এর আগে অমিত শাহ এসে যেখানে যেখানে খাওয়াদাওয়া করেছিলেন, আদৌ তিনি তাঁদের খবর রাখেন কিনা, প্রশ্ন তুলেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। আদিবাসীদের উন্নয়নে কংগ্রেস কী কী করেছে, রাজ্য় থেকে কেন্দ্রীয় স্তরে এখন সেসব তুলে ধরছেন হাত শিবির। 


প্রসঙ্গত, গতকাল কংগ্রেসের জোটসঙ্গী সিপিআইএম-এর বর্ষীয়ান সুজন চক্রবর্তীও আদিবাসীর বাড়িতে অমিত শাহের মধ্যাহ্নভোজকে 'রাজনৈতিক স্টান্ট' বলেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, "দলিত-আদিবাসী সম্প্রদায়ের উন্নতির জন্য স্টান্টবাজি করলে চলে না। নাটকের স্ক্রিপ্ট লেখা হয়েছে। তাই দলিতদের বাড়িতে বসে খাওয়াদাওয়া করছেন। কিন্তু এভাবে কী পাশে থাকা হয়? মানুষের কষ্ট, মানুষের কথা ওরা বোঝে না। মানুষের কথা বলে শুধু বাম, কংগ্রেস-ই।" উল্লেখ্য, আজ কংগ্রেসের 'সত্যাগ্রহে' বাম নেতাদেরও দেখা মিলতে পারে। সবমিলিয়ে আদিবাসী ইস্যুতে কেউ কাউকে যে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তেও নারাজ, তা এককথায় স্পষ্ট।


আরও পড়ুন, আদিবাসী পরম্পরায় অমিতের আপ্যায়নে 'স্পেশাল মেনু', জোরকদমে চলছে রান্নাবান্না-সাজগোজ